বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কত দিন সচল রাখা যাবে চট্টগ্রাম বন্দর?

  •    
  • ২৬ জুলাই, ২০২১ ০৮:২১

করোনায় ১৪ জনের মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বন্দরে কর্মরত ৭ হাজার কর্মীর মাঝে। পাশাপাশি গতিও কমেছে কাজের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের খাদ্য সরবরাহ এবং জীবন রক্ষাকারী কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বন্দর সচল রাখা জরুরি।

২০২০ সালের এপ্রিলে করোনার ছোবলে গুদামে পরিণত হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর। প্রায় ১১ লাখ বর্গমিটার চত্বরে কোনো জায়গা খালি ছিল না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এবারও সংকট বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী। আক্রান্ত হয়েছেন ৩০০-এর বেশি।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন যে পরিস্থিতি, তাতে বন্দরের কার্যক্রম আরও কিছুদিন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তবে কত দিন এভাবে চলবে সেটিই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘করোনার সংকট মোকাবিলায় সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা বিভিন্ন নিয়মনীতির পরিবর্তন আনছি।

‘তবে প্রতিটি জেটিতে আমাদের জাহাজ রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সক্রিয় রয়েছেন। তারা কাজ করছেন। আমরা শিফটের ব্যবস্থা করেছি। অপারেশন এবং সিকিউরিটির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমরা ব্যবহার করছি। ন্যূনতম জনবল দিয়ে আমরা অফিস চালু রেখেছি।’

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংকট আছে, সংকট থাকবে। কিন্তু তাতে চট্টগ্রাম বন্দর থেমে নেই। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে সাত দিন চট্টগ্রাম বন্দর সচল আছে। জাহাজের আনাগোনা স্বাভাবিক রয়েছে। আশা করি এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানি পণ্যের প্রায় ৮২ শতাংশ এবং রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশই আনা-নেয়া হয়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার এই সময়ে নিত্যপণ্য ও ওষুধের কাঁচামাল আসছে এই বন্দর দিয়ে। ফলে দেশের খাদ্য সরবরাহ এবং জীবন রক্ষাকারী কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ রাখতে বন্দর সচল রাখা সবচেয়ে জরুরি।

বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ভোগপণ্য থেকে শুরু করে ওষুধের কাঁচামাল, পোশাক তৈরির কাঁচামাল সবকিছুই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে। এই বন্দরের বিকল্প নেই। তাই দ্রুত বন্দরের কর্মীদের টিকার আওতায় আনতে হবে। নয়তো বিপর্যয় ঘটতে পারে।

বন্দরের পরিবহন বিভাগের তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৮০০ একক কনটেইনার খালাস হয়। করোনাকালে এখন হচ্ছে গড়ে আড়াই হাজার একক কনটেইনার। আগে একটি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোতে সময় লাগত গড়ে আড়াই থেকে তিন দিন। এখন লাগছে চার থেকে পাঁচ দিন।

বন্দরের একজন পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) নিউজবাংলাকে বলেন, দেশের অর্থনীতির সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর জড়িত বলে যতই দুর্যোগ আসুক, বন্দর সচল থাকে। করোনার ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটছে। তবে করোনার প্রথম ঢেউয়ে বন্দরের কর্মীরা তেমন আতঙ্কিত ছিলেন না। কিন্তু এবার বেশির ভাগই আতঙ্কিত। তারা ভয়ে ভয়ে কাজ করছেন। এ জন্য কাজ কম হচ্ছে।

টিকার আওতায় আনার দাবি

করোনায় ১৪ জনের মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বন্দরে কর্মরত ৭ হাজার কর্মীর মধ্যে। পাশাপাশি গতিও কমেছে কাজের।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) একজন নেতা বলেন, ‘বন্দরে কর্মরত ৭ হাজার কর্মীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা বন্দরের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি। সবাইকে টিকার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি।’

বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস অ্যান্ড টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, বন্দরের মূল জেটি, ইয়ার্ড, অফডক ও বহির্নোঙরে যেসব শ্রমিক-কর্মকর্তা যাতায়াত করেন, তাদের শতভাগ টিকার আওতায় আনতে হবে। যেহেতু তারা প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন, তাই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকা দেয়া সুনিশ্চিত করতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের নিজস্ব শ্রমিকদের পাশাপাশি বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর ও শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরদের অধীন শ্রমিকদের করোনা টিকা নিশ্চিত করতে নিবন্ধনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বুথের ব্যবস্থা করেছে। তারা শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলেই হচ্ছে। নিবন্ধন করে দেয়া হচ্ছে। বন্দর হাসপাতালে সরকারি কোভিড টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে।

মহামরি মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবৃদ্ধি

বৈশ্বিক মহামারি করেনার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২১-২১ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৩ টিইইউ (২০ ফুটের একক) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩০ টিইইউ আমদানি পণ্যের ও ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৬ টিইইউ রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

আগের অর্থবছরে ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৬ টিইইউ আমদানির ও ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৬ টিইইউ রপ্তানি কনটেইনার মিলে মোট ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউস হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল।

বন্দর এবার কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ টন। আগের অর্থবছরে ছিল ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ টন। প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বন্দর জেটি ও বহির্নোঙর মিলে জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে ৪ হাজার ৬২টি। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩ হাজার ৭৬৪টি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘নিয়মিত জাহাজ আসছে। কনটেইনার ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে যা যা পদক্ষেপ নেয়ার দরকার সবকিছু আমরা গ্রহণ করেছি।’

এ বিভাগের আরো খবর