বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি নতুন করে জোরালোভাবে আলোচনায় আসায় এই সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে; দামও বেশ ভালো। গতবারের চেয়ে মণে প্রায় হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। কৃষকরা বাড়তি এ দাম পেয়ে খুশি। তবে ভরা মৌসুমে এই দাম থাকবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রধান বাজারগুলোতে করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করায় রপ্তানিকারকরাও এই খাতটি থেকে গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আনতে নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।
দেশের সব জেলাতেই কম-বেশি পাটের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ হয় ফরিদপুর জেলায়।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হজরত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, জেলায় এবার ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮৪ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে। তার আগের মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে।
গত মৌসুমে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশি জমিতে চাষ করেছেন বলে জানান হজরত আলী।
এই মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্টিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাট ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে তারা কিনছেন। সপ্তাহখানেক আগে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছেন।
‘মাত্র নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। ভরা মৌসুমে দাম কেমন থাকবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে গতবারের চেয়ে বেশি থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’
গতবারের চেয়ে দাম বেশি কেন হবে জানতে চাইলে বাবলু বলেন, ‘রপ্তানি বাজার ভালো। গত অর্থবছরে প্রচুর পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এবারও চাহিদা আছে। তাই দাম বেশিই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।’
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পাটচাষি শুক্কুর মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, এবার পাট উৎপাদনে খরচ বেশি হয়েছে। প্রতি মণ ৩ হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি করতে না পারলে তাদের লোকসান হবে।
গতবার ভরা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। তবে মৌসুম শেষে ডিসেম্বরের দিকে প্রতি মণ পাটের দাম বেড়ে ৬ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মে মাস পর্যন্ত ওই বাড়তি দামে বাজারে পাট বিক্রি হয়।
পাট রপ্তানির পালে হাওয়া
গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ (১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এই রপ্তানি আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
এর আগে এক বছরে এ খাত থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা কখনোই আসেনি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত থেকে ১০২ কোটি (১ দশমিক ০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
ওই একবারই পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল।
গত অর্থবছরে পাটসুতা (জুট ইয়ার্ন) রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ দশমিক ৬১ শতাংশ। কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার; আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি ডলারের। আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাট ও পাটসুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১২ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ।
এ ছাড়া পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের।
পাট এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত
পাট দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশ-বিদেশে পাটের অনেক চাহিদা রয়েছে। একসময় এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। তা থেকে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসায় পাটকে বলা হত ‘সোনালি আঁশ’। কিন্তু কালের আবর্তে তা হারিয়ে যেতে থাকে। দিন যত গড়িয়েছে, পাটের গৌরব তত ম্লান হয়েছে।
প্রায় অর্ধ শতক পর করোনাভাইরাস সংকটকালে যখন দেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছে, তখন পাটে দেখা দিয়েছে আশা। আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেই পাট।
এখন পাটের উৎপাদন বাড়ছে; বাড়ছে রপ্তানি; কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে। পাশাপাশি পাটপণ্যের বহুমুখী উৎপাদনও বাড়ছে।
পাট এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে চামড়া খাতকে পেছনে ফেলে রপ্তানি পণ্য তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে পাট।
২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়জাত পণ্য রপ্তানি করে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আর পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে এসেছে ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। পাট খাত থেকে এসেছে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
গত কয়েক বছর ধরে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলসহ আরও কয়েকটি খাত থেকে বেশি-বিদেশি মুদ্রা আসতে থাকায় মোট রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের অংশ খানিকটা কমেছে।
তিন বছর আগে মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসত পোশাক খাত থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, বর্তমানে দেশে পাটচাষির সংখ্যা ৫০ লাখের মতো। দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) পাট খাতের অবদান প্রায় ০.৩ শতাংশ। কৃষি জিডিপিতে তা ১.৫ শতাংশ।
গত বছর সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার পরও সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার হাতছানি দেখা যাচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকেরা আশার কথা শুনিয়েছেন।
এবার লক্ষ্য ১৪৩ কোটি ডলার
গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার প্রত্যাশায় নতুন অর্থবছরেও পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে বেশি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
গত ৬ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, তাতে ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে ১৪৩ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এবার সাড়ে আট লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবার আট থেকে সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আর এ থেকে কম বেশি ৯০ লাখ বেল পাটের আঁশ উৎপন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশে উৎপাদিত পাটের আঁশের প্রায় ৫১ শতাংশ পাটকলগুলোয় ব্যবহৃত হয়, ৪৪ শতাংশের মতো কাঁচা পাট বিদেশে রপ্তানি হয় এবং মাত্র ৫ শতাংশের মতো লাগে ঘর-গৃহস্থালি আর কুটিরশিল্পের কাজে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে পাট হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। মাঝে তা ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরে নেমে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক আঁশের চাহিদা বাড়ায় ২০১০-১৫ সাল নাগাদ চাষের এলাকা বেড়ে ৭ লাখ হেক্টরে পৌঁছায়। এরপর থেকে তা আরও বাড়ছে।
