হবিগঞ্জে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেকেই কোরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতি বছর মৌসুমি ব্যবসায়ী ও এতিমখানার লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেন। এবার কেউ চামড়া কিনতে যায়নি। আবার কোথাও কোথাও গেলেও চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকার বেশি দিতে চাননি।
চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে প্রশাসনেরও কোনো তৎপরতা নেই বলে তাদের অভিযোগ।
প্রশাসনের দাবি, চামড়া যেনো নষ্ট না হয় এবং ব্যবসায়ীদের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন তদারকিতে ছিল।
এ বছর হবিগঞ্জে কী পরিমাণ পশু কোরবানি হয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন জানান, এ বছর ৪০ হাজার পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ৩০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। বিষয়টি তদারকি করছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক বছর আগেও মাঝারি সাইজের গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সারা বিশ্বে চামড়া চাহিদা বেড়েছে। সেই হিসেবে দাম আরও বাড়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো দাম কমে গেছে।
সুমন আলী খান নামের এক চামড়া ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে জানান, দক্ষ কসাইকে দিয়ে কোরবানি না করালে অনেক সময় চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য সঠিক দাম পাওয়া যায় না। পাশাপাশি ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণেও দাম ওঠে না।
নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা গ্রামের ফরহাদ হোসেন বাবুল বলেন, ‘৭০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে কোরবানি দিয়েছি। এই গরুর চামড়া হাজার টাকার ওপরে যাওয়ার কথা। কিন্তু চামড়া কিনতে কেউই আসেনি। তাই ফেলে দিয়েছি।’
এ বছর সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম বেঁধে দিয়েছে। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ঠিক করা হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা; ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৮ টাকা। কিন্তু কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়নি।
হবিগঞ্জ শহরের কামড়াপুর এলাকার মহসিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতি বছরই গরু কোরবানি দিয়ে চামড়া বিক্রির টাকা অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করে দিই। এ বছর কেউ চামড়া কিনতে আসেনি। পরে একটি এতিমখানায় দিয়ে এসেছি ।’
চামড়া বিক্রির টাকা এতিমখানার আয়ের একটি বড় উৎস হলেও এবার তাদেরও চামড়া নেয়ার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।
চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে দুই শ টাকার বেশি খরচ হয়। অনেক সময় তা এক শ টাকাতেও বিক্রি করা যায় না বলে চামড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ কমেছে।
মোজাহিদ আলম নামে একজন জানান, ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে কেনা গরুর চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকার ওপরে কেউ দেয়নি। বাধ্য হয়ে এই টাকায় বিক্রি করেছেন।
দাম না পাওয়া নিয়ে ঈদুল আজহার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন।
তিনি জানান, তার দেয়া কোরবানির পশুর চামড়া ফ্রিতে নিতে এসেছেন এক ব্যক্তি। ফ্রিতে না দেয়ায় ৫০ টাকা দাম করেছেন। এর বেশি দিতে কোনোভাবেই রাজি হননি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিন্টু চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে আমরা চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে মিটিং করেছি। চামড়া যেনো নষ্ট না হয় বা ন্যায্য দাম দেয়া হয় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘এ ছাড়া বিষয়টি তদারকি করেছেন উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা।’
কী পরিমাণ পশু কোরবানি হয়েছে সেই তথ্য এখনও উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে তার কাছে পৌঁছায়নি বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।