করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে ঘরের বাইরে যেতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাঁচাবাজারের চিরচেনা ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক আগের মতো নেই। বিক্রেতারাও বাজারে নিয়ে আসছেন চাহিদামতো পণ্য, ক্রেতারাও পণ্য কিনছেন যেন প্রতিদিন বাজারে আসতে না হয়।
ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ। ঈদের পরপর রাজধানীর কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা এখন অনেকটাই দর-কষাকষির পর্যায়ে চলে গেছে। তবে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ওয়েবসাইটে জুন মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, জুন মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মে মাসে যা ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দশমিক ৫৮ শতাংশ।
আর জুন মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মে মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
তথ্যে এও বলা হয়েছে, জুন মাসে মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, শাকসবজি, ফল, মসলা, দুগ্ধজাত ও অন্য খাদ্যসামগ্রীতে মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাজারে সব ধরনের চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজারেও তার প্রমাণ মিলেছে। রাজধানীর খিলগাঁও কাঁচাবাজারে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। পাইজাম বা লতা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। মোটা চাল স্বর্ণা ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়।
দুই সপ্তাহ আগেও সরু চাল ছিল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আর মোটা চাল পাওয়া যেত ৫০ টাকায়।
বাসাবো বাজারের মাসুম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মাসুম জানান, পাইকারি বাজারেই চালের দাম বেশি। বিশেষ করে করোনার এই সময়ে চালের সরবরাহ কম থাকায় হঠাৎ করেই দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরেই থেমে থেমে চালের দাম বাড়ছে। তবে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসেবে বলা হয়, বর্তমানে মোটা ও মাঝারি ধরনের চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সেখানে আমন সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬১ থেকে ৬৪ টাকায়। আমন মাঝারিগুলো বিক্রি হচ্ছে ৫১ থেকে ৫৩ টাকায়, আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়।
দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে বোরো চালের ক্ষেত্রেও। বোরো সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬১ টাকায়, মাঝারি ৫০-৫৩ টাকায়, যার সবগুলোর দাম বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঈদের পর থেকে কাঁচাবাজারে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। ফাইল ছবি
রাজধানীর সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও পেঁয়াজ, আটা, ডিম, চিনিতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ডিম (লাল) হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকা। যা আগে ছিল ৩২ টাকা। লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। চিনি ৭২ টাকা, মসুর ডাল ১৩০ টাকা কেজি।
পেঁয়াজ দেশিটা বিক্রি হচ্ছে ৪৩-৪৬ টাকায়। দেশি রসুন ৬২-৭০ টাকা, আমদানি রসুন ১২৫-১২৭ টাকা, আটা প্রতি কেজি ৩৪-৩৬ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হচ্ছে।
কাঁচা মরিচের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা, দেশি আদা ১০০-১১০ টাকা, আমদানি করা আদা ১০৬-১১৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটার সয়াবিন তেল কোম্পানি ভেদে ৬৫০-৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। আগে প্রতি কেজি ৫৫০-৫৮০ টাকায় বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ থেকে ৮০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ১২৫-১৩০ টাকা, সোনালি ২২০-২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির দাম আগের মতোই স্থিতিশীল আছে। মান ও আকার ভেদে দামের কিছুটা হেরফের রয়েছে। তবে সেটা একেবারে বেশি নয়।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, কাঁকরোল ৩০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া পেঁপে ৪০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা কেজি, জালি প্রতিটি ৪০ টাকা, ছোট মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা পিস বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছের দামও কিছুটা বেশি কয়েক দিন থেকে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বাড়তি।
বাজারে রুই প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, ইলিশ আকারভেদে ৮০০-১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মালিবাগ বাজারে বাজার করতে আসা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘সবজির দাম ঠিক আছে। আর এখন লকডাউন হওয়ায় প্রতিদিন যাতে বাজারে আসতে না হয় এ জন্য দুই দিন বা তিন দিনের বাজার একসঙ্গে করে নিয়ে যাই।’
সরকারের বর্তমান বিধিনিষেধে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা ও উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার বসার অনুমতি দেয়া আছে।