বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাটডাউন: ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি পরিশোধে ভোগান্তি

  •    
  • ৩ আগস্ট, ২০২১ ০৯:০৪

এ সময়ে হাতে নগদ টাকা না থাকলেও ক্রেডিট কার্ড হয়ে উঠছে নাগরিকদের কাছে নগদ টাকা। চাহিদামতো দৈনন্দিন কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিমানের টিকিট ক্রয়, দেশে ও বিদেশে হোটেল-রেস্তোরাঁর বিল পরিশোধ—সবই হচ্ছে এ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। সময়মতো বিল পরিশোধ করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কিস্তি না দিলেই গুনতে হবে চড়া জরিমানা।

‘করোনা মহামারি চলছে। চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করে শাটডাউন দিয়েছে সরকার। এই মুহূর্তে কী করে ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি পরিশোধ করব? বের হলেই তো রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলে জবাবদিহি করতে হবে। হেনস্তার শিকার হতে হবে। কিন্তু সময়মতো কিস্তি জমা না দিলেও আছে জরিমানার খড়্গ।’

আক্ষেপের সুরে এসব কথা জানান বেসরকারি একটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী আতিয়া খানম।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবারের পর রোববারও ব্যাংক বন্ধ ছিল। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে কোন শাখা খোলা, সেটা জানেন না তিনি। এখন বিল কীভাবে দেবেন, সেটা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। কারণ সপ্তাহে মাত্র সোম, মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার ব্যাংকের শাখা খোলা।

এ সময়ে হাতে নগদ টাকা না থাকলেও ক্রেডিট কার্ড হয়ে উঠছে নাগরিকদের কাছে নগদ টাকা। চাহিদামতো দৈনন্দিন কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিমানের টিকিট ক্রয়, দেশে ও বিদেশে হোটেল-রেস্তোরাঁর বিল পরিশোধ—সবই হচ্ছে এ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। সময়মতো বিল পরিশোধ করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কিস্তি না দিলেই গুনতে হবে চড়া জরিমানা।

গত বছর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর লম্বা একটা সময় ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি বছর ৫ এপ্রিল এক সপ্তাহের লকডাউন চলাকালে ক্রেডিট কার্ডধারীদের বিল পরিশোধে ভোগান্তির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিবেচনায় রাখলেও এরপর দফায় দফায় শাটডাউনে সেটি নিয়ে ভাবা হয়নি। সময়মতো বিল পরিশোধ না করা হলে জরিমানা না নেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

কঠোর বিধিনিষেধে ব্যাংকের সব শাখাও খোলা থাকবে না। সব ব্যাংকের বুথে টাকা জমা দেয়ার পদ্ধতিও নেই। ফলে এবার সময়মতো বিল পরিশোধ করতে না পারলে জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে।

ক্রেডিট কার্ডের বিল জমা দেয়ার কোনো একক তারিখ নেই। একেকজনের ক্ষেত্রে এটি একেক রকম। তবে নির্ধারিত সময়ে বিল দিতে না পারলে সেখানে বিলম্ব ফি ছাড়াও উচ্চ হারে সুদ গুনতে হয়। এ কারণে গ্রাহকরা কার্ডের বিল সময়মতো পরিশোধে জোর দিয়ে থাকেন।

ক্রেডিট কার্ডের বিল অনলাইনেও জমা দেয়া যায়। তবে সবাই অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করেন না। তারা ব্যাংকে গিয়েই টাকা পরিশোধ করেন।

পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বিকাশের মাধ্যমে সহজেই কার্ডের বিল পরিশোধ করা গেলেও সবাই সেটা বোঝেন না। দেশে ইস্যু হওয়া ভিসা ও অ্যামেক্স ব্র্যান্ডের সব ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করা যাবে বিকাশের মাধ্যমে। এর বিপরীতে গ্রাহকদের অতিরিক্ত ১ শতাংশ মাশুল গুনতে হবে।

এবার শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধে সরকার অনেক কঠোর। মানুষকে ঘরে রাখতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া বের হওয়ায় মানুষকে আটক করা হয়েছে।

