গ্রাহকদের সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছে না দিতে পারছে না বলে ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে প্রধান কার্যালয়। বলা হচ্ছে, লকডাউনের কারণে কর্মীরা বাসা থেকে অফিস করছেন।
গ্রাহকেরা বন্ধ প্রধান কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন। কাস্টমার কেয়ারের হটলাইনে দেয়া ফোন নম্বরে কল দিলেও কেউ কথা বলছে না।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নতুন নতুন পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইভ্যালি তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নতুন করে অনেক পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত ছিল শুক্রবারও।
শুক্রবার সন্ধ্যার পরে তাদের ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা যায়, খুব কম সময়ের ব্যবধানে পণ্য সরবরাহের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে ছবি সহ। পণ্য তালিকায় আছে মেয়েদের হ্যান্ড ব্যাগ, ক্যামেরা, মেয়েদের আইশ্যাডো, পাঞ্জাবি, হেলথ কেয়ার প্যাজেক, ছেলেদের মানিব্যাগ, শ্যাম্পু, ল্যাপটপ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, চকলেট, পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র, রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল, বাচ্চাদের ডায়পার, এয়ার ফ্রেশনার, মোবাইল, এয়ারফোন, রাউটার, অফিসিয়াল চেয়ারসহ আরও অনেক পণ্য।
তবে প্রতিটি পণ্যের বিজ্ঞাপনের নিচে পণ্যের অর্ডার দিয়ে না ডেলিভারির জন্যে অপেক্ষমান বিভিন্ন গ্রাহকের জিজ্ঞাসা। এক্ষেত্রে ইভ্যালি সবাইকেই মোটামুটি একইরকম উত্তর দিয়েছে। কেউ পণ্যের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বলা হয়েছে, সেটির ডেলিভারি প্রক্রিয়াধীন এবং এর জন্য তারা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
ক্যামেরার একটি বিজ্ঞাপনের নিচে অনেকেই কমেন্ট করেছেন, তারা পণ্য পাবেন কিনা এমন সংশয়ে আছে। অনেকেই তাদের অর্ডার দেয়া পণ্যের সিরিয়াল নম্বর উল্লেখ করেছেন। অনেকেই বলছেন, তাদের পণ্য ডেলিভারির সময় (৪৫ দিন) অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। তবে সবক্ষেত্রেই ইভ্যালির একই রকম উত্তর রয়েছে।
এদিকে, প্রতিটি পণ্যের নতুন বিজ্ঞাপনের সাথে তাদের ক্যাপশনে যুক্ত করা হয়েছে, মাত্র ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি! অ্যাডভান্স করতে হবে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ পেমেন্ট। এরপর ‘পেমেন্ট বিফোর ডেলিভারি’ মেথডে অর্থাৎ, কনফারমেশন মেসেজ পেয়ে বাকি টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। এ পেমেন্টের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি হবে।
স্মার্টফোন, বাইক, ল্যাপটপ, এসি, ফ্রিজসহ অনেক প্রোডাক্টে বিপুল ছাড়ের ঘোষণা দিয়েও বিজ্ঞাপন আছে। https://t10.evaly.com.bd/
এদিকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোহাম্মদ রাসেল একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শুক্রবার রাত ১০টায় তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া পোস্টে তিনি গ্রাহকদের কাছে সময় চেয়েছেন।
মোহাম্মদ রাসেল তার পোস্টে বলেন, ‘ইভ্যালির পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মতামত সোশ্যাল মিডিয়াতে পেয়েছি এবং দেখেছি। এতদিন ইভ্যালির যে লস, সেটা শুধুমাত্র বিজনেস ডেভেলপমেন্টের ইনভেস্টমেন্টে গিয়েছে। এখন ইভ্যালির অর্গানিক সেলস অনেক বেড়েছে। অনেকে এই সময় মতামত দিচ্ছেন, বন্ধ করে পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি করা হোক।
‘কিন্ত এখন তো আমরা অগ্রিম টাকা পাই না। গত দুই সপ্তাহ কীভাবে তাহলে পুরাতন অর্ডার থেকে ৪০ কোটি টাকার অধিক ডেলিভারি করা হলো?
‘আমরা বড় বড় সেলারদের ৪ হাজার কোটির বেশি পেমেন্ট দিয়েছি। তারা আমাদের পাশে থাকতে চান। কিন্তু মিডিয়া অথবা সোশ্যাল মিডিয়া যখন ডেসটিনির মতো কোম্পানির সাথে তুলনা করেন, তখন যে কেউ ই ভয় পেয়ে যান। আমরা বিজনেস সবাই বুঝি। এটা একটা চলমান সম্পর্কে থাকার বিষয়। সেলস থাকলে সেলার থাকবে। এবং সেলার থাকলে পণ্য থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ইভ্যালি নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদি। এবং এর চেয়েও বেশি আশাবাদি ইকমার্স নিয়ে। বিদেশি Amazon আসলে আমরা খুশি হব স্বাভাবিক। কিন্ত দেশের কেউ ইকমার্স লিড দিবে, এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত। কারণ আমরা এখন সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল জাতি। আমাদের একটু সময় দিন।’