দরপতন আর ট্যানারিমালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে থাকায় এবার চামড়া নিয়ে আগ্রহ নেই সিলেটের ব্যবসায়ীদের। ফলে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ পশু কোরবানি। এবার ঈদে সিলেটে প্রায় সাড়ে চার লাখ পশু কোরবানি হবে বলে জানা গেছে। কোরবানির পর প্রতিবছরই পশুর চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এরপর তা প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করেন ঢাকার ট্যানারিগুলোতে।
তবে গত দুই বছর ধরে চামড়ার ব্যাপক দরপতন দেখা দিয়েছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ কারণে এবার চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা। এ ছাড়া ঢাকার ট্যানারিমালিকদের কাছেও বড় অঙ্কের বকেয়া পড়ে আছে তাদের।
সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানকার চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে ট্যানারিমালিকদের কাছে। ফলে নতুন করে লগ্নি করার টাকা নেই। অন্যদিকে চামড়ার মূল্যও এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। এ দুইয়ে মিলে এবার চামড়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েক বছরে ব্যবসায়ীরা ট্যানারিমালিকদের কাছে যে চামড়া বিক্রি করেছেন, তা বাবদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। ট্যানারিমালিকরা ঈদের আগে কিছু টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু বিপুল অঙ্কের টাকা তাদের কাছে বকেয়া রয়ে গেছে।
চামড়ার দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিলেটের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, সরকার এবার ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, ছাগলের চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালেও গরুর চামড়া বর্গফুটপ্রতি ছিল ২০০ টাকার মতো।
চামড়ার এই ভয়াবহ দরপতনের কারণেও ব্যবসায়ীরা এখন চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। গত বছরও দাম না পেয়ে সিলেটের অনেক জায়গায় চামড়া ফেলে দিতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা ও পরিবহন সমস্যার কারণেও এ খাত এখন হুমকির মুখে বলে দাবি তাদের।
সিলেট শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামীম আহমদ জানান, দাম কমে যাওয়া, লকডাউন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পরিবহন সমস্যা, ট্যানারিমালিকদের বকেয়া পরিশোধে গড়িমসিসহ নানা জটিলতার কারণে চামড়া ব্যবসায় আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের।
তিনি বলেন, ট্যানারিমালিকদের কাছে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। কিন্তু নানা অজুহাতে ঢাকার ট্যানারিমালিকরা বকেয়া পরিশোধ করছেন না।
শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি শাহিন আহমদ বলেন, কয়েক বছর ধরেই চামড়া ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। তিন বছর ধরে আড়তদার বকেয়া টাকা দিচ্ছেন না। এবার চামড়ার দাম খুবই কম। চামড়া কিনে লবণজাত করে বিক্রি করে অনেক ক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে। সিলেটের অন্তত ৩০০ চামড়া ব্যবসায়ীর মধ্যে বেশির ভাগই এবার ক্ষতির আশঙ্কায় চামড়া সংগ্রহ না করার কথা ভাবছেন।
এ বছর সিলেটে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ পশু কোরবানি হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুস্তম আলী।
তবে ব্যবসায়ীরা মাত্র এক লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামীম আহমদ।
তিনি বলেন, এবার সিলেটে প্রায় সাড়ে চার লাখ পশু কোরবানি হবে। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না তা এখন বলতে পারছি না।