গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্পকারখানা খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের আশা, দেশের অর্থনীতি বাণিজ্যের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অনুরোধে সাড়া দেবেন সরকারপ্রধান।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে দেখা করে শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন দিয়ে আসেন ব্যবসায়ী নেতারা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা ক্যাবিনেট সচিবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম সমস্ত বিজনেস পাইপ থেকে। এই যে লকডাউনটা আছে, এটা থেকে যেন সব ধরনের শিল্পকে কাজ করতে সুযোগ দেয়া হয়। এটাই আমরা ওনার কাছে অনুরোধ করতে আসছি।
‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওনার মাধ্যমে এই অনুরোধটা আমরা করেছি। তিনি বলেছেন, উনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলে এই ডিসিশনটা খুব তাড়াতাড়ি দেবেন।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি, সংক্রমণ, মৃত্যু সবকিছু মাথায় নিয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকার এটা বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি।’
এ সময় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আমাদের কনসার্নটা বলেছি, ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ থাকলে কী প্রবলেম হচ্ছে। কারণ সাপ্লাই চেইনটা ভেঙে যাচ্ছে। পোর্টে জটের কথা আপনারা সবাই জানেন। আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর আশঙ্কা আছে আমাদের। লাস্ট, আমাদের লোকাল ইন্ডাস্ট্রিগুলোতেও সাপ্লাই চেইনে প্রবলেম হচ্ছে।’
খাদ্য, চামড়া, ওষুধশিল্পকে খুলে দেয়া হলেও সেখানে সাপ্লাই চেইনের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানালেন এফবিসিসিআই সভাপতি। বলেন, ‘ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে র্যাপিংয়ের দরকার। কার্টনের দরকার। এমন অবস্থায় ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ রাখা যায় না।’
২০২০ সালেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার একাধিকবার মানুষের চলাফেরায় কঠোর বিধিনিষেধ দেয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকরী উদ্যোগের জন্য আশাব্যঞ্জক জিডিপি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছিল বলে মনে করেন এফবিসিসিআই প্রধান।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবন-জীবিকাকে সামনে রেখে এগিয়ে গেছেন বলেই আমাদের পজিটিভ গ্রোথ ছিল। এতকিছুর পরও ৫ শতাংশের ওপরে গ্রোথ ছিল। আমরা মনে করি ইন্ডাস্ট্রিগুলো খুলে দেয়া দরকার।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনার বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআই প্রধান।
কোনো নির্ধারিত দিন থেকে শিল্পকারখানা খোলার দাবি জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট দিন নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ২৩ তারিখ থেকে লকডাউনে সব কিছু বন্ধ আছে, ঈদের আগে অলমোস্ট ১৮-১৯ তারিখ থেকে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক দিন বন্ধ থাকার কারণে সবকিছুরই সাপ্লাই চেইনে একটা শর্টেজ হয়।’
ব্যবসায়ীদের সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের এক্সপোর্ট যেটা আছে, তার সঙ্গে সঙ্গে লোকালেও সাপ্লাই আছে এবং পোর্টেও অনেক ইমপোর্টেড মাল আসে। জাহাজগুলো আনলোড করা, মালগুলো পোর্টে রাখার জায়গা থাকছে না। সে কারণে ফ্যাক্টরি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো না খুলে পোর্ট থেকে কনটেইনারে মাল রিলিজ না করলে সবকিছুতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার অনুরোধ করেছি।’
গার্মেন্টস শ্রমিকদের করোনা প্রতিরোধী টিকা দিয়ে দ্রুত কাজের সুযোগ দিতে সরকারের কাছে কোনো অনুরোধ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এই অনুরোধটাও করেছি।’
ঈগের আগে ১৮ ও ১৯ জুলাই ৩০ হাজারের মতো কর্মীকে টিকা দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ফারুক হাসান। বলেন, ‘শ্রমিকরা যখন ফ্যাক্টরিতে থাকে তখন তারা টিকা দিতে নিরাপদ ফিল করে। আর যখন তারা গ্রামে থাকে তখন তারা দিতে চায় না।
‘আমরা আরেকটা কথা বলেছি। শ্রমিকরা গ্রামে থাকলে সেখানে ডাক্তার বা ওষুধের দোকান বা হসপিটাল নাই। কিন্তু যে ফ্যাক্টরিগুলো আছে, যার আশপাশে তারা থাকে, সেখানে যদি থাকে তাহলে শ্রমিকদের আমরা নিরাপত্তা দিতে পারি।’
এর আগে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে করোনাবিষয়ক এক সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ‘আমাদের যে লকডাউন চলছে এটা চলতেই থাকবে। আমাদের যে টার্গেট ৫ আগস্ট পর্যন্ত সেই ৫ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন চলবে। যদিও আমাদের শিল্পপতিরা এবং অনেকে রিকোয়েস্ট করেছিলেন, আমরা সেই রিকোয়েস্ট বোধহয় গ্রহণ করতে পারছি না।’