বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সব স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আনতে চায় বিজিএমইএ

  •    
  • ১৬ আগস্ট, ২০২১ ১৯:৩৩

বর্তমানে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়ে সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এই বন্দর দিয়ে এ সব পণ্য আনতে সময় বেশি লাগে। এতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।

চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের কাছে দ্রুত পোশাক পৌঁছে দিতে সব স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতাসহ অন্য কাঁচামাল আনতে চান তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সিকে চিঠি দিয়েছেন রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

বর্তমানে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়ে সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এই বন্দর দিয়ে এ সব পণ্য আনতে সময় বেশি লাগে। এতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। সময়মতো ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছানো যাচ্ছে না।

রোববার রাতে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় প্রচুর অর্ডার আসছে। ডিসেম্বরে বড়দিনকে সামনে রেখে আরও অর্ডার আসবে বলে আশা করছি। এ অবস্থায় আমাদের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সময়মতো ক্রেতাদের কাছে পোশাক পৌঁছানো। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আনতে সময় বেশি লাগছে।

‘সে কারণেই আমরা বেনাপোল বন্দরের পাশপাশি অন্যান্য স্থলবন্দর বিশেষ করে ভোমরা ও সোনামসজিরের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় সুতা, তুলা, কাপড় ও পোশাকখাতের অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি করতে চাই। আর এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছি।’

তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে রোববার জাতীয় শোক দিবসের ছুটির দিনেও বাণিজ্যমন্ত্রীর মেইলে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে ফারুক হাসান লিখেছেন, ‘বিশ্ববাজারে তুলার পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দামের পার্থক্যের ফলে পোশাক শিল্প তার সক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে না। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রেইট ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বিগত দুই বছরে প্রধান রপ্তানি গন্তব্যগুলোতে (আমেরিকা এবং ইউরোপ) পরিবহন খরচ প্রায় ১০০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া মজুরি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ব্যাংক চার্জ, ফ্রেইট চার্জ বৃদ্ধি ও অন্যান্য কারণে গত আট বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘অন্যদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পূর্ব থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। গত অর্থবছরে আমাদের পোশাকের দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। আর করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট প্রায় ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্রয়াদেশ বাতিলের ধাক্কা কাটতে না কাটতেই কারখানাগুলো ডিসকাউন্ট ও ডেফার্ড পেমেন্টের চাপে পড়ে।

‘অনেক ক্রেতা ও ব্রান্ড ক্রয়াদেশের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করেনি, দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেকে তাদের জাহাজিকৃত পণ্য অথবা স্টকের মূল্য পায়নি, কিন্তু বাধ্য হয়ে কাঁচামাল বাবদ খোলা ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় মেটাতে ফোর্সড লোনের শিকার হয়েছে। এ রকম একটি চতুর্মুখী চাপে শিল্পটি টিকে থাকার সংগ্রামে হিমশিম খাচ্ছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সুতার চাহিদার মধ্যে যেটুকু আমদানি করা হয়, তার প্রায় পুরোটাই বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অন্য স্থলবন্দরের মাধ্যমে তুলা, সুতা, কাপড় ও বন্ড সুবিধার আওতায় বস্ত্র ও পোশাকখাতের অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থাকার ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা লিড টাইমের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছে না।

বিশেষ করে শুধু বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় এসব কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন রয়েছে; তবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আনলে পার্শিয়াল শিপমেন্টের অনুমোদন থাকলেও বেনাপোল বন্দরের ক্ষেত্রে এই সুবিধা নেই। এতে বেনাপোল বন্দরে প্রায়ই আমদানি-রপ্তানিতে কনজেশন থাকে ও বিলম্বের ফলে শিল্প আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ পরিস্থিতিতে চিঠিতে যে তিনটি বিষয় বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে, সেগুলো হলো, বেনাপোল বন্দরের পাশাপাশি অন্যান্য স্থলবন্দর, বিশেষ করে ভোমরা ও সোনামসজিদের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় তুলা, সুতা, কাপড় এবং বস্ত্র ও পোশাকখাতের অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা; বেনাপোল স্থলবন্দর এবং অপরাপর সকল অনুমোদিত স্থলবন্দর দিয়ে বস্ত্র ও পোশাকখাতের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আংশিক শিপমেন্টের অনুমোদন প্রদান করা এবং বেনাপোল স্থলবন্দর এবং অন্য সব স্থলবন্দরের পণ্য সংরক্ষণ ওয়্যারহাউজিং সক্ষমতা এবং প্রয়োজনীয় লোকবল বৃদ্ধি করতে করা, যাতে আমদানি-রপ্তানিতে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির কারণে অবকাঠামো ও লোকবলের অভাবে যেন বন্দরে কোনো পণ্য পরিবহন জট বা জটিলতা তৈরি না হয়।

চিঠিতে বলা হয়, এই তিনটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে একটি স্থলবন্দরের চাপ কমবে, পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে গতি আসবে এবং সময় ও খরচ (ব্যয়) সাশ্রয় হবে।

ভারত থেকে আমদানি করা রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল দ্রুত পেতে গত ৫ আগস্ট ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি চিঠি দেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

ওই চিঠিতে তিনি লেখেন ‘বাংলাদেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারত থেকে আমদানি করে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে কাঁচামাল আনতে সময় বেশি লাগছে। বেনাপোলে আমাদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টদের কাছে শুনতে পাচ্ছি, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যু ও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে ভারতের বনগাঁ কাস্টমস পয়েন্টে আমদানি করা কাঁচামাল ছাড় করতে বেশি সময় লাগছে। সে কারণে পোশাকশিল্পের কাঁচামালবাহী প্রচুর পরিমাণ ট্রাক আটকে আছে। তাতে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’

হাইকমিশনারকে ভারতীয় অংশের কাস্টমসে পোশাকশিল্পের কাঁচামাল দ্রুত ছাড় করানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আমদানি-রপ্তানি মসৃণ করা গেলে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততর সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে হাইকমিশনারকে বিশেষ অনুরোধ করেন ফারুক হাসান।

এ বিভাগের আরো খবর