অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) পরিশোধে নতুন নীতিমালা তৈরি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ নীতিমালা অনুযায়ী, যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাসিক লেনদেন ১ কোটি টাকার বেশি, তাদের অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভ্যাট রিটার্ন ও জমা দিতে হবে অনলাইনে।
এ বিষয়ে সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক আদেশ জারি করেছে এবং তা কার্যকর করতে মাঠ পর্যায়ে দেশের সকল ভ্যাট অফিস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে সারা দেশে এনবিআরের অধীনে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট অফিসসহ ৩ শতাধিক সার্কেল অফিস রয়েছে, যারা সরাসরি ভ্যাট আহরণের সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনলাইনেই ভ্যাট পরিশোধের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর এবং তা কার্যকর করতে সকল ভ্যাট অফিস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কারা এর আওতায় আসবে, জানতে চাওয়া হলে ওই কর্মকর্তা জানান, প্রতি মাসে কমপক্ষে ১ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট দেয়, এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনের আওতায় ভ্যাট দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান অটোমেটেড চালানের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধ করবে। এর বাইরে যাদের লেনদেন এক কোটি টাকার নিচে, প্রচলিত প্রথায় তারা ভ্যাট দিতে পারবে। আগামী জানুয়ারি মাস এ নিয়ম কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, মাসে ১ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট দেয়, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এই সংখ্যা সাড়ে তিনশ থেকে চারশ হবে। মূলত, সেবা ও উৎপদনের খাতের বড় করোপোরেট হাউসগুলো মাসে ১ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট দেয়।
মাঠ পর্যায়ের এক ভ্যাট কমিশনার জানান, যারা বড় অঙ্কের ভ্যাট দেয়, তাদের সবারই অনলাইনে হিসাব-নিকাশ করার ব্যবস্থা বেশ আধুনিক এবং যথেষ্ট লোকবলও আছে। তাদের যাতে ভ্যাট অফিসে এসে ভ্যাটের রিটার্ন দিতে না হয়, সে জন্য অনলাইনে রিটার্ন ও ভ্যাট পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওতায় অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ আছে। কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয়। অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দিতে হলে ইলেকট্রনিক ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর বা স্বয়ংক্রিয় বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (ই-বিআইএন) থাকতে হয়, যেটি ৯ ডিজিটের।
গত বছরের জুলাই থেকে অনলাইনে ভ্যাট দেয়ার ব্যবস্থা চালু আছে। বর্তমানে বিকাশ-রকেটের মতো মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট দেয়া যায়। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকসহ ১১টি বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহক অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দিতে পারেন।
তবে বড় অঙ্কের তথা ১ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ভ্যাট বিভাগ।
আগামী জানুয়ারি থেকে যেহেতু এক কোটি টাকার বেশি ভ্যাট অনলাইনে পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক হচ্ছে, তাই ওই ১১টি ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি পেমেন্ট সিস্টেম যুক্ত করা হচ্ছে।
বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন দেয় অর্ধেকের কাছাকাছি।