কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও ঈদের এক দিন পরই আবার শাটডাউন। তