বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওষুধ শিল্প ভিন্ন উচ্চতায় উঠে যাবে

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২২ ১৯:১৯

দেশে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। এ শিল্পকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কাঁচামাল উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) বা ওষুধ শিল্প পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই পার্কের অগ্রগতি, ওষুধ শিল্পের সমস্যা, সম্ভাবনা ও এলডিসি-উত্তর প্রভাব নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার শাহ আলম খান।

প্রশ্ন: এপিআই (ওষুধ শিল্প) পার্ক উৎপাদনে যাবে কবে?

শফিউজ্জামান: এখন অগ্রগতির শেষ ধাপে আছি আমরা। এখানে ২৭টি শিল্প ইউনিটকে ৪২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার যার প্রয়োজন ও সক্ষমতা অনুযায়ী প্লট দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু শিল্প ইউনিট তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে বড় চারটি ইউনিট তাদের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করে জুনের মধ্যেই পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সিইটিপি নির্মাণের কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। দুটি ইউনিটের একটি জুনের আগেই চালু করা যাবে। আরেকটি চলতি বছর ডিসেম্বরের আগে শেষ করা যাবে, যা ব্যবহার করা হবে চাহিদার ভিত্তিতে।

প্লট বরাদ্দ পাওয়া অন্য শিল্প ইউনিটগুলো চলতি বছরের মধ্যে তাদের এপিআইয়ের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করতে পারবে। পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, আগামী ২০২৩ সালের প্রথম দিকেই আমরা এপিআই (ওষুধ শিল্প) পার্কে পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু করতে পারব।

প্রশ্ন: বেশির ভাগ কোম্পানি এখনও কাজ শুরুই করেনি। এক বছরের মধ্যে তারা কীভাবে উৎপাদনে যাবে?

শফিউজ্জামান: বর্তমানে আমরা ফর্মুলেশন ড্রাগ করি, যা ওষুধের ফিনিশড ফর্মুলেশন। এটা যার যার কারখানায় উৎপাদন হয়। এপিআই পার্কে আমরা ইনগ্রেডিয়েন্ট তৈরি করব। এটাকে বলে র’ ম্যাটেরিয়াল ড্রাগ। এর জন্য বড় বিনিয়োগের দরকার হলেও সময় বেশি লাগে না।

অবকাঠামো নির্মাণেই যে সময়টুকু লাগে। বাকিটুকু আমাদের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর বিষয়। অলরেডি ১০-২০ শতাংশ ওষুধের এপিআই আমরা স্থানীয়ভাবেই করছি। আমাদের অনেক টেকনোলজি আছে। বাংলাদেশে অনেক বিশেষজ্ঞ কেমিস্ট-বায়োকেমিস্ট আছেন। এখন আমাদের স্থাপনা নির্মাণ হলেই এপিআই পার্কে উৎপাদন শুরু করতে পারব।

প্রশ্ন: প্লট বরাদ্দ পেয়েও কেন কোম্পানিগুলো এপিআইতে যায়নি?

শফিউজ্জামান: এটা ঠিক, প্লট বরাদ্দ পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও এপিআই পার্কে যায়নি। তার মানে এই নয় যে তারা এপিআই করছে না। ১০-২০ শতাংশ ওষুধের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। যার যার কারখানায় আলাদাভাবে বানানো হচ্ছে। ওই সব প্রতিষ্ঠান গজারিয়ার এপিআই পার্কেও আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এপিআই পার্কে দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম একটা কারণ হলো সরকার এপিআই পার্কে জমির যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, তা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি।

আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বিসিক ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। দাম কমাতে বলেছি। এ ছাড়া সার্ভিস চার্জ ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছি। বিষয়টি এখন বিবেচনাধীন।

প্রশ্ন: কোম্পানিগুলোকে ওষুধ শিল্প পার্কে নিতে সমিতি কী ভূমিকা রাখছে?

শফিউজ্জামান: আপনারা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরাতে কত বছর লেগেছে। আবার সেখানে উদ্যোক্তারা যাওয়ার পরও দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সেখানকার কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি। আবার যা হয়েছে, তা দিয়ে পরিবেশের শতভাগ সুরক্ষা দেয়া যাচ্ছে না।

এপিআই পার্ক স্থাপনের দাবিটি ওষুধ শিল্প সমিতিই তুলেছিল। এপিআই পার্কে সিইটিপি নির্মাণে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা পর্যালোচনা করেছি। এরপর একটি ভালো মানের কোম্পানিকে নিয়োগ দিয়েছি, যার নাম রামকি এনভায়রো সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি টাইমবাউন্ডে থেকেই সিইটিপি নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে (৯৮%) নিয়ে এসেছে। সিইটিপি নির্মাণে ১২০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এই টাকা সমিতির পক্ষ থেকে জোগান দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: কাঁচামাল উৎপাদনে কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি?

