বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা চার দিনের ভারী বর্ষণে বরগুনায় মৎস্য খাত তছনছ হয়ে গেছে।
সাড়ে পাঁচ হাজার ঘেরের মাছ ভেসে গিয়ে চাষিদের ক্ষতি চার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
দুই মাস আগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, বরগুনার ছয় উপজেলায় ৫ হাজার ৮৮১টি পুকুর ও ১৫৩টি ঘের প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে গেছে। ১৩ লাখ মাছের পোনা ও ১ লাখ গলদা চিংড়ির পোনা ঘের ভেসে গেছে। জেলায় মৎস্য খাতে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।স্বাভাবিকভাবে উপকূলের মাছ চাষিরা ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পেলে ঘের রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। এবার ঝড় ছাড়াই এভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন কেউ ভাবতে পারেননি।
গত সোমবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। মঙ্গল ও বুধবার এই দুই দিনে বরগুনা জেলায় ২৬২ মিলিমিটার বৃৃষ্টিপাত হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এবারের ভারী বর্ষণে যে ক্ষতি হয়েছে তা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতির সমান।
মাছের ঘের রক্ষার চেষ্টা করেন চাষিরা
তালতলী বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় একটি উপজেলা। সেখানকার মাছচাষি আলম খান সাত একর জমিতে মাছের ঘের করেছিলেন। ব্যয় হয়েছিল সাত লাখ টাকা।
ভারী বর্ষণ আর অধিক জোয়ারে তার ঘের প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে গেছে। চেষ্টা করেছিলেন চারপাশে জাল দিয়ে আটকানোর, কিন্তু অত বড় ঘেরে জাল দেয়া সম্ভব হয়নি।
আলম খান বলেন, ‘বইন্যায় তো ক্ষতির চিহ্ন থাকে, কিন্ত এহন যা অইছে এই ক্ষতি তো দেহন যায় না। মুই টাহাপয়সা ধারদেনা কইর্যা ঘের দিছিলাম। ঘের তলাইয়া অর্ধেকেরও বেশি মাছ বৃষ্টির পানিতে ভাইস্যা গ্যাছে। প্রায় চাইর লাক (লাখ) টাহার মাছ মোর নাই, এই লস কেমনে কাডাইয়া উডমু।’
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের সাকিব ফরাজী বলেন, ‘ইয়াসের সময় একফির (একবার) তলাইয়া মাছ ভাইস্যা গেছে, আবার নতুন কইর্যা পোনা ছাড়ছিলাম। এইবার দেওইতে পানিতে ডুইব্যা ঘেরের মাছ পোনা সব ভাইস্যা গ্যাছে, এহন ঘের মাছশূন্য অইয়া গেছে। মোগো এই ক্ষতি কাডাইয়া ওডনের কোনো উপায় দেহি না।’
পাথরঘাটার মাছেরখাল এলাকার মাসুম মিয়া বলেন, ‘গলদা চিংড়ির চাষ করছিলাম ঘেরে। মাত্র দুই মাস অইছে পোনার বয়স, কেবল ডাঙ্গর অওয়া শুরু করছেলে, দেওইর (বৃষ্টির) পানিতে ঘের তলাইয়া সব মোর সব পোনা বাইরাইয়া গ্যাছে।’ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ভারী বর্ষণে জেলার নিচু অঞ্চলের বেশির ভাগ ব্যক্তিমালিকানার পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই সব পুকুরের চাষের মাছ অধিকাংশই ভেসে গেছে।
সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের বালিয়াতলী এলাকার গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আডে-বাজারের মাছের একছের দাম দেইখা সবাই পুহুইরে মাছ চাষ করি মোরা। এইবারের দেওইতে এত পানি অইছে যে, এলাকার সব পুহইরই (পুকুর) তলাইয়া গ্যাছে, মোগো এলাকার কেহইর (কারো) পুহইরে আর মাছ নাই।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার বলেন, ‘প্রবল বর্ষণে বরগুনায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা পানিতে তলিয়ে যাওয়া পুকুর ও ঘেরের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি।’