ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেনকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ বলে আবারও উল্লেখ করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ধরনের মুদ্রাগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈধতা দিতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের মধ্যে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই বিষয়টি উড়িয়ে দিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার জনস্বার্থে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাতে, বলা হয়েছে, ‘ভার্চুয়াল মুদ্রা ঝুঁকিপূর্ণ, বৈধ নয়; লেনদেনে বিরত থাকুন।’
বিটকয়েন বা অন্যান্য ভার্চুয়াল মুদ্রা নিয়ে সিআইডির কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করতে এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে বলা হয়, ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটিকে অপরাধ বলার সুযোগ নেই।
এ-সংক্রান্ত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রা (ক্রিপ্টোকারেন্সি) বিষয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। একটি নির্দিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার গোপনীয় ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পত্রের মাধ্যমে পাঠানো মতামতের অংশবিশেষ কোনো কোনো পত্রিকায় খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।’
সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনের পাশাপাশি সব ধরনের প্রচার-প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, ‘কোনো ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত নয়। সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে যেকোনো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় (যেমন বিটকয়েন, ইথারিয়াম, রিপল ইত্যাদি) লেনদেন অথবা এরূপ কার্যে সহায়তা প্রদান ও এতৎসংক্রান্ত প্রচারণা হতে বিরত থাকার জন্য সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন থেকে বিরত থাকার বিষয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। সেখানে যে অবস্থান বাংলাদেশ ব্যাংকের ছিল, এখনও তাই রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ প্রসঙ্গে সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে পুনরায় জানানো যাচ্ছে, যেকোনো ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত নয়।’
আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৭ সালের ডিসেম্বরেই বিজ্ঞপ্তিতে জানায় বিটকয়েন জাতীয় মুদ্রাগুলো বৈধ নয়
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিবিধ বিনিময় প্ল্যাটফর্মে লেনদেন হচ্ছে। এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ মুদ্রা নয় বিধায় এর বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবির স্বীকৃতও থাকে না। এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয় বিধায় এসব ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর দ্বারা সমর্থিত হয় না।
‘অনলাইনে নামবিহীন/ছদ্মনামিক প্রতিসঙ্গীর সঙ্গে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা অনিচ্ছাকৃতভাবে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ-সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, অনলাইনভিত্তিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রায় অর্থমূল্য পরিশোধ ও নিষ্পত্তি সংঘটিত হয় এবং এটি কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বা পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত নয়। এ কারণে গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।
গত ১৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সহকারী পরিচালক শফিউল আজম এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি সিআইডিকে পাঠান। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২- এর আওতায় অপরাধ হতে পারে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিআইডি এ নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচা ও এ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিআইডি এমন দুটি মামলার তদন্ত করছে। এর সূত্র ধরেই সংস্থাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে মতামত চায়।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সির সংখ্যা এখন আট হাজারের বেশি। এগুলোর মধ্যে বিটকয়েন সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ১ বিটকয়েনের বর্তমান দর ৩৩ হাজার ডলারের বেশি। ২০০৮ সালে এই মুদ্রা উদ্ভাবনের পর বিশ্বের কোনো আইনগত কর্তৃপক্ষ এই মুদ্রাকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে জাপান, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো কয়েকটি দেশ এই মুদ্রায় লেনদেনকে বৈধতা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।