করোনায় বিদেশফেরত শ্রমিক ও গ্রামের মানুষের জীবিকার উন্নয়নে নতুন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে ৭ লাখ গ্রামীণ নারী-পুরুষকে টেকসই দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রমের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মূলধন সহায়তাও দেয়া হবে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সমিতি গঠনের মাধ্যমে তারা নিজেদের জীবনমানের পাশাপাশি সমিতির অপর সদস্যদেরও জীবিকা উন্নয়নেও কাজ করবে।
এর আগে দুই দফায় একই ধরনের কার্যক্রমের পর এবার তৃতীয় পর্যায়ে এমন পদক্ষেপ দেয়া হয়েছে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উদ্যোগে ‘পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায়’ নামের এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯২৮.৮৮ কোটি টাকা, যার পুরোটাই সরকারি কোষাগার (জিওবি) থেকে মেটানো হবে।
প্রকল্পটি মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শেরে বাংলানগরের এসইসি সম্মেলনে কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক প্রধান শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, একনেক সভায় মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্পটি রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের দুস্থ দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে গ্রামীণ মহিলারা প্রশিক্ষণ পাবেন। এতে হাস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পালনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি হবে।
এ প্রকল্পটি দেশের ৮টি বিভাগের ৪৮টি জেলার ২২০টি উপজেলায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটির কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থ বছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠিকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ প্রদান ও মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কৃষি ও অকৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের এ প্রকল্পের আওতায় ২২০টি উপজেলায় বিদ্যমান ২৩ হাজার ৩৩১টি পল্লী উন্নয়ন দল গঠন করা হবে। এসব দল বা সমিতিতে ৭ লাখ সদস্য থাকবে, যার ৮০ শতাংশ হবে নারী। সমিতির সদস্যদের সঞ্চয়ে অভ্যস্ত করে তোলা হবে। আগের প্রকল্পের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিদ্যমান ৬,১ কোটি ১৩ লাখ টাকাসহ ২৫৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা পুঁজি গঠন করা হবে। ২ লাখ ৬৪ হাজার নারীসহ ৩ লাখ ৩০ হাজার জন সুফলভোগীদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে সচেতন করে তোলা হবে। সাত লাখ মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কোভিড-১৯ এর কারণে বিদেশ ফেরৎ কর্মহীন শ্রমিকদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণোত্তর ক্ষুদ্র ও উদ্যোক্তা ঋণ বিতরণ করা হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণের মাধ্যমে ৭৫ হাজার ৯০০ জন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে টেকসই ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে সুফলভোগীদের উৎপাদিত কৃষি ও অ-কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণের বিপণন সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করা। উপকারভোগীদের যথাযথ উদ্ভুদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক পরিবেশবান্ধব ঔষধি, ফলজ ও বনজ বৃক্ষরোপণ করা হবে।
এর আগে পল্লী এলাকার দরিদ্র মানুষদের যথাযথ জীবিকায়নের মাধ্যমে সুষম পল্লী উন্নয়নের জন্য কৃষি ও অকৃষি ক্ষেত্রে টেকসই কর্মসংস্থানের সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য দেশের ৫টি বিভাগের ২৩টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ১৯৯৮ সালের জুলাই হতে ২০০৭ সালের জুন মেয়াদে পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প প্রথম পর্যায় সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়।
পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত সমাপ্ত প্রকল্পের আদলে নিজস্ব আয় দ্বারা কর্মসূচি হিসাবে বাস্তবায়িত হয়।
এরপর পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায় ২০১২ সালের জুলাই হতে ২০১৮ সালের জুনে ১৯০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়।
বর্তমানে প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই হতে বিআরডিবির মাধ্যমে কর্মসূচি আকারে চলমান রয়েছে।