বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ৭৫ ভাগ

  •    
  • ২৩ আগস্ট, ২০২১ ১৯:৩৯

নাজুক প্যাকেজগুলোর সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পের দুস্থ শ্রমিক, রপ্তানিমুখী শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষিজীবী এবং করোনা প্রতিরোধে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীরা।  

করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার।

এর মধ্যে পাঁচটি প্যাকেজের অগ্রগতি সন্তোষজনক হলেও অপর পাঁচটির অবস্থা নাজুক। তবে এই ১০টি বাদে অন্য ১৩ প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার মাঝামাঝি অবস্থায়।

২৩ প্যাকেজে জড়িত মোট অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

এর মধ্যে সামগ্রিকভাবে মোট বরাদ্দের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে ৯৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৩০ জুনের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি।

প্রতিবেদনের একটি কপি গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, নাজুক প্যাকেজগুলোর সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পের দুস্থ শ্রমিক, রপ্তানিমুখী শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষিজীবী এবং করোনা প্রতিরোধে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীরা।

অপরদিকে, শতভাগ বাস্তবায়নকারী প্যাকেজগুলোর উপকারভোগীরা হলো: রপ্তানিমুখী শিল্প শ্রমিক, রপ্তানিমুখী শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, করোনায় চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গত বছরের এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে প্যাকেজগুলো ঘোষণা করে সরকার।

এর মধ্যে বেশিরভাগ প্যাকেজ মূলত ব্যাংকঋণ নির্ভর। এতে অর্থের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। অবশিষ্ট প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ও বিভাগের।

বাস্তবায়নের দিক থেকে নাজুক পাঁচটি প্যাকেজে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত জুন পর্যন্ত এসব তহবিল থেকে খরচ হয়েছে মাত্র ৮০৪ কোটি টাকা, যা শতকরা হারে গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।

অর্থাৎ এক বছরের বেশি সময় ধরে উল্লিখিত প্যাকেজগুলোর আওতায় বরাদ্দের সিংহভাগ টাকাই খরচ হয়নি।

তবে অন্য পাঁচ প্যাকেজ বাস্তবায়নের চিত্র ভিন্ন। এগুলোর বাস্তবায়নের হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগ ছাড়িয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

নাজুক পাঁচ প্যাকেজের বাস্তবায়ন চিত্র

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাস্তবায়নের দিকে থেকে যে পাঁচটি প্যাকেজের অবস্থা নাজুক, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পকে সহায়তা দিতে প্রাকজাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি।

এ কর্মসূচির আওতায় ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত এপ্রিল থেকে চলতি অর্থবছরে পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ২৯১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার মাত্র ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

পোশাক মালিকরা বলছেন, টাকা ছাড়ে নানা শর্ত ও জটিলতার কারণে এ তহবিলের টাকা নিতে অনেকে উৎসাহী নন। যে সময় টাকা দেয়া হয়, তাতে রপ্তানিকারকদের খুব বেশি লাভ হয় না।

যোগাযোগ করা হলে বিকেএমইএ-এর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই প্যাকেজ থেকে অর্থ ব্যয় না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নানা ধরনের শর্ত দেয়া আছে। যখন টাকা প্রয়োজন, তখন দেয়া হয় না। এ কারণে রপ্তানিকারকরা খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক উর্ধ্বতন পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাকালে ব্যাংকগুলোর ঋণ কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়ে। পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচির জন্য যে ধরনের নীতিমালা কিংবা রেগুলেশন তৈরি করা দরকার, সেভাবে করতে পারেনি। এ দুর্বলতার কারণে পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি থেকে টাকা ছাড় করা সম্ভব হয়নি।’

এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে ২ হাজার কোটি টাকার ‘এসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’ প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। জুন পর্যন্ত এ প্যাকেজ থেকে খরচ হয়েছে মাত্র ২৯ কোটি টাকা। পড়ে আছে ১ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার প্রায় দেড় শতাংশ।

‘কৃষিকাজ যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক প্যাকেজে বরাদ্দ ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত এ থেকে খরচ হয়েছে ৪০৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।

করোনা ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা এবং জীবনবিমা খাতে বরাদ্দ আছে ৭৫০ কোটি টাকা। এ থেকে জুন পর্যন্ত খরচ হয় ৭০ কোটি টাকা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থায়নে পোশাক ও চামড়া খাতে চাকরি হারানো শ্রমিকদের ৩ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছিল। সেখান থেকে জুন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৫ জন শ্রমিকের জন্য মাত্র ৬ কোটি টাকা খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা ব্যয় হয়নি।

অর্থমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, যে সব প্যাকেজের অগ্রগতি তেমন ভালো নয়, সেগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন যাতে দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে নতুন করে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।

শতভাগ বাস্তবায়িত প্যাকেজগুলোর চিত্র

রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে সরকার। পোশাক খাতের সুরক্ষায় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে গঠিত এ তহবিলের আকার ছিল প্রথমে ৫ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে দুই ধাপে বাড়িয়ে মোট ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। নির্ধারতি সময়ের আগেই এই তহবিলের পুরোটা শেষ হয়ে যায়।

প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় রপ্তানিমুখী শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দিতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সুবিধা ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। ফলে অতিরিক্ত যোগ হয় ১৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

পরে অর্থ আরও বাড়িয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্যাকেজের আকার করা হয় ১৭ হাজার কোটি টাকা। ৩০ জুন পর্যন্ত পুরো অর্থই খরচ হয়।

চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানী বাবদ ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয় গত বছর। জুন পর্যন্ত খরচ হয় ১১০ কোটি টাকা।

১০ টাকা কেজি দরে চাল দিতে প্রথমবার ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। পরে এটি বাড়িয়ে করা হয় ৭৭০ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত পুরো টাকাই ব্যয় হয়।

গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণ প্যাকেজে বরাদ্দ রাখা হয় ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত এ প্যাকেজের আওতায় খরচ হয় ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ।

এ বিভাগের আরো খবর