বহুল সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই নোটিশে ছয়টি প্রশ্ন উল্লেখ করে তার জবাবও চাওয়া হয়েছে।
সোমবার ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ১ আগস্টের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘জবাব পাওয়ার পর আমরা (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
অবিশ্বাস্য ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করে তুমুল আলোচিত ই কমার্স সাইটটি নিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা চলছে। সম্পদের চেয়ে বেশি দায় থাকা, অর্ডার করা পণ্য সরবরাহ করতে না পারাসহ নানা বিষয় নিয়ে এখন তর্ক বিতর্ক তুঙ্গে।
প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে ব্যবসা করে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যাও দেয়নি তারা। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও আগে টাকা নিয়ে মাসের পর মাস আটকে রাখার যে কাজ ইভ্যালি করে আসছে, সেটিকে বাগড়া দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পণ্য সরবরাহের পরই তারা টাকা পাবে।
অগ্রিম টাকা অবশ্য নেয়া যাবে। কিন্তু সেটি জমা থাকবে সরকার নিবন্ধিত তৃতীয় পক্ষের কাছে। পণ্য পেয়ে গ্রাহক সন্তুষ্ট হলেই কেবল সেই টাকা ছাড় করা হবে।
ইভ্যালির অফিস গত ১ জুলাই শাটডাউন শুরুর দিন থেকেই বন্ধ। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধের কারণেই তারা অফিসে যাচ্ছেন না। আর ঈদের পর আটকে থাকা অর্ডার নিয়ে পরিকল্পনা জানাবেন বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল।
তবে তার অবস্থান কোথায় সেটি জানাচ্ছেন না তিনি। তার ফোনও বন্ধ।
- আরও পড়ুন: আগে পণ্য পরে টাকায় আপত্তি নেই ইভ্যালির
রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
তবে এত কিছুর পরেও বিপুল পরিমাণ অর্ডার পাওয়ার দাবি করা হচ্ছে ইভ্যালির পক্ষ থেকে। এক ঘণ্টায় ৫৩ হাজার মোবাইল ফোনের অর্ডার পাওয়ার দাবি করা হয়েছে রোববার।
যে ৬ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে
কারণ দর্শানোর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ছয়টি বিষয় জানাতে বলা হয়েছে বলে জানান তপন কান্তি।
এগুলো হলো
১. গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের নিকট মোট ৪০৭ কোটি টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা চলতি সম্পদ থাকার কারণ কী? বাকি টাকা ইভ্যালির কাছে আছে কি না। থাকলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে, না থাকলে দিতে হবে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা।
২. ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ কত, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিনিময়ে যে পণ্য দেওয়ার কথা, সেগুলোর বর্তমান অবস্থা কী এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
৩. ১৫ জুলাই পর্যন্ত মার্চেন্টদের নিকট দায়ের পরিমাণ কত এবং তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
৪. ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি কী টাকা নিয়েছে, মার্চেন্টদের কত অর্থ পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ।
৫. ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা।
এবং
৬. ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো ব্যবসা পদ্ধতি বা কার্যক্রম ইভ্যালিতে এখনো আছে কি না, থাকলে কী—এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়েও যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করছে না। যেসব মার্চেন্টের কাছ থেকে পণ্য নেওয়া হয়েছিল, তাদেরও অর্থ পরিশোধ করছে না ইভ্যালি। এসব কার্যকলাপের ফলে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা এবং বিক্রেতার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের যে প্রতিবেদন
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৬ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সে অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে ২১৪ কোটি এবং মার্চেন্টের কাছে ১৯০ কোটি টাকার দায় রয়েছে ইভ্যালির। এ দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৫ কোটি টাকা মাত্র চলতি মূলধন। নোটিশে এ তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইভ্যালির বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা এবং বিক্রেতার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোববার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইভ্যালির কাছে তাই আজ ছয়টি বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়েছে। জবাব দিতে হবে ১ আগস্টের মধ্যে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি এবং এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কিত এক বৈঠকে ইভ্যালিকে এই নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় রোববার।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, জননিরাপত্তা বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) এবং ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ইভ্যালির প্রসঙ্গটি সামনে আসার পর এই ধরনের ই কমার্স সাইটগুলোতে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। পরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।