ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতি পিস চামড়া গুণগতমান ও আকৃতিভেদে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম এর বেশি-কমও হচ্ছে।
রাজধানীতে কাঁচা চামড়া বিক্রির নির্ধারিত স্থান লালবাগের পোস্তা আড়ৎ।
তবে প্রতিবছরের মতো এবারও সিটি করপোরেশনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে শহরের প্রধান সড়কেও বসেছে চামড়া কেনাবেচার অস্থায়ী হাট। আর এসব হাট বসানোর পেছনে আছেন ট্যানারি মালিকরাই।
রাজধানীর সিটি কলেজের উল্টো দিকে সায়েন্সল্যাব ও ল্যাবএইড এলাকা থেকে কলাবাগান মোড় পর্যন্ত বসেছে চামড়া কেনাবেচার অস্থায়ী হাট।
সেখান থেকে কাঁচা চামড়া কিনছেন ছোট-বড় অর্ধশতাধিক ট্যানারি মালিক। মূলত তাদের লবণযুক্ত চামড়া কেনার কথা থাকলেও কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনা ও তুলনামুলক কম দাম পেতে কাঁচা চামড়াও কিনছেন।
বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই অস্থায়ী হাট থেকে ৮০ হাজারের অধিক কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যানারিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সন্ধ্যা নাগাদ এই কেনাবেচা দেড় লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এখানে চামড়া বিক্রির জন্য আসছেন। ওই চামড়া কিনে নিচ্ছেন ট্যানারির মালিকরা।
সরকার লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য বেঁধে দিয়েছে। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দর ঠিক করা হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা; ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৮ টাকা। কিন্তু কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়নি। এই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন কোনো কোনো ক্রেতা।
তবে ট্যানারি মালিকদের প্রস্তাবিত দামেই চামড়া ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেক বিক্রেতা। কারণ, একে তো অস্থায়ী হাটে চামড়া বিক্রির অনুমতি নেই। তার ওপর রয়েছে পুলিশের তৎপরতা। তাই মোটামুটি দামেই চামড়া ছেড়ে দিচ্ছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
অস্থায়ী হাট থেকে হাজি ট্যানারির পক্ষে চামড়া কিনছেন কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, এবার হাজি ট্যানারির ৬০ হাজার পিস লবণযুক্ত ও কাঁচা চামড়া কেনার লক্ষ্য রয়েছে তাদের। লবণযুক্ত চামড়া কেনার সময় এখনো শুরু হয়নি। তাই ভালো মানের চামড়া পেতে নিজস্ব উদ্যোগে তারা এখান থেকে কেনা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেড় হাজার পিস গরুর চামড়া কিনলেও সন্ধ্যা নাগাদ কমপক্ষে ১২ হাজার পিস কেনার লক্ষ্য রয়েছে তাদের।
ইসমাইল জানান, বাজারমূল্য অনুযায়ী গরুর প্রতি পিস চামড়া ৬০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকার মধ্যেই বেশি কেনা হচ্ছে। তবে অধিকতর ভালো হলে ৯০০ টাকায়ও কেনা হচ্ছে।
হেলাল ট্যানারির প্রোপাইটর মো. হেলাল জানান, চামড়ার গুণগত মান ও আকৃতিভেদে সাড়ে ৪০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে কিনছেন তারা। সন্ধ্যা নাগাদ কমপক্ষে ৫ হাজার চামড়া কেনার লক্ষ্য তাদের।
রহমতউল্লাহ নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়ীকে দেখা গেল ছয় পিস চামড়া হেলাল ট্যানারির কাছে বিক্রি করতে। এ জন্য তাকে দাম দেয়া হয়েছে ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়ার গড় দাম পেয়েছেন ৫০০ টাকা করে।
খালেক লেদারের প্রোপাইটর মোহাম্মদ সোহেল জানান, একটি কাঁচা চামড়া কেনার পর লবণযুক্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে লবণের দাম, লেবার খরচ, পরিবহন ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ কমপক্ষে ২০০ টাকা খরচ পড়ে। কাঁচা চামড়া কেনার ক্ষেত্রে এটাকে লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য থেকে সেই অনুপাতে কম দিয়েই কিনতে হচ্ছে।
সোহেল জানালেন, ৬০০ টাকার নিচে তিনি কোনো চামড়া কিনছেন না। তবে মান ভালো হলে ৭০০ টাকার ওপরেও দিতে হচ্ছে বিক্রেতাকে।