বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় স্বাভাবিক হয়েছে রাজধানীর জনজীবন। পুরোদমে খুলেছে শিল্প-কারখানা অফিস-আদালত। এতে রাজধানীতে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে, চাহিদার চাপ পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে। তাই শাটডাউন পরবর্তী বাজারে বেড়েছে ডিম-মুরগির দাম।
রাজধানী কলমিলতা ও তেজগাঁও, কারওয়ান বাজারে শুক্রবার খুচরায় কেজিতে ১০ টাকা বাড়তি ছিল মুরগির দাম। ডিমের হালিতে বেড়েছে ২ টাকা। নতুন করে না বাড়লেও গত সপ্তাহের মতোই চড়া রয়েছে চালের বাজার। সয়াবিন তেলের দামও আগের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা লিটার।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ১২৫-১৩০ টাকা। সোনালি বা কক মুরগি প্রতি কেজি ২৩৫-২৪০ টাকা কেজি, যা মাস খানেক ধরেই ২২০ টাকার নিচেই ছিল। গত সপ্তাহেও দাম ছিল কম।
প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৫-৩৬ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩৩-৩৪ টাকা। আগে ডজন ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১০৬ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, শাটডাউনের আগে ঢাকা ছাড়া মানুষরা দীর্ঘদিন ঢাকার বাইরে ছিল। এতে প্রায় দেড় মাস ধরে রাজধানীর বাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। তারওপর ঈদের সময় এনমিতেই মুরগির চাহিদা কম থাকে। দুই মিলিয়ে মুরগির দাম বেশ খানিকটা কমেছিল।
কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতার সাজু বলেন, ‘ঢাকায় তো মানুষই ছিল কম। দামও পইড়া গেছিল। মাসের শুরুতে গার্মেন্টের শ্রমিকগো লগে অন্য মানুষও আইছিল। তখন একটু বেচা বাড়ছিল। এখন সব খুইল্ল্যা গ্যাছে, বাড়ি থেইকা আইয়্যা পড়ছে।
‘দাম যা কমছিল তা বাইড়া আগের অবস্থায় আসছে। মানুষ বাড়ায় চাহিদাও একটু বাড়তাছে, দাম একটুতো বাড়বোই। পাইকারিতেও দাম একটু বাড়ছে।’
বিক্রেতা বলেন, ‘কাস্টমার না থাকায় কাওয়ান বাজারের অনেক হোটেলও বন্ধ ছিল। ছোট হোটেলগুলায় ব্রয়লার এবং মাঝারি কক মুরগির মাংস বিক্রি হয়। এখন হোটেলও খুলছে মুরগির টানও বাড়ছে।’
অন্য মাংসের মধ্যে গরু ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় চালের দাম। সেটা এ সপ্তাহেও একইরকম আছে। ভালো মানের সরু চাল ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৭০ টাকায়। মাঝারি মানের মিনিকেট-নাজিরশাইল ৬২-৬৫ টাকা, পাইজাম বা লতা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। মোটা চাল স্বর্ণা ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়।
চড়া রয়েছে তেলের বাজারও। কোম্পানি ভেদে সয়াবিনের প্রতি লিটারের বোতল ১৪০-১৫০ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৬৫০-৭০০ টাকা, খোলা সয়াবিনের লিটার ১২৫-১৩০ টাকা, খোলা পামওয়েল ১১০-১১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে অস্থির রয়েছে কাঁচামরিচের দাম। প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়।
তবে সবজির দাম আগের সপ্তাহের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে। গাজরের কেজি ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি ঢেড়স ৩০-৪০ টাকা, পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, পটোল ৩৫-৪০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাত ভেদে সব ধরনের বেগুন কেজি ৪০-৫০ টাকার মধ্যেই রয়েছে। অন্য সবজির মধ্যে ঝিঙা ৪০-৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০-৪০ টাকা, বররবটি ৫৫-৬৫ টাকা, আলু ২২-২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মুদি দোকানি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মুদি আইটেমে তেমন বাড়তি কমতি নাই। সব আগের মতেই রইছে। আদার দাম যা একটু কমছে, ১০ টাকার মতো। দেশি আদা বেচতাছি ১৩০-১৪০ আর আমদানিরটা ১১০ ১২০ টাকা।
‘দেশি রসুন ৭০-৮০ টাকা, আমদানি রসুন ১৩০ টাকা। পেয়াজের মধ্যে দেশিটার দাম ৫০ টাকা, আমদানিরটা একটু কম আছে, ৪০-৪২ টাকা। মোটা মসুরের ডাল ৭৫-৮০ টাকা, চিকন নিলে ৯০-৯৫ টাকা, ভালোটা নিতে দাম একটু বেশি লাগব, ১১০-১১৫ টাকা।’
এ ছাড়া বাজারে প্রতিকেজি প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকা, খোলা চিনি ৬৮-৭০ টাকা, প্যকেট লবণ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, খোলা আটা ৩০-৩২ টাকা, প্যাকেট আটা ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।