প্রতারণায় অভিযোগ ওঠা ইভ্যালি, আলেশা মার্টসহ দেশের প্রচলিত সকল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের ব্যবসা পরিকল্পনা চাইবে সরকার। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে।
দেশে ই-কমার্স সেক্টরের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এ তথ্য দেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাংলাদেশ সেলের মহাপরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (অইআইটি) এ এইচএম সফীকুজ্জামান, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এর মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, ইলেকট্রানিক কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) জেনারেল সেক্রেটারি ওয়াহেদ আলম তমাল, ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহাব উদ্দিন শিহাব, বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম শাখার মহাব্যবস্থাপক মেজবাউল হক, ইসলাম, ব্যবসা বিষয়ক আইনজীবী তানজিব উল আলম অংশ নেন।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সরকার। কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনসিদ্ধ না হলে সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।’
বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘গত ৪ জুলাই ই-কমার্স ইস্যুতে যে নির্দেশিকাটি প্রকাশ করেছি, তার আলোকে আমরা বিচার বিবেচনা করে দেখব যে, কোন কোন কোম্পানি নির্দেশিকা পরিপালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে ব্যর্থ হবে তাকে প্রথমত: কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হবে।
‘তারপর কয়েক দিন সময় দিয়ে তারা যে মডেল ফলো করছে., এটা ফলো করে কীভাবে বিজনেস সাস্টেইনেবল করবে সেই বিজনেস মডেল তারা দাখিল করবে। সেটা যদি বাংলাদেশে প্রচলিত আইনের সঙ্গে কমপ্লায়েন্ট না হয়, তখন হয়তো বা আমরা তার কোম্পানির বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নিতে যাব, সেটা হয়ত প্রচলিত আইনে আমরা নিতে পারি এমন ব্যবস্থা। আরেকটি হচ্ছে কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যখন ই-কমার্স ব্যবসায়ী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তিনি কিন্তু নিজেও প্রচলিত আইনে মামলা করতে পারেন। তিনি প্রতিকার চাইতে পারেন। সেটিও খোলা থাকছে।’
সচিব জানান, শুধুমাত্র ইভ্যালি নয়, ই-কমার্স প্লাটফর্মে যেকোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা আলোচনা হয়েছে। এটাকে কীভাবে শৃঙ্ক্ষলায় আনা যায় সে আলোচনাও হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘প্রতিদিন লাখ লাখ ট্রানজেকশন হচ্ছে, আমরা চাই যে সেখানকার কমপ্লেইনগুলো যদি একজায়গায় রিসিভ করা যায় এবং সেটা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রত্যেক ই-কমার্স কোম্পানির যে ভোক্তা কমপ্লায়েন্টস অফিসার থাকবেন এবং ই-ক্যাব এর মধ্যে একটা সেন্ট্রাল কমপ্লেইন সিস্টেম আমরা তৈরি করবো। এটা একটু সময় লাগবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ কমপ্লেইনগুলো আমরা অ্যাড্রেস করব।’
সম্প্রতি জারি হওয়া ই-কমার্স নির্দেশিকা সংশোধনেরও ইঙ্গিত দেন তপনকান্তি ঘোষ। বলেন, ‘ই-কমার্স নির্দেশিকা যেটি জারি হয়েছে এবং ডিজিটাল ই-কমার্স নীতিমালাটিও একটু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন গ্রাহকের টাকা দিয়ে আবার গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ কিংবা কারো কাছ থেকে টাকা অগ্রিম নিয়ে সেই টাকা ব্যবসায় খাটিয়ে ব্যবসা পরিচালনা যাতে না করা হয় --সেই ধরনের কিছু পরামর্শ আমরা পেয়েছি। এর আলোকে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং দীর্ঘমেয়াদি আমাদের আইনে কোথাও কোথাও সংশোধনের চেষ্টা করবো বা দীর্ঘমেয়াদি ডিজিটাল কমার্স এর জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি আইন আমাদের লাগবে। এ ধরনের সুপারিশও এসেছে বৈঠকে।’
আরেকটি আলোচনা এসেছে ডিজিটাল ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই নিবন্ধন নিতে হবে উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা রাখবে। যেখান থেকে সংশ্লিষ্টদের ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (ইউবিআইএন) নিতে হবে।