বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রেমিট্যান্সে আরও প্রণোদনার পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক

  •    
  • ২৪ জুলাই, ২০২১ ২১:০৩

মূলত যারা খুব কষ্ট করে কম রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, তাদের সহায়তার জন্য বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার এই প্রস্তাব অনুমোদন করলে কম আয়ের প্রবাসীরা দেশে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে সরকারকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঈদের ছুটির আগে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।

শনিবার নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মূলত যারা খুব কষ্ট করে কম রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, তাদের সহায়তার জন্য এই প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার এই প্রস্তাব অনুমোদন করলে কম আয়ের প্রবাসীরা দেশে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।’

২০১৯-২০ অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার স্বজন ১০২ টাকা পাচ্ছেন। এ হিসাবে কোনো প্রবাসী ৫০০ ডলার দেশে পাঠালে তার স্বজন ৪২ হাজার ৪০০ টাকার (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) সঙ্গে প্রণোদনার ৮৪৮ টাকা (২ শতাংশ) যোগ করে মোট ৪৩ হাজার ২৪৮ টাকা তুলতে পারছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কাজ করছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। ফাইল ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাব অনুমোদন হলে তারা তুলতে পারবেন ৪৩ হাজার ৬৭২ টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কোনো প্রবাসী প্রতি মাসে ৫০০ ডলার পাঠালে তার স্বজন ৪২৪ টাকা বাড়তি প্রণোদনা পাবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩শর বেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে। একেক দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ একের ধরনের ফি বা চার্জ নিয়ে থাকে। এটি সমন্বয় করা কঠিন। তাই প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ মার্কিন ডলার কিংবা এর চেয়ে কম রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের বিদ্যমান ২ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দিলে যারা কম আয় করেন, সেই প্রবাসীদের খুব উপকার হবে।

সেইসঙ্গে প্রবাসীদের হুন্ডিতে নিরুৎসাহিত করতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি বা চার্জ মওকুফ করা প্রয়োজন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, স্বল্প রেমিট্যান্স পাঠানো অভিবাসী কর্মীদের হুন্ডিতে নিরুৎসাহিত করতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি মওকুফ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে উচ্চ আয়ের প্রবাসীদের প্রদত্ত সুযোগের সঙ্গে তা সমন্বয় করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী ১০টি ব্যাংক এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানাধীন ব্যাংকের সঙ্গে সভা করেছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংক অগ্রণী ও রূপালী দুই ঈদ উৎসবে সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে আরও ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিচ্ছে।

এই বাড়তি প্রণোদনা প্রথমে দেয়া শুরু করে অগ্রণী ব্যাংক। গত বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় বাড়তি প্রণোদনা দেয় ব্যাংকটি। এবারও রোজার ঈদের আগে ১ এপ্রিল থেকে আবার সেই বাড়তি প্রণোদনা দেয়া শুরু করে তারা। পরে রূপালী ব্যাংকও গত রোজায় এই উদ্যোগে যুক্ত হয়। ‍দুটি ব্যাংকই কোরবানির ঈদ পর্যন্ত এই সুবিধা দিয়েছে।

তবে প্রণোদনা নিয়ে ভিন্ন কথা বলেছেন অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না। আমাদের একটা বিষয় খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির বৈশ্বিক কোনো কারণ নেই। বেড়েছে দেশীয় কারণে। সেটা হলো অবৈধ চ্যানেল (হুন্ডি) বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। এ কারণে যারা আয় পাঠাচ্ছেন, সবই বৈধ পথে আসছে। প্রকৃতপক্ষে করোনায় আয় আসা কিন্তু কমেছে। কারণ, প্রবাসীদের আয় কমে গেছে।

‘এখন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাঠানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, অনেক শ্রমিক চলে এসেছেন। আবার যাওয়াও কমে গেছে। এভাবে চললে প্রবাসী আয় কমে যেতে শুরু করবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাব অনুমোদন করলে কম আয়ের প্রবাসীরা দেশে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে। ফাইল ছবি

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

বর্তমান বাজারদরে (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রেমিট্যান্সে উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছর। ঈদের আগে নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ১৫ দিনেই (১ থেকে ১৫ জুলাই) ১২৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার ছয়টি কারণ খুঁজে বের করেছে বিশ্বব্যাংক। কারণগুলো হচ্ছে, সঞ্চয় দেশে পাঠানো, বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ, পরিবারের প্রতি সহানুভূতি, নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, কর ছাড় বা আর্থিক প্রণোদনা এবং বড় দেশের প্রণোদনা অর্থ।

গত ১৩ জুলাই একটি মতামত প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, ২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি কমলেও দক্ষিণ এশিয়ায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

এ বিভাগের আরো খবর