করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির বিবেচনায় আগামী সপ্তাহে দুটি কর্মদিবসে ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী রোব ও বুধবার লেনদেন চলবে না এসব ব্যাংকে।
সপ্তাহের বাকি তিন কর্মদিবস সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার লেনদেন সকাল ১০টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলবে। তবে আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগ এক সার্কুলারে এ নির্দেশনা জারি করে।
এখন থেকে এই পদ্ধতিতেই লেনদেন চলবে কি না, সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। ৫ আগস্ট সরকার শাটডাউন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেবে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক বন্ধ থাকলে এই দুই দিন বন্ধ থাকবে পুঁজিবাজারের লেনদেনও। আর সেই তিন দিন ব্যাংকে লেনদেনের সময় এক ঘণ্টা বাড়লে পুঁজিবাজারেও লেনদেন এক ঘণ্টা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ১ জুলাই মানুষের চলাচলের বিধিনিষেধ দিয়ে শাটডাউন শুরুর পর দুটি রোববার ব্যাংক বন্ধ থাকলেও ঈদের ছুটি শেষে ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া শাটডাউনে রোববার ব্যাংক চালু রাখে।
করোনায় চলাচলের বিধিনিষেধ দেয়া হলেও ব্যাংক কখনও বন্ধ থাকেনি। গত বছর করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে ২৫ মার্চ থেকে ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে, চলতি বছর ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউন আর ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া শাটডাউনেও খোলা থাকে ব্যাংক। তবে লেনদেনের সময়সীমা কমানো হয় নানা সময়।
১ জুলাই থেকে শাটডাউন শুরু হলে শুক্র ও শনিবারের মতো ব্যাংক বন্ধ থাকে রোববারও। তবে ঈদ উপলক্ষে শাটডাউন ৮ দিনের জন্য শিথিল করলে রোববার খোলে ব্যাংক।
আর ঈদ শেষে শাটডাউনে লেনদেনের সময় সীমা ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত করা হলেও রোববার লেনদেন চলে।
এই শাটডাউন চলাকালে দৈনিক মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দিলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের কর্মীদের অফিসে আনা-নেয়ার ব্যবস্থা করেনি। একাধিক কর্মীকে শাটডাউনে বের হওয়ায় জরিমানা করেছে পুলিশ, নারায়ণগঞ্জে একজনকে পেটানোও হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এই নির্দেশনায় ব্যাংকাররা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন।
করোনায় ১৪৩ ব্যাংকারের মৃত্যু
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৬ জন। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২৭ হাজার ২৩৭ কর্মী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হন। ফলে ব্যাংকের জনবলের প্রায় ১৪ শতাংশই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এ আক্রান্তদের মধ্যে ১৪৩ জন মারা যান। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মীই ৭৩ জন।
করোনায় সর্বোচ্চসংখ্যক ব্যাংককর্মী আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের। ব্যাংকটিতে এখন পর্যন্ত ২৭ কর্মী মারা গেছেন।
গত মে মাস পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৪০০ জন। ওই সময় পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩৩ জন।
অর্থাৎ জুন মাসে ১ হাজার ৮৩৭ ব্যাংক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হন। মারা যান ১০ জন।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু জুন মাসে ১ হাজার ৮৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হন। মারা যান ১০ ব্যাংকার।
এ ছাড়া উপসর্গ দেখা যায় সহস্রাধিক কর্মীর শরীরে।