বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে প্রশাসনের বাধা

  •    
  • ৭ আগস্ট, ২০২১ ১৯:১০

করোনায় চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বলে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলছে স্থানীয় প্রশাসন। অথচ মহামারির সময় ঋণ পেলে প্রান্তিক জনগণ টিকে থাকতে পারবে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য এটি দরকার। 

মহামারির মধ্যে দুর্বল অবস্থায় গ্রামীণ অর্থনীতি। ভেঙ্গে পড়েছে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের উৎপাদন। তাই প্রান্তিক পর্যায়ে অর্থের প্রবাহ নিশ্চিত করতে সীমিত আকারে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু রেখেছে সরকার। কিন্তু সেই কাজে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শুধু ঋণ উত্তোলনই নয়, ঋণ দেয়াটাও এখন জরুরি। এ ছাড়া সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমেও বাধা দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে অর্থের প্রবাহ বাড়ানো কঠিন হচ্ছে।

ক্ষুদ্রঋণ বিশ্লেষক এবং ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফাইন্যান্সের (আইএনএম) সাবেক নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক বাকি খলীলী বলেন, ‘ঋণ আদায় কর্মকাণ্ড সীমিত রাখা উচিত। তবে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা না থাকাই ভালো। কারণ, মহামারির এ সময়ে ঋণ পেলে প্রান্তিক জনগণ টিকে থাকতে পারবে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য এটি দরকার।’

এমআরএ-এর নির্দেশনা

কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়ার বিষয়ে গত ২৫ জুলাই এক সার্কুলার দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ)। বলা হয়, ‘সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া বিধিনিষেধ চলাকালে সরকারের সকল নির্দেশ অনুসরণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট আর্থিক সেবা পরিচালনা করা যাবে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবা ও রেমিট্যান্স সেবা প্রদানসহ ইতিপূর্বে নির্দেশনার আওতায় সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বিশেষ করে অসহায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করতে হবে।’

বাধা দিয়ে চিঠি

কর্মকাণ্ড বন্ধে স্থানীয় এনজিওগুলোকে চিঠি দিয়েছেন নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল।

চিঠিতে বলা হয় ‘করোনা সংক্রমণের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে এলাকার আগের সকল কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সাধারণ জনগণের আয়-উপার্জনের কথা বিবেচনা করে এনজিও প্রতিষ্ঠানসমুহের ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হলো।’

শুধু নাটোরই নয়, কার্যক্রম বন্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসকও। বৈঠকে জেলায় এনজিও কার্যক্রম বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

চিঠি দেয়া ছাড়াও মৌখিকভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায় ছাড়াও ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আরোপ করা হয় বিধিনিষেধ। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে অর্থের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত নিশ্চিত করার যে উদ্যোগ, তা ব্যহত হচ্ছে।

এনজিও খাত সংশ্লিষ্টদের ক্ষোভ

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সিও এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন এনজিওর কার্যক্রম অন্যভাবে চিন্তা করছে। এটা যে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধরণের সফলতা বয়ে নিয়ে আসে, সেটা তারা মনে করছে না। সরকার সেটা চিন্তা করেই সুযোগ দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এনজিও কার্যক্রম মানে শুধু ঋণের অর্থ তোলা নয়। ঋণ দেয়াও একটি কাজ। আর ঋণের অর্থ না তোলা গেলে পরে গ্রাহকের ঘাড়েই বড় অংকের দায় বাড়বে। যা পরিশোধের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে।’

এনজিও সংস্থা ‘পদক্ষেপ’-এর নির্বাহী পরিচালক সালেহ বিন সামস বলেন, ‘যেহেতেু এখন চলাচলে কিছুটা বিধিনিষেধ আছে, সেহেতু আমরা এখনও মাঠ পর্যায়ে কাজ পরিচালনা করতে পারছি না। স্থানীয় প্রশাসন থেকেও সহায়তা করা হচ্ছে না।’

এনজিও ‘কোস্ট ফাউন্ডেশন’-এর পরিচালক তারিক সাইদ হারুন বলেন, ‘এনজিওগুলোর মূল কাজ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা বাড়ানো। সেটা ব্যহত হলে মাহামারি ভালোভাবে মোকাবিলা করা কঠিন হবে।’

তিনি বলেন, ‘দরিদ্র জনগণ পুঁজি পেলে সবকিছু করতে পারবে। পুঁজি সরবরাহের ক্ষেত্রে এনজিও কাজের বিকল্প নেই।’

প্রান্তিক অর্থনীতিতে অবদান

গ্রামীণ অর্থায়নের প্রায় ৭৩ ভাগ যোগান দেয় ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো।

কৃষিখাতে যায় বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৪০ ভাগ অর্থ। অর্থাৎ যেখানে ব্যাংক অর্থায়ন করে না, সেখানেই যায় ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো।

ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (সিডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ অর্থায়নের প্রায় ৭৩ শতাংশ যোগান আসে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে।

কটেজ, মাইক্রো ও স্মল খাতের (এসএমই) ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণের গ্রাহক। ক্ষুদ্র ঋণ গ্রাহকদের ৯০ শতাংশের বেশি নারী।

বর্তমানে সনদপ্রাপ্ত ৭৪৬টি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের সারা দেশে শাখা সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠান ৩ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহককে প্রতিদিন দিচ্ছে ৬০০ কোটি টাকার ঋণ। মাসে দেয়া হয় ১২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোগ ঋণ হিসেবে বিতরণ করছে এনজিও খাত।

তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক উন্নয়নে নিজস্ব আয়ের ৪৬৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। যার মধ্যে কোভিড-১৯ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর