ঢাকা ও সাভারের ট্যানারি মালিকদের কাছে দেশের অন্যতম মোকাম কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া ছিল ১৪ কোটি টাকা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাওনা টাকার জন্য দেনায় জর্জরিত এসব ব্যবসায়ীরা দুই সপ্তাহ ধরে ধর্না দিয়েছেন ট্যানারি মালিকদের কাছে। পরে নানা শর্তে পেয়েছেন মাত্র দুই কোটি টাকা।
সেই টাকা আর পরিচিতজনদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের কিছু টাকায় এবার কোরবানির পশুর চামড়া কেনার সম্বল এখানকার ব্যবসায়ীদের। তবে তাদের দাবি, এ টাকা খুবই সামান্য। ঠিকমতো চামড়া কেনা ও তা প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকায় পাঠানোর মতো মূলধন নেই তাদের।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তাদের আরেক চ্যালেঞ্জ পরিবহন। ঈদের একদিন পরই দেশে শুরু হচ্ছে ১৪ দিনের লকডাউন। চামড়াবাহী যান এ লকডাউনের সীমার বাইরে থাকলেও, ফেরার পথে আটকানো হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। সেক্ষেত্রে চামড়া ঠিকমতো পাঠাতেও পারবেন না।
কুষ্টিয়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনিস কোরাইশী জানান, পাওনা ১৪ কোটির মধ্যে মাসুদ মিয়া নামে একজনেরই ৬ কোটি টাকা। বকেয়ার এ টাকার কিছুই পাননি মাসুদ। ট্যানারি মালিকরা বকেয়ার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দিয়েই পরিশোধ হিসেবে ধরার প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীদেরকে। এ শর্ত কেউ মেনেছেন আবার কেউ ফিরে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘ওই প্রস্তাব মেনে নিতে হলে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীদের পুঁজিই হারিয়ে যাবে। পথে বসার উপক্রম হবে। তারপরও অনেকেই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। সব মিলিয়ে ২ কোটি টাকার মতো পেয়েছেন কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা।’
অর্থের অভাবে আগের মতো চামড়া কিনতে পারবেন না জানিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সব মিলিয়ে এ মোকাম এবারও ঝিমিয়ে পড়তে পারে।
কুষ্টিয়া শহরের বারর আলী গেট এলাকায় রয়েছে ৫০ চামড়া ব্যবসায়ীর আড়ত। আনিস কোরাইশী নামে এখানকার একজন বলেন, ‘চামড়া ব্যবসায়ীরা এত ক্ষতির মুখে তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনা বা অনুদান পাননি।
‘আমরা চাইও না। তবে পাওনা টাকা তুলে দিতে পারলে আবার ব্যবসা করতে পারতাম। ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে আরও ভালো হতো।’
চামড়া পরিবহন নিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়ার যান লকডাউনের আওতামুক্ত হলেও হয়রানি হতে পারে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ১৯ ও ২০ জুলাই বৈঠক করেছেন তারা। আশ্বাস পেয়েছেন। তারপরও শঙ্কা যায়নি।
ব্যবসায়ী সাদিকুল হক বলেন, ‘গ্রাম এলাকায় স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনে করেই এসব চামড়া পরিবহন হবে। এদের বৈধ লাইসেন্স নেই। চামড়া আনলোড করে ফেরার পথে সমস্যায় পড়বে বলে আশঙ্কা করছি। একবার কাউকে আটকালে আর যানবাহন পাওয়া যাবে না।’
চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি হাজী মোজাম্মেল হক জানান, মহাজনদের কাছে অনেক টাকা পাওনা রয়েছে। এই টাকা না পেলে চামড়া কিনতে পারবেন না। অনেক দিন বেচাকেনা ভালো নেই।
করোনা মহামারির কারণে গতবারের তুলনায় এবার কোরবানি কম হবে বলে ধরে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজু আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, মানুষ বাড়ির ওপর যাবে, করোনা ছড়াতে পারে। এ ছাড়া আর্থিক সংকট রয়েছে। এ কারণে কোরবানিই কম হবে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনো সংকটের কারণে যদি চামড়া কেনায় ঘাটতি হয়, তাহলে গতবারের মতো গ্রামে গ্রামে চামড়া ফেলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আর ব্যবসায়ীরা কিনতে না পারলে চামড়া সীমান্ত দিয়ে পাচার হতে পারে।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ‘কেউ একটি চামড়াও সীমান্তে নিয়ে যেতে পারবে না। এ ব্যাপারে পুলিশ আগে থেকেই সজাগ আছে।’