বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘দাম না পাওয়ায়’ চামড়া ভাগাড়ে

  •    
  • ২৪ জুলাই, ২০২১ ১০:২৮

৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্যবাহী ট্রাকচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এমন আরও ৬টি ট্রাকে করে শহরের বর্জ্য ফেলা হয়েছে ভাগাড়ে। এসব গাড়িতে ৫ হাজারের বেশি পশুর চামড়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এগুলো ছিল পচা, দুর্গন্ধময়।’

বগুড়ায় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম না পাওয়ায় অন্তত ১০ হাজার পশুর চামড়া ফেলা হয়েছে ভাগাড়ে। ফেলে দেয়া এই চামড়াগুলো ছাগল এবং ভেড়ার। এর মধ্যে গরুর চামড়ার কিছু অংশবিশেষও চোখে পড়ে।

ঠিক কী পরিমাণ চামড়া ফেলে দেয়া হয়েছে, তার কোনো সুস্পষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি। প্রসেসিংয়ের খরচের চেয়ে চামড়ার দাম কম হওয়ায় এগুলো নষ্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতার দাবি, কেবল নিম্নমানের নষ্ট এবং বাতিল চামড়াই ফেলে দেয়া হয়েছে।

শহরের অদূরে বাঘোপাড়া এলাকায় ময়লার ভাগাড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে কোরবানির পশুর হাজার হাজার চামড়া। ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ট্রাক বোঝাই করে পশুর বর্জ্য এবং চামড়া ফেলা হয় এখানে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্যবাহী ট্রাকচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘চার নম্বর ওয়ার্ডের ঢাকা বেকারি, রানার সিটিসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গাড়িতে তোলা হয় হাজারেরও বেশি ছাগল এবং ভেড়ার চামড়া। এগুলো ছিল পচা, দুর্গন্ধময়।

আসাদুল জানান, তার মতো আরও ৬টি ট্রাকে করে শহরের বর্জ্য ফেলা হয়েছে ভাগাড়ে। এসব গাড়িতে ৫ হাজারের বেশি পশুর চামড়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা অন্তত ১০ হাজার পশুর চামড়া ফেলেছেন বাঘোপাড়ার ওই ভাগাড়ে।

তাদের কথার সত্যতা মেলে ব্যবসায়ী বজলুর রহমানের বক্তব্যে। তিনি জানান, এবার বগুড়ায় গরুর চেয়ে বেশি ছাগল কোরবানি হয়েছে। ১২টি উপজেলায় ২০ হাজারের বেশি ছাগল এবং ভেড়া কোরবানি হয়। এগুলোর অর্ধেক চামড়াই ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাম কম এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় বয়বসায়ীরা কিছু বাছাই করা চামড়া রেখে বাকিগুলো ফেলে দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বিভিন্ন সড়ক এবং দোকান, হাটবাজারের পাশে দেখা যায় ছাগলের চামড়ার স্তূপ। চামড়াগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এর পাশাপাশি গরু-ছাগলের বিভিন্ন পরিত্যক্ত দেহাবশেষের স্তূপও দেখা যায় ময়লা রাখার নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে। বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার গাড়িতে করে পশুর চামড়াসহ বর্জ্যগুলো তুলে নিতে দেখা যায়।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ছাগলের চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ তুলনামূলক বেশি। খুব উন্নত মানের লবণ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ছাগলের একটি চামড়ায় ৩৫-৩৮ টাকার লবণ ছিটাতে হয়। এর সঙ্গে আছে পরিবহন খরচ। কিন্তু চামড়ার দাম ৮ থেকে ৩০ টাকা।’

এ ছাড়া ছাগলের চামড়া ছাড়াতে গিয়ে চাকুর আঘাতে কোথাও ফুটো হয়ে গেলে সেটাকে বাতিল ধরা হয়। এ ধরনের চামড়া ট্যানারি মালিকরা খুব অল্প দামে কেনেন।

চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি বজলুর রহমান বলেন, তারা পাঁচজন ব্যবসায়ী আছেন বগুড়ায়। প্রতিজন ৫-৭ হাজার করে চামড়া কেনেন। এবার চামড়ার দাম এতই কম যে তা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য যে পরিমাণ লবণ দরকার সেটাই কেনা সম্ভব নয়।

চামড়া ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত গরমে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিকভাবে লবণ ছিটাতে না পারার জন্যও কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে।

তিনি আরও জানান, অদক্ষ লোকের মাধ্যমে কোরবানিতে পশুর চামড়া ছোলা হয় বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা কেটে যায়। চামড়ার স্তর না বোঝায় মানও খারাপ হয়। এসব ট্যানারিতে নেয় ৮ টাকায়। কিন্তু একটি চামড়ায় লবণ ছিটাতে হয় ৩৫-৩৮ টাকার।

এদিকে ব্যবসায়ীরা চামড়া না কেনায় বিপাকে পড়েছেন পশু কোরবানিদাতারা। নামমাত্র দামে গরুর চামড়া বিক্রি করলেও ছাগলের চামড়া থেকেছে অবিক্রীত। ক্রেতা না পাওয়ায় তারা পশুর চামড়া সরাসরি দান করে দিয়েছেন স্থানীয় মাদ্রাসা এবং বোর্ডিংয়ে।

বগুড়ার শহরের জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা আরিফ তালুকদার এবার ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কিনেছিলেন। গরুর চামড়া নিয়ে বিকেল পর্যন্ত বসে থেকেও পাননি কোনো ক্রেতার দেখা। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মাদ্রাসায় চামড়াটি দান করেছেন।

একই এলাকার বাসিন্দা আহসান হাবিব সেতু বলেন, ‘কোরবানির জন্য ছাগল (খাসি) কিনছিলাম। তবে ক্রেতা না থাকায় স্থানীয় মাদ্রাসায় চামড়া দান করছি।’

এদিকে সরকারনির্ধারিত দাম অনুযায়ী এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত বছর যা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একই চামড়া ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর যা ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা।

এ ছাড়াও সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। গত বছর যা ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

চামড়ার ক্রেতা-বিক্রেতারা জানালেন, এবার গরুর চামড়া ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকার গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

তারা বলছেন, ২৫-৩০ বর্গফুটের কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নিচের ১৪ থেকে ২০ বর্গফুটের কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় কিনেছেন ব্যবসায়ীরা।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ। তিনি এবার ১০০ গরুর চামড়া ও ১ হাজার ৫০০ খাসির চামড়া কিনেছেন।

তিনি বলেন, ‘সকালের দিকে চামড়ার দাম একটু বেশি থাকলেও, বিকেলে একদমই দাম কমে যায়। আড়তদারদের নির্ধারণ করে দেয়া দামেই চামড়া কিনেছি। তবে আড়তে চামড়ার আমদানি অনেক বেশি থাকায় এখন এসে দাম কম বলা হচ্ছে। তাই দাম নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

এদিকে চামড়ার দাম এবার ভালো ছিল বলছেন আড়তদার ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। অনেকে ক্রেতা না পেয়ে চামড়া দান করেছেন এবং চামড়া ফেলে দিয়েছেন এ বিষয়টি মানতে নারাজ তারা।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চামড়ার আড়তদার আব্দুল মতিন বলেন, যে চামড়াগুলো ফেলে দেয়া হয়েছে সেগুলো মূলত বাতিল চামড়া। নিম্নমানের চামড়াগুলো লবণজাত করার খরচ বেশি এবং ট্যানারিতে এর চাহিদা কম থাকায় সেগুলো ফেলে দেয়া হয়েছে। তার ভাষ্য, শহরের দুএক জায়গায় ৩০-৪০টি ছাগল-ভেড়ার চামড়া ফেলে দেয়া হয়েছে।

এই নেতার দাবি, ট্রাকে করে ভাগাড়ে ফেলা হয়েছে পশুর কান, মাথার চামড়াসহ পরিত্যক্ত চামড়া এবং বর্জ্য।

এ বিভাগের আরো খবর