বাংলাদেশে তৈরি পোশাক সম্পর্কে ‘অসম্মানজনক ও অবমাননাকর’ সংলাপ সরানোর আগ পর্যন্ত দি লাস্ট মার্সেনারি সিনেমাটির সম্প্রচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট নেটফ্লিক্সকে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
রোববার নেটফ্লিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) থিওডোর অ্যান্থনি সারান্দোসকে পাঠানো এ দাবি জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
চিঠিতে ফারুক হাসান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের অবমাননা করা সংলাপটি দৃশ্য থেকে সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। যতক্ষণ না সংলাপ বা দৃশ্যটি সিনেমা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত নেটফ্লিক্সে ‘লাস্ট মার্সেনারি’ সিনেমাটির সম্প্রচার বন্ধ করুন। এ বিষয়ে আপনার আন্তরিক সমর্থন এবং সহযোগিতা কামনা করছি।’
৩০ জুলাই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ভ্যান ড্যাম অভিনীত সিনেমা দি লাস্ট মার্সেনারি। সিনেমাটি এখন ওই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয়তার তালিকায় সেরা দশে রয়েছে। দর্শকপ্রিয় হওয়া সিনেমাটির একটি সংলাপে বাংলাদেশি পণ্যবিরোধী প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে।
অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ডেভিড শ্যারন পরিচালিত ফ্রেঞ্চ ভাষার এই সিনেমায় বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যকে নিম্নমানের বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সিনেমাটির ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিটে শুরু হওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, একজন অভিনয়শিল্পী বলছেন, ‘হ্যাঁ, এটা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট (Ah, yes. Bulletproof tuxedo)’।
উত্তরে আরেকজন বলেন, ‘এটা মেড ইন ফ্রান্স। তবে এটি বাংলাদেশ থেকে আসলে আমি শেষ হয়ে যেতাম (Made in France. If it was from Bangladesh, I,d be gone.)।
এই সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতেই নেটফ্লিক্সের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি লিখেছেন ফারুক হাসান।
তিনি লিখেছেন, ‘এই সংলাপ বাংলাদেশের ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিকের কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, গুণমান এবং সময়মতো উৎপাদনের প্রতিশ্রুতিকে অবমূল্যায়ন করার মতো, যারা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৬০টি দেশে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পোশাক সরবরাহ করছে।’
চিঠিতে ফারুক হাসান লিখেছেন, ‘আমরা মনে করি, এই অসম্মানজনক মন্তব্যগুলো শুধু বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের যৌথ প্রচেষ্টাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশ্বের লাখ লাখ ভোক্তার আবেগকেও অসম্মান করেছে।
‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। বিশ্বের সেরা সেরা ব্র্যান্ড বাংলাদেশের পোশাকের প্রশংসা করে। কোথাও থেকে কখনও কোনো অভিযোগ ওঠেনি। শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক সরবরাহ করতে সব ধরনের ত্যাগই করে বাংলাদেশের শিল্পমালিক ও শ্রমিকরা। তারা যা তৈরি করে সেটি গর্ব করার মতো। এই পরিশ্রম এবং গর্বকে সবার সম্মান করা উচিত।’
বিজিএমইএর সভাপতি নেটফ্লিক্সের সিইওর পাশাপাশি এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে চলচ্চিত্রটির পরিচালক ডেভিড শ্যারন, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রসচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও চিঠি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংলাপটিতে বাংলাদেশকে, আমাদের পোশাকশিল্প মালিকদের এবং পোশাকশ্রমিকদের অসম্মান করা হয়েছে। আমরা বিষয়টিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। সিনেমা থেকে আপত্তিকর সংলাপটি বাদ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের ব্যবস্থা নেব আমরা।’
নেটফ্লিক্স এখন পর্যন্ত চিঠির কোনো জবাব দেয়নি বলেও জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সংলাপের প্রতিবাদ জানান কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুহম্মদ খান। পরে দেশে-বিদেশে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই সংলাপের প্রতিবাদ জানান।