ই-কমার্স সাইট ইভ্যালির রাসেল কি লাপাত্তা? বহুল সমালোচিত এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল এখন জনসমক্ষে আসছেন না।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে ৩৩৯ কোটি টাকা দায়ের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই এটির কার্যক্রমকে ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পাওনাদাররা প্রতিদিন ধানমন্ডির সোবহানবাগ কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু কার্যালয় বন্ধ।
এমডি রাসেল সেখানে আসছেন না প্রায় মাসখানেক ধরে। বন্ধ তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও।
এরই মধ্যে শনিবার ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামিমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
এ পরিস্থিতিতে গ্রাহক ও মার্চেন্টেদের মনে নানা প্রশ্ন। প্রতিষ্ঠানটির এমডি রাসেল কি অন্ধকারে চলে গেছেন? তিনি কি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন? যদি তিনি কোনোভাবে দেশ ছেড়ে চলে যান, তাহলে ইভ্যালির ভবিষ্যত কী হবে? ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনার দায়িত্ব কে নেবে?
মোহাম্মদ রাসেল এখন কোথায়, তা জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তার ব্যক্তিগত ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
শুক্র ও শনিবার সোবহানবাগে ইভ্যালির কার্যালয়ে গিয়ে তার হদিস মেলেনি। ২৭ জুন থেকে কার্যালয় বন্ধ। সেখানে নোটিশে বলা আছে, লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাসা থেকে অফিস করছেন। নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, অফিসের কর্মীরা কম্পিউটার বাসায় নিয়ে গেছেন।
ইভ্যালির হেল্পলাইনে (নম্বর 09638111666) একাধিকবার চেষ্টার পর একবার কলসেন্টারে ঢোকা সম্ভব হলেও সেখানে সাড়ে পাঁচ মিনিটেও কারও সংযোগ দিতে পারেনি হেল্পলাইন। এরপর কলটিও কেটে যায়।
ইভ্যালির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা শবনম ফারিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ‘রাসেল দেশেই আছেন। সস্ত্রীক ঢাকাতেই অবস্থান করছেন।’
শবনম পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কেন তার কি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা?’
তিনি কোথায় অবস্থান করছেন জানতে চাইলে শবনম ফারিয়া জানান, ঢাকায় রয়েছেন, এটা নিশ্চিত। তবে কোথায় অবস্থান করছেন, এ সম্পর্কে তার কাছে তথ্য নেই।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইভ্যালি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘অনেকের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে রাসেল আজ শনিবার রাতে কিংবা রোববার ফেসবুক লাইভে আসতে পারেন।’
ইভ্যালির ব্যাপারে গ্রাহকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ার প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোহাম্মদ রাসেল শুক্রবার রাত ১০টায় তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। যাতে তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছে সময় চান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত ৪ জুলাই চিঠি পাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইভ্যালির গ্রাহক ও মার্চেন্টের ৩৩৯ কোটি টাকার হদিস না থাকার বিষয়ে ৮ জুলাই থেকে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
তবে দুদক সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানে তারা ইভ্যালির এমডি রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামিমা নাসরিন গোপনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। বিষয়টি টের পেয়ে গত ১৫ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আদেশ পেতে আদালত আবেদন জানায়।
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ বৃহস্পতিবার রাসেল এবং শামিমা নাসরিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদেশ দেন।