আগে ১২ লাখ হেক্টর এলাকা থেকে যে পরিমাণ পাট পাওয়া যেত, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এখন ৭-৮ লাখ হেক্টর জমি থেকেই তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
সরকারি হিসাবে পাটচাষির সংখ্যা ৫০ লাখ হলেও কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ পাট চাষ এবং চাষ পরবর্তী বিভিন্ন প্রক্রিয়া, যেমন প্রক্রিয়াজাতকরণ, আঁশ বাঁধাই, গুদামজাতকরণ, পরিবহন/স্থানান্তর ও বিপণনের মতো কাজে যুক্ত।
আঁশ ছাড়ানোর পর পাওয়া পাটকাঠি গ্রামে জ্বালানির প্রধান উৎস; পাটচাষ কমে গেলে পাটকাঠি না পেয়ে বৃক্ষ নিধনের প্রবণতা বাড়তে পারে, যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।
কৃষিবিদরা বলছেন, পাট চাষ কৃষকদের অন্য পেশায় বা অন্য স্থানে পেশার তাগিদে উপার্জনের জন্য স্থানান্তর কমাতেও ভূমিকা রাখে।
বন্ধ পাটকল চালুর উদ্যোগ নেই
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময় ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটটি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়।
১৯৯০ সালের পর বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় দেশের বৃহত্তম আদমজী জুট মিল।
শেষ পর্যন্ত বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও তিনটি নন-জুট কারখানা। সেগুলোই গত বছরের জুলাইয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অল্প সময়ের মধ্যে এই কারখানাগুলো আবার চালু করা হবে।
বন্ধ পাটকল দ্রুততম সময়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বা ইজারায় চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
তিনি বলেন, বিজেএমসির বন্ধ পাটকল দ্রুততম সময়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বা ইজারায় চালু হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালু হলে বন্ধের সময় যেসব শ্রমিক ছিলেন, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবেন। পর্যায়ক্রমে সব শ্রমিককে পুনর্বাসন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘পাট আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বের সেরা মানের পাট উৎপাদন করে। সে জন্য পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার।’
লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৫ পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে গত বছরের ১ জুলাই পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার।
সামনে সুদিন
বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পৃথিবীতে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে সুসময় চলছে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি পরিবেশের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার জন্ম দেওয়ায় এ খাতের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে নতুন করে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমলেও পাটপণ্যের চাহিদা কমেনি; উল্টো বেড়েছে। সে কারণেই গত অর্থবছরে আমরা বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি করেছি। খাদ্যের জন্য ফসল ফলাতেই হবে। আর সেই ফসল প্যাকেট বা বস্তাবন্দি করতে পাটের থলে লাগবে।
‘মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে পরিবেশের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আরও জোরালোভাবে সামনে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় এমনিতেই পলিথিন ব্যবহার কমে আসছিল বেশিরভাগ দেশে। কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে লকডাউনে দূষণ কমে আসার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে।
‘আমার বিশ্বাস, পরিবেশের বিষয়টি আগামীতে আরও জোরালোভাবে সামনে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
বস্তা বা ব্যাগের পাশাপাশি কার্পেটের জন্যও বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কার্পেট তৈরিতে আমাদের জুট ইয়ার্ন ব্যবহৃত হয়। কোভিড-১৯ আতঙ্কে অনেকেই বাসা বা অফিসের কার্পেট পরিবর্তন করবেন। তখন আমাদের পাটের কদর বাড়বে।’
বাংলাদেশের মতো এত ভালো মানের পাট পৃথিবীর কোনো দেশে উৎপন্ন হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এখন সেসব দেশে পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বাড়বে। আমরা সে সুফল পাব বলে আশা করছি।’
সাজ্জাদ হোসাইন জানান, বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। কাঁচা পাটের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের মতো। বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার কমায় পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে চাহিদা আরও বাড়বে। আমরা আমাদের সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারব যদি এ খাতের দিকে একটু নজর দিই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র একটি-দুটি দেশে পাট উৎপাদন হয়। বিশ্ব যত বদলাবে, পাটপণ্যের চাহিদা তত বাড়বে।’
সেই নজর দেওয়ার অংশ হিসেবে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া, প্রয়োজনে প্রণোদনা দেওয়া, বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন বিজেজিইএ চেয়ারম্যান।
সরকার দেশে পাটের ব্যবহার বাড়াতে ২০১০ সালেই আইন করেছে। সে আইন অনুযায়ী ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে সব ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সোহেল।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, শুধু ধান, চাল ও গমে পাটের মোড়ক ব্যবহার হচ্ছে, সেটাও স্বল্প আকারে; রাজধানী ঢাকায়। জেলা-উপজেলায় কেউ মানছে না এই আইন।’
ছয়টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা গেলে দেশি পাট শিল্প আরও বিকশিত হতো এবং কর্মসংস্থানও বাড়ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই ধরনের মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক কৃষি অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘পাট থেকে বেশি অর্থ আসাটা ভালো খবর। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আগামী দিনগুলোতেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
‘বিশ্বব্যাপী যেভাবে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, তাতে পাটের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। এ বিষয়টি অনুধাবন করে আমরা যাতে ধারাবাহিকভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারি, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
‘নানা সংকটের মধ্যে করোনা যেহেতু একটা ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে, সেই সুযোগটা সবাই মিলে কাজে লাগাতে হবে।’