মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পান নিরাপত্তাকর্মী মাসুদ। এই স্বল্প আয় থেকে কিছু কিছু করে বাঁচিয়ে ২২ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছেন। স্বপ্ন ছিল একটি ভালো স্মার্টফোন কিনবেন।
এক বন্ধুর পরামর্শে ইভ্যালি সাইক্লোন অফার থেকে ২৯ হাজার টাকার মোবাইল ফোন ২২ হাজার টাকায় অর্ডার দেন মাসুদ।
ইভ্যালির ফেসবুক পেজে উল্লেখ ছিল অর্ডার করার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ফোন পাওয়া যাবে। তবে এরই মধ্যে ৬০ কার্যদিবস পার হয়ে গেছে। ফোন হাতে পাননি মাসুদ। নির্ধারিত সময়ে ফোন না পাওয়ার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মাসুদের, কারণ তিনি সোবহানবাগে ইভ্যালির কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী।
প্রতিদিন ভিড় করে অপেক্ষা করা পাওনাদারদের হাত থেকে ইভ্যালি কার্যালয়কে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব পালনকারী মাসুদ নিজেও ইভ্যালির পাওনাদার।
শুক্রবার বিকেলে ইভ্যালির কার্যালয়ের সামনে মাসুদের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। এ সময় মাসুদ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি নিজে এই অফিসে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছি। আমার মোবাইলটা এখনও পাইনি।
‘অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে একটি মোবাইল ফোন অর্ডার দিছিলাম। এর মধ্যে ৬০ দিনের বেশি সময় পার হইছে। আমার মোবাইল পাই নাই। স্বপ্ন ছিল নতুন মোবাইল নিয়ে দেশের বাড়িতে যাব।’
মোবাইলটি ঈদের আগে হাতে পাওয়ার জন্য একাধিকবার ফোনে ইভ্যালির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুখরব পাননি নিরাপত্তা কর্মী মাসুদ।
মাসুদের জন্য আরও বড় দুশ্চিন্তা তার চাকরি।
তিনি জানান, জুন মাসের ১২ হাজার টাকা বেতন এখনও হাতে পাননি। ঈদের আগে এখন বোনাসও নেই। কারণ ২৭ জুন থেকে কর্মকর্তারা হোম অফিস করার কথা বলে অফিস খুলছেন না।
একটু হতাশার শুরে মাসুদ বলেন, ‘ইভ্যালি অফিসে আমি কাজ করছি গত তিন মাস ধরে। করোনার জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বেকার বসে ছিলাম। তাই ভাবলাম, ঢাকাতে এসে চেষ্টা করে কিছু করা যায় কি না। এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে এই চাকরিটা পাইছি। আমি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। দেশের বাড়ি বরিশাল পিরোজপুর।’
এর আগে ইভ্যালি কোনো পণ্য অর্ডার দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, এর আগের দুবার ইভ্যালি থেকে পণ্য অর্ডার দিয়ে কিছু বিলম্বে হলেও ডেলিভারি পেয়েছিলেন তিনি। তবে এবার পাবেন কি না, তিনি নিশ্চিত না। কারণ তার মতোই অনেক গ্রাহক অনলাইনে অর্ডার করে পণ্য পাচ্ছেন না।
নিরাপত্তা কর্মী মাসুদ বলেন, ‘আমার মতো ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাহক প্রত্যেক দিন ভিড় করতেছেন। ইভ্যালির কার্যালয়ে কোনো কর্মকর্তা আসতেছেন না।
নিরাপত্তা কর্মী মাসুদ জানান, সর্বশেষ লকডাউন শুরু হওয়ার পর ২৭ জুন থেকেই কার্যালয় বন্ধ। এর আগে পর্যন্ত কার্যালয় খোলা ছিল। কর্মকর্তারা অফিসে আসতেন। কর্মকর্তারা তাদের ল্যাপটপ নিয়ে চলে গেছেন। ওই নিরাপত্তা কর্মী আরও জানান, বৃহস্পতিবার ইভ্যালি অফিস না খুললেও ওই ভবনে অবস্থিত অন্য দুটি অফিস খোলা ছিল।
এ ব্যাপারে জানতে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সঙ্গে একে একে সম্পর্ক ছিন্ন করছে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। গত দুই দিনে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে, ইভ্যালির দেওয়া ভাউচারে তারা আর পণ্য সরবরাহ করবে না। কারণ, তারা ইভ্যালির কাছ থেকে পণ্যের দাম পাচ্ছে না।
‘রঙ বাংলাদেশ’-এর পর পোশাকের ব্র্যান্ড জেন্টল পার্ক, ট্রেন্ডস, আর্টিসানসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ভাউচারে পণ্য সরবরাহ না করার কথা তাদের গ্রাহকদের জানিয়েছে।
এদিকে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বকেয়া টাকার জন্য ইভ্যালির কার্যালয়ে ভিড় করছে।
এর মধ্যেই ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তদন্ত চালিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি এক টাকা আয় করতে সাড়ে তিন টাকার বেশি ব্যয় করে। তাদের সম্পদের তুলনায় দেনা ছয় গুণ। ফলে তারা এই টাকা আদৌ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
এদিকে ইভ্যালিসহ ১৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে সিআইডি। এর মধ্যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকার ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।