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, বিধিনিষেধ চলাকালে শুক্র ও শনিবারের পাশাপাশি ব্যাংক বন্ধ থাকবে রোববার ও বুধবার। বাকি দিন সবগুলো শাখা খুলবে না। প্রতিটি ব্যাংক প্রয়োজন অনুসারে শাখা খোলা রাখতে পারবে।

ক্রেডিট কার্ডের বিল সময়মতো দিতে না পারলে জরিমানার পাশাপাশি অনেক বেশি হারে সুদ দিতে হয়। ব্যাংকে সুদহার ৯ শতাংশ হলেও কার্ডের সুদ ২০ শতাংশ পর্যন্ত আছে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরিফুল হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে আয় কমে গেছে। কোম্পানি বন্ধ থাকার কারণে লোকসান গুনতে হবে। সামনে অবস্থা আরও খারাপ হবে কি না, বুঝতে পারছি না। সংসার চালাতে গত মাসে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা ঋণ নিয়েছি। এই মুহূর্তে কিস্তি দেয়া সম্ভব নয়। বিলম্ব ফি ও চক্রবৃদ্ধি সুদ আরোপ হলে আর্থিক সংকটে পড়তে হবে।’

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার

বাংলাদেশে গত এক দশকে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে।

২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ছিল ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭১, যা চলতি মে মাসে বেড়ে হয়েছে ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৪। ফলে এক বছরে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৪১৩।

গত মে মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৭১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ বছর মে মাসে সেটা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

বাংলাদেশে ইস্যু হওয়া ১৭ লাখ ক্রেডিট কার্ডের বড় অংশই ভিসা ও অ্যামেক্স ব্র্যান্ডের। এর মধ্যে ভিসা কার্ড রয়েছে প্রায় সব ব্যাংকের। আর অ্যামেক্স কার্ড এককভাবে বাজারে এনেছে দ্য সিটি ব্যাংক। এর বাইরে আরও কয়েকটি ব্র্যান্ডের কার্ড চালু রয়েছে দেশে।

ব্যাংকাররা যা বললেন

দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে কার্ড সেবায় শীর্ষে বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারিতে অনেকে শাখায় গিয়ে সেবা নিতে চাইছেন না। ফলে বিকল্প সেবা মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে। তবে কিস্তি শোধে এবার কোনো ছাড়ের নির্দেশনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেয়নি। ’

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে বেশ কিছুদিন ধরে শাখা থেকে সীমিত লেনদেন চলছে। এ জন্য কার্ডভিত্তিক লেনদেন বাড়াতে ব্যাংকগুলো বেশ আগ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আসছে। আগে কার্ডের ব্যবহার করতেন না- এ রকম অনেকেই এখন এদিকে ঝুঁকছেন। করোনার এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেকোনো নির্দেশ পরিপালন করা হয়। ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা দিলে সেটা মানা হবে।’

ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি পরিশোধে কোনো ছাড় দেয়া হবে কি না এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ড পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালায় অন্য যেকোনো ঋণের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বেশি সুদ নিতে পারবে বলে জানানো হয়।

২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মানে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদ হওয়ার কথা ১৪ শতাংশ। তবে এই নির্দেশনাও অমান্য করে অনেক ব্যাংকই বিভিন্নভাবে এর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করত।

ফলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কোনো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে ২০ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারবে না বলে নতুন নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়।

এতে আরও বলা হয়, ক্রেডিট কার্ডে সুদ আরোপ শুরু হবে ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময়ের পর। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ৪৫ দিন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়।

আর ক্রেডিট কার্ডে ঋণসীমার বিপরীতে ৫০ শতাংশের বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে না।

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটায় ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা সুদে বিল পরিশোধের সুযোগ থাকে। অর্থাৎ প্রতি ৩০ দিনের খরচের ওপর বিল তৈরি করে ওই বিল পরিশোধের জন্য ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ করলে কোনো সুদ আরোপ করা হয় না। আর এই সময় পার হয়ে গেলে ওই বিলের ওপর সরল হারে সুদ আরোপ করে ব্যাংক। বিল পরিশোধে বিলম্ব হলে এই সুদহার চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে।

এ বিভাগের আরো খবর