ঈদ পরবর্তী শাটডাউনের শেষ দিন ৫ আগস্টের পর স্বাভাবিক নিয়মে রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন মালিকরা।
চলমান লকডাউনে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে এমন দাবি করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে মালিকদের দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান করোনা মহামারিতে দোকান বন্ধ রাখায় আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
এতে বলা হয়, মহামারির আঘাতে রেস্তোরাঁ খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত করোনার কারণে সরকারি আদেশ অনুযায়ী রেস্তোরাঁ ব্যবসা কখনো ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে, কখনো অনলাইন বা টেকওয়ের মাধ্যমে সীমিতভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে।
রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুধু অনলাইন ডেলিভারি বা টেকওয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চালানো সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীরা দিশেহারা ও নানা সমস্যায় জর্জরিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সারা দেশে ৬০ হাজার রেস্তোরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। করোনায় সারা দেশে ৮০ ভাগ রেস্তোঁরা বন্ধ রয়েছে।
ইমরান বলেন, ‘বর্তমানে টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারি করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হোটেল-রেস্তোরাঁ অনুপাতে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। আমরা মনে করি শুধু অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ দিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দুরভিসন্ধিমূলক ও দেশীয় ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করার পথও বটে। এখানে দেশি-বিদেশি স্বার্থন্বেষী মহলের হাত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ইএফডি মেশিন স্থাপন এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ে হয়রানি চলছে। পচনশীল (পেরিশেবল) পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ রয়েছে। তাই কোনো ব্যাংক হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ঋণ দিচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, জাতীয় রাজস্ব খাতে রেস্তোরাঁ খাতের ব্যাপক অংশীদারত্ব ও পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও একে শিল্পের মর্যাদা দেয়া হয় না।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রস্তাব
সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বেশ কিছু প্রস্তাব করে।
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল, রেস্তোরাঁ স্বাভাবিক নিয়মে চালু রাখা। তাও সম্ভব না হলে ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালুর সুযোগ দেয়া।
২. এ ব্যবসাকে চলমান রাখার জন্য চলতি মূলধন হিসেবে এসএমই খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে জামানতবিহীন এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া।
৩. রেস্তোরাঁ সেবা খাত। এ জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা দেয়া।
৪. এ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রণোদনা প্রদান। শ্রমিকদের মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ অথবা নির্দিষ্ট কার্ড দেয়ার মাধ্যমে মাসিকভাবে খাদ্য সাহায্য দেয়া।
৫. হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে শিল্পের মর্যাদা দেয়া ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।
৬. টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা।
লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁ কার্যত বন্ধ। অনলাইনে বিক্রি চালু থাকলেও আগের মতো চাহিদা নেই। বাইরে জনসাধারণের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ থাকায় বিক্রিবাট্টায় এখন মন্দাবস্থা।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির (বিআরওএ) মহাসচিব ইমরান নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, শাটডাউনে শুধু টেকঅ্যাওয়ে সেবা চালু থাকায় ২ থেকে ৩ শতাংশ রেস্তোরাঁ তাদের কর্মকাণ্ড চালু রাখতে পেরেছে। টেকঅ্যাওয়ে বা অনলাইন ডেলিভারি সেবার মাধ্যমে তাদের কোনো ব্যবসা হয়নি বললেই চলে।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, দেশজুড়ে তার ২৩টি রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশপাশে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় তিনি সেগুলো চালু করতে পারছেন না।
বিআরওএর বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম সরকার রবিন নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘করোনার প্রথম ধাক্কায় ৬০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। যে ক্ষতি হয়েছে, তা-ই আমরা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি।
‘১০-১৫ শতাংশ রেস্টুরেন্ট আর চালু করাই সম্ভব হয়নি। ঢাকার মধ্যে দুই শতাধিক রেস্টুরেন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।’
রেস্তোরাঁর সংখ্যা কত
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির (বিআরওএ) তথ্য বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে ৭০ থেকে ৮০ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। এতে কাজ করছেন প্রায় ৩০ লাখের মতো শ্রমিক-কর্মচারী।
এর মধ্যে রাজধানীতে আছে প্রায় ৮ হাজার রেস্তোরাঁ। ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে সাড়ে চার হাজার। উত্তর সিটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এসব রেস্তোরাঁয় সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করেন।
মালিকদের ভাষ্য, শাটডাউনে ক্রেতা না থাকায় সারা দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখেছেন তারা। আর যে ২০ শতাংশ রেস্তোরাঁ খোলা আছে, তারাও ক্রেতা পাচ্ছে না। এর ফলে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।