অনিয়মের অভিযোগে ‘রয়েল এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করেছে স্থলপথের সবচেয়ে বড় শুল্কস্টেশন যশোরের বেনাপোল কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ।
ছাড়পত্র জমা না দিয়েই পণ্য খালাসের অভিযোগে মঙ্গলবার ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়।
অবশ্য সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিক রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সার্ভার বিকল হওয়ায় পণ্য খালাসের জন্য যথাসময়ে ছাড়পত্র জমা দিতে পারেননি। এ কারণে তার লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
তবে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিয়মানুযায়ী আমদানি করা পুরো চালানের বিপরীতে সমুদয় শুল্ক-কর পরিশোধ করেই ছাড়পত্র জমা দিয়ে পণ্য খালাস করতে হয়। কিন্তু অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান তা করেনি। এটি একধরনের অনিয়ম। এ অভিযোগে লাইসেন্স স্থগিত করা হলো।
বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার এনপি এন্টারপ্রাইজ এবং রাজ এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ১৬টি ভারতীয় ট্রাকে করে আঙুর, টমেটো ও আনারের চালান ভারত থেকে আমদানি করে।
এসব পণ্য খালাসের দায়িত্ব পায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজ।
আমাদানি করা ওই চালানের পরীক্ষা ও শুল্কায়ন করা হলেও তিন ট্রাক পণ্যের শুল্কায়ন বাকি ছিল। যে কারণে ছাড়পত্র নির্ধারিত সময়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল জানান, আমদানিকারক ভারত থেকে ১৬ ট্রাক নানা ধরনের কাঁচামাল মাল আনেন।
ওই চালানের বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ১০টি বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়। পণ্যের চালানটি কাস্টমস থেকে ছাড় করাতে অনেক রাত হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, ওই চালানে শুল্কায়ন করার পর দেখা গেছে, মোট রাজস্ব আসে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
এর মধ্যে ৮টি পণ্য চালানের বিপরীত রাজস্ব আসে ১ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা সংশ্লিষ্ট এলকার সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রিলিজ অর্ডার পণ্য খালাসের ছাড়পত্র নেয়া হয়।
বাকি দুটি চালানের বিপরীতে রাজস্ব আসে ২০ লাখ ১১ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকা সংগ্রহ করতে অনেক রাত হয়ে যায়।
পরে টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকে চালান জমা হয়। কিন্তু অনলাইন সার্ভার বিকল থাকায় বাকি পণ্যের জন্য ছাড়পত্র বা রিলিজ অর্ডার বের করা সম্ভব হয়নি।
সার্ভার শনিবার রাত ১২টা থেকে পরের দিন রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিকল থাকে। সার্ভার সচল হওয়ার পরপরই রোববার ব্যাংক থেকে ছাড়পত্র নিয়ে কাস্টমসে জমা দেয়া হয়েছে।
তবে আমদানিকরা পণ্য পচনশীল হওয়ায় শনিবার রাতেই বন্দর থেকে সব মালামাল খালাস করে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু মাল খালাস নেয়ার সময় রিলিজ অর্ডার (ছাড়পত্র) কাস্টমসে জমা না দেয়ার কারণে এক সপ্তাহের জন্য লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করেছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম জানান, তিন ট্রাকে থাকা কাঁচামালের পরীক্ষা ও শুল্কায়ন হয়েছে। তবে রাজস্ব জমা হয়েছে পণ্য খালাস নেয়ার পরের দিন, যা আইনত অবৈধ।
নিয়ম অনুযায়ী, আমদানিকরা চালানের সমুদয় রাজস্ব জমা দেয়ার পরই পণ্য খালাস করতে হয়। কিন্তু অভিযুক্ত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান প্রচলিত নিয়মের ব্যত্য়য় ঘটিয়ে পণ্য খালাস করায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে লাইসেন্স সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।