পোশাক কারখানার যে সব শ্রমিক ঈদের আগে গ্রামে গেছেন, তাদের গ্রামেই অবস্থান করতে বলেছে পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। লকডাউন পুরোপুরি শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে যোগ না দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
মহামারি নিয়ন্ত্রণের লকডাউনের মধ্যে কারখানা খুলে দেওয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে বড় বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে পোশাককর্মীদের। সারাদিনই দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে এই দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। রাতেও দলবেঁধে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে ফিরেছেন শ্রমিকরা।
শনিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলমান লকডাউনের মধ্যে গ্রামে থাকা শ্রমিকদের কাজে না ফিরতে অনুরোধ করেছেন। যে সব শ্রমিক কাজে যোগ দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নিতে কারখানার মালিকদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ফারুক হাসান রাত পৌণে ৮টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বার বার বলেছি, যে সব শ্রমিক ঈদের আগে গ্রামের বাড়ি যায়নি, কারখানার আশেপাশেই অবস্থান করছেন, তাদের দিয়ে কারখানায় উৎপাদন কর্মকাণ্ড চলোনো হবে। লকডাউনের মধ্যে কষ্ট করে এসে কাজে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যারা কাজে যোগ দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে না। তারপরও অনেকে লকডাউনের মধ্যে কষ্ট করে এসেছেন।
আগামীকাল রোববার থেকে শিল্পকারখানা খুলবে, এমন ঘোষণায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষজন। ছবিটি গাবতলি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
‘আমি মালিকদের আবারও বলছি, যারা রোববার থেকে কাজে যোগ দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। কারো চাকরি যেন না যায়।’
শনিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলমান লকডাউনের মধ্যে গ্রামে থাকা শ্রমিকদের কাজে না ফিরতে অনুরোধ করেছে পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।
শ্রমিকদের অভয় দিয়ে সংগঠনটি বলছে, বিধিনিষেধ পুরোপুরি শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে যোগ না দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
বিবৃতিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান কারখানা মালিকদের উদ্দেশে বলেন, বিধিনিষেধ পুরোপুরি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত গ্রামে অবস্থানরত কোনো শ্রমিক-কর্মচারী কারখানায় কাজে যোগদান করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কারখানার আশপাশে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিবৃতিতে ফারুক হাসান বলেন, রপ্তানিমুখি শিল্পের সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকার ১ আগস্ট রোববার থেকে সকল রপ্তানিমুখি শিল্প কারখানা লকডাউনের আওতা বহির্ভূত রাখার জন্য গত বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ যে, এই করোনা ক্রান্তিকালে রপ্তানিমুখি শিল্পের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে এবং দেশ ও অর্থনীতি এবং জীবন ও জীবিকা দুটোই সমন্বয়য়ের স্বার্থে সকল রপ্তানিমুখি শিল্প কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তবে কারখানা পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক ঘোষিত এবং বিজিএমইএ কর্তৃক প্রদত্ত সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সকল সদস্যগণকে আহ্বান জানাচ্ছি।
‘লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত গ্রামে অবস্থানরত কোনো শ্রমিক-কর্মচারী কারখানায় কাজে যোগদান করতে না পারলে তার উপর কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এ সময়ে কারখানার আশে-পাশে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সকল সদস্যদের আহ্বান করছি।’
বিজিএমএইএ সভাপতি বলেন, ‘পোশাক শিল্পে কর্মরত সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের জন্য করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ জন্য সরকারের প্রতি বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা আবারও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। রপ্তানি বাণিজ্যে গতি ধরে রাখতে শ্রমিকদের শতভাগ টিকার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় করোনার টিকার ব্যাপারে সহায়তা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানদের নিকট আমরা ইতিমধ্যে আহ্বান করেছি।’
এদিকে রোববার থেকে পোশাক কারখানা খুলার ঘোষণায় শনিবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেঁধে শ্রমিকরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। মহামারি নিয়ন্ত্রণের লকডাউনের মধ্যে কারখানা খুলে দেওয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে পোশাককর্মীদের।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর এক বিবৃতিতেও শ্রমিক ও মালিকদের উদ্দেশে একই আহ্বান জানানো হয়েছে।
পথের দুর্ভোগ নিয়ে শনিবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরমুখী এসব পোশাককর্মী বলছেন, একে চাকরি হারানোর ভয়, অন্য দিকে পথে কিছু নেই। তাদের বিপদ দুই দিকেই।
সারা দেশে গার্মেন্টসসহ কলকারখানা সীমিত পরিসরে চালুর ঘোষণায় ভোলার ইলিশা-লক্ষীপুর ফেরিঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ছবি: আদিল হোসেন তপু/নিউজবাংলা
বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই শিল্প মূলত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর কেন্দ্রিক হলেও প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক ছড়িয়ে আছে সারা দেশে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় ঈদের পর যে লকডাউন শুরু হয়েছে, তাতে সব শিল্প কারখানাও ৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে সরকারই জানিয়েছিল।
ফলে যেসব শ্রমিক ঈদের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন, তারা ধরেই নিয়েছিলেন, লকডাউনে আর ফিরতে হচ্ছে না তাদের।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের বারবার অনুরোধে শুক্রবার সরকার জানায়, রপ্তানিমুখী কারখানা রোববার থেকে লকডাউনের আওতামুক্ত। অর্থাৎ রোববার থেকে পোশাক কারখানা খোলা।
এই সিদ্ধান্ত জানার পর শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে পোশাককর্মীরা ঢাকায় রওনা হন, যদিও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কোনো বাস নেই সড়কে।
গার্মেন্টস খোলার খবরে রাজধানীমুখী শ শ শ্রমিক বরিশাল বাস টার্মিনাল এলাকায় শনিবার সকাল থেকে জড়ো হয়েছেন। ছবি: তন্ময় তপু/নিউজবাংলা
পদ্মা পাড়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে সকাল থেকেই ভিড় ছিল।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তিন চাকার বিভিন্ন গাড়ি ও মোটর সাইকেলে করে অনেককে রাজধানীর সদরঘাটে আসতে দেখা যায়। সেখান থেকে ফেরিতে উঠছিলেন তারা।