রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল নেটওয়ার্ক টেলিটক ‘জীবন সংকটে’ আছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সারা দেশে টেলিটকের দুর্বল নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে সোয়া ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার একনেক সভায় ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫-জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন’ নামের এ প্রকল্প অনুমোদন পায়।
সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একনেক সভা শেষে প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘টেলিটক আমাদের নিজস্ব মোবাইল ফোন কোম্পানি। টেলিটকের শক্তি বৃদ্ধির জন্য আমরা ইনজেকশন দিচ্ছি। লাইফ সাপোর্ট দিচ্ছি। আমরা বিশাল বিনিয়োগ করব, যাতে করে এটা শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে এখন টু-জি থ্রি-জি আছে, তা কীভাবে ফোর-জি করা যায় তা ভাবা হচ্ছে। আমরা শিগগিরই ফাইভ-জিতে যাওয়ার আশা করছি। এ জন্য আমাদের অবকাঠামোকে রেডি রাখতে হবে। আমরা টেলিটকের অবকাঠামো স্ট্রেনদেন করছি।’
লোকসানে থাকার পরও টেলিটকে কেন নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে, টেলিটকে লোকসান হচ্ছে তারপরও টাকা দেয়া হচ্ছে কেন? কল্যাণমুখী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার স্টেটের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের নীতি প্রণীত হয়।
‘ব্যক্তিখাতকে আমরা সহায়তা করব, সুযোগও দেব কিন্তু সরকার একদম সবকিছু ছেড়ে দেবে না। সরকারও যেন প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, দর-কষাকষি করতে পারে, এ জন্য সরকারকে তৎপর থাকতে হবে। যেমন বিআরটিসি, এটা তো লস কিন্তু মানুষের কথা চিন্তা করে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়। সব সময় লস মুখ্য থাকে না। লসটা করতে হয় সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের কথা চিন্তা করে।’
টেলিটকের নতুন প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টেলিটকে এবার যে প্রজেক্টটা আসছে, এটা প্রথমে অনেক বেশি টাকা নিয়ে আসছিল। পরে এটা রিভাইজড হয়ে যখন এলো অনেক যুক্তিগতভাবে আসছে। থার্ড পার্টি দিয়ে এটাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
‘এমন অনেক এলাকা বাংলাদেশে আছে, যেখানে বেসরকারি কোম্পানি যায় না। যেমন হিলট্র্যাক আছে, চরাঞ্চল আছে, যেখানে টেলিটকই যায়। এটা প্রধানমন্ত্রী অবহিত আছেন। টেলিটকে লোকসানের কারণ হলো, টেলিটকের চেয়ে বাকি সব কয়টার কথা বলায় রেটটা কিন্তু ডাবল।’
এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘কারো মনে হতে পারে, এ প্রকল্প শেষে আমরা ফাইভ-জি পেয়ে যাব, আসলে তা কিন্তু নয়। এর মাধ্যমে আমাদের বিদ্যমান টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি উন্নয়নে কিছু কাজ করা হবে। সামনে যেহেতু ফাইভ-জিতে যাওয়ার টার্গেট আছে, ফাইভ-জির প্রস্তুতি হিসেবে আমরা কিছু ইকুইপমেন্ট বসাব।’
হাজার কোটি টাকা কমেছে ব্যয়
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, টেলিটকের প্রকল্পটি কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ৩ হাজার ২৭৯ কোটি টাকায় প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি একনেক প্রকল্পটি উত্থাপন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির আওতায় নতুন করে দেড় হাজার টাওয়ার (বিটিএস) স্থাপন এবং আরও দেড় হাজার টাওয়ার শেয়ারিংয়ের প্রস্তাব করে টেলিটক।
ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় পক্ষ দিয়ে বিস্তারিতভাবে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশনা দেন। সেই সঙ্গে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য নতুন টাওয়ার না বসিয়ে টাওয়ার শেয়ারিংয়ের কথা বলেন।
এরপর তৃতীয় পক্ষ একটি কোম্পানিকে দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ফলে প্রকল্পটির ব্যয় এক লাফে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা কমে ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকায় নেমে আসে।
টেলিটকের লোকসান
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৭ বছরে মাত্র দুই বছর লাভের মুখ দেখলেও ১৫ বছরই লোকসান গুনেছে টেলিটক। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনেছে। আর গত চার বছরেই টেলিটক লোকসান করেছে ৯৯৩ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১ কোটি ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৬ কোটি টাকা মুনাফা করে প্রতিষ্ঠানটি।