বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কম দামি পোশাকে ভর করেই ১৫% প্রবৃদ্ধি

  •    
  • ২৬ জুলাই, ২০২১ ১০:৩৩

বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে অনেকেই ঘরের বাইরে যেতে পারেননি। তাই অতি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো পোশাক কেনেননি তারা। সে কারণে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও গত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি আয় করেছে বাংলাদেশ।

অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল, তার চেয়ে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি এসেছে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে।

আর এটি সম্ভব হয়েছে মূলত কম দামি পোশাক রপ্তানিতে উল্লম্ফনের কারণে। মহামারিকালে অতিপ্রয়োজনীয় কম দামের পোশাক বিশেষ করে নিট পোশাক রপ্তানি বাড়ার কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে একটি স্বস্তির বছর পার করেছে বাংলাদেশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ (৩৮.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ১ হাজার ৭০০ কোটি (১৭ বিলিয়ন) ডলারই এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে নিট পোশাক থেকে ১ হাজার ৩৯০ কোটি (১৩.৯০ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা এসেছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে এই কম দামি পোশাক থেকে ২২ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে।

অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, দেড় বছর ধরে চলা মহামারির ছোবলে বিশ্বব্যাপী মানুষের আয় কমে গেছে। অফিস-আদালত বন্ধ। দিনের পর দিন লকডাউনের কারণে অনেকেই ঘরের বাইরে যেতে পারেননি। তাই অতি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো পোশাক কেনেননি তারা। সে কারণে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।

আর এর ওপর ভর করেই গত অর্থবছরের রপ্তানিতে ১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ওভেন পোশাক (তুলনামূলকভাবে দামি পোশাক) রপ্তানি থেকে ১ হাজার ৪৪৯ কোটি ৬৭ লাখ (১৪ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে; যা আগের বছরের ১ হাজার ৪০৪ কোটি ১১ লাখ (১৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন) ডলারের চেয়ে মাত্র ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। মোট রপ্তানি আয়ের ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ এসেছে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে।

প্রায় দেড় বছর ধরে বিশ্বব্যাপী চলছে অতিমারি করোনার প্রকোপ। লকডাউন, জরুরি অবস্থা কিংবা বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে চলছে বিভিন্ন দেশ। এতে কাজের ক্ষেত্রেও এসেছে নতুন বাস্তবতা। সতর্কতার অংশ হিসেবে ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করছেন অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এর ফলে বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা পোশাকের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে।

ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত টি-শার্ট, পলো শার্ট, শ্যান্ডো গেঞ্জি, ট্রাউজারজাতীয় পোশাক বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। আরামদায়ক হওয়ায় সারা বিশ্বেই রয়েছে এ ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তা। পোশাকশিল্পের ভাষায় এ ধরনের পোশাককে নিট ক্যাটাগরির পণ্য হিসেবে ধরা হয়।

অন্যদিকে শার্ট, প্যান্ট, স্যুট-ব্লেজারজাতীয় ফরমাল পোশাক হচ্ছে ওভেন ক্যাটারির পণ্য। করোনার বাস্তবতায় রপ্তানি বাজারে ওভেনের তুলনায় নিট পোশাকের চাহিদা এখন বেশি।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, দুই কারণে করোনাকালে ওভেনের তুলনায় নিটের চাহিদা বেড়েছে। প্রথমত, করোনার কারণে শারীরিক উপস্থিতির আনুষ্ঠানিকতা একেবারেই কম। অফিস-আদালতও চলছে অনলাইনে। জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না অনেকের। এ কারণে ফরমাল পোশাকের চাহিদা কমে এসেছে।

এ ছাড়া করোনার প্রভাবে মানুষের আয় কমে গেছে। তাই যেসব ওভেন পোশাকের দাম বেশি, সেগুলো কেনার মতো আর্থিক অবস্থাও নেই অনেকের। অন্যদিকে ওভেনের তুলনায় নিট পোশাকের দাম কম। সব মিলিয়ে, ঘরে ব্যবহার্য আরামদায়ক ইনফরমাল নিট পোশাকের চাহিদাই বেশি।

তবে, সামনে ওভেন পোশাকের জন্য সুদিন আসছে জানিয়ে পারভেজ বলেন, ‘আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার প্রকোপ কমে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এখন ওভেন পোশাকের চাহিদা বাড়বে। ইতোমধ্যে বাড়তি অর্ডার পাচ্ছি। আমরা যদি উৎপাদন কর্মকাণ্ড ঠিকমতো চালিয়ে সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে ওভেনের রপ্তানিও বাড়বে।

‘আর যদি মহামারির প্রকোপে কারখানা বন্ধ রাখতে হয়, রপ্তানি করতে না পারি, তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা।’

ওভেন থেকে নিটে রূপান্তর

পরিবর্তিত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বেশ কিছু ওভেন পোশাক উৎপাদনের কারখানা নিট পোশাক কারখানায় রূপান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি কারখানা ওভেন থেকে নিটে রূপান্তরিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন নিট পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর পরিচালক এবং ফতুল্লা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ফজলে এহসান।

তিনি বলেন, ‘নিট পোশাক উৎপাদন প্রযুক্তি ওভেনের তুলনায় সহজ। বিশ্ব পরিস্থিতি এ রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও অনেক কারখানাই ওভেন থেকে নিটে রূপান্তরিত হতে পারে।’

ফতুল্লা গ্রুপে নিট এবং ওভেন দুই ধরনের কারখানাই আছে বলে জানান শামীম এহসান।

গত বছরের জুলাই মাসে ওভেন থেকে নিটে রূপান্তরিত হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার ইতাল অ্যাডওয়েজ কারখানা। মূল কাঠামো ঠিক রেখে ওভেনের কিছু মেশিনারিজ পরিবর্তন করে নিটের মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এখন পুরোদমে নিট পোশাক উৎপাদন হচ্ছে কারখানাটিতে।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারওয়ার আহম্মেদ বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই ওভেনের রপ্তানি আদেশ খুব কম আসছিল। অথচ নিট পণ্যে রপ্তানি আদেশের কোনো অভাব নেই। পরিস্থিতি বুঝে ওভেন থেকে নিটে রূপান্তর ঘটান তারা।

তিনি বলেন, ‘এখন দাম যা-ই হোক, হাতে প্রচুর অর্ডার।’

এর আগে ১০ বছর ধরে নিট এবং ওভেন পোশাকের রপ্তানি ছিল প্রায় সমান। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও মোট রপ্তানিতে নিটের অবদান ছিল ৪১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ওভেনের ৪২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে নিটের অবদান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ শতাংশ। আর ওভেনের কমে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

রপ্তানি আয়ের গত অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিট হোক, ওভেন হোক আর অন্য কোনো খাত থেকেই হোক না কেন, আমরা যে এই সংকটকালে ১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি, সেটাই বড় কথা। এই কঠিন সময়ে প্রবৃদ্ধি হওয়াটাকেই আমি অনেক বড় অর্জন বলে মনে করি।’

এ বিভাগের আরো খবর