শফিউজ্জামান: হ্যাঁ, এ ধরনের একটি নির্দেশনা সমিতির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। চাইলেই উদ্যোক্তারা যার যার খেয়াল-খুশিমতো কাঁচামাল তৈরি করতে পারবে না। কে কী উৎপাদন করবে, তা জানাতে হবে।

একটা কোম্পানি যে কাঁচামাল তৈরি করবে, সেটা যেন আরেকজন তৈরি না করে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। একই কাঁচামাল একাধিক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করতে গিয়ে নিজেরাই যদি ঝগড়া করি, তাহলে তো আমাদের ক্ষতি হবে। দেশেরও ক্ষতি হবে।

প্রশ্ন: স্বাধীনতার ৫০ বছরে ওষুধ শিল্পের অর্জন সম্পর্কে বলুন।

শফিউজ্জামান: স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। তবে আমরা মনে করি, উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ওষুধ শিল্পের অভাবনীয় বিকাশ। একটা সময় আমাদের কিছুই ছিল না। পাটের বিনিময়ে ওষুধ আনতে হতো। এখন ১৭ কোটি মানুষের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশে উৎপাদতি হচ্ছে। আমরা শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই সাশ্রয় করছি না। পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বিশ্বের ১৫৩টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছি।

প্রশ্ন: ওষুধ শিল্প বিকাশের নেপথ্যে কী কী পদক্ষেপ কাজ করেছে?

শফিউজ্জামান: তিনটি পদক্ষেপ ওষুধ শিল্পের সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এর একটি হলো ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধ নীতি। অন্যটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কপিরাইট আইন বা মেধাস্বত্ব ছাড়ের সুযোগ এবং শেষটি সরকারের নীতিসহায়তা।

প্রশ্ন: স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর দেশের ওষুধ শিল্পে কোনো প্রভাব পড়বে কি?

শফিউজ্জামান: কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না। কারণ যখন আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন করব, তার পরও ২০৩২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডব্লিউটিওর এই পেটেন্ট ছাড়ের সুবিধা ভোগ করতে পারব। ওই সময় পর্যন্ত সুবিধা অব্যাহত রাখা গেলে দেশের ওষুধ শিল্পকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব। তখন আর সমস্যা হবে না।

তা ছাড়া আমাদের প্রযুক্তি আছে। আমরা সবকিছু বানাতে পারি। এখন শেয়ারমার্কেটও জমজমাট। টাকা-পয়সা মানুষের আছে। সবার আয় বেড়েছে। যার কারণে অনেকেই ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমরা ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছি। চালু হচ্ছে এপিআই পার্ক। এখানে শুধু কাঁচামাল উৎপাদন হবে।

প্রশ্ন: এপিআই পার্ক চালু হলে ওষুধ শিল্পের সুবিধা কী হবে?

শফিউজ্জামান: দেশে ওষুধের কাঁচামালের উৎপাদন বাড়বে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাঁচামালের কাঁচামালও দেশে উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে। এতে কাঁচামালের আমদানি খরচ বাঁচবে। আবার দেশে নিজস্ব পেটেন্টেড ওষুধের উৎপাদন ও গবেষণা বাড়বে। দেশের দক্ষ জনবল বা কেমিস্ট ও বায়োকেমিস্টরা দেশের ওষুধ শিল্পেই কাজে আগ্রহী হবে। ওষুধের গুণগত মানের বিশ্ব স্বীকৃতি আসবে। বিশ্ববাজারে আমাদের ওষুধের রপ্তানি বাজার আরও বড় হবে।

প্রশ্ন: ভোক্তা পর্যায়ে ওষুধের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

শফিউজ্জামান: ওষুধের দাম আমরা ইচ্ছা করলেই বাড়াতে পারি না। অনুমোদন নিতে হয়। আবেদনসাপেক্ষে ঔষধ প্রশাসন পরিদপ্তর যাচাই-বাছাই করে। এ ক্ষেত্রে তারাও আইন-কানুন ও নীতিমালা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত দেয়। ওষুধের দাম বাড়লে মানুষ বেকায়দায় পড়ে। এটা যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সতর্ক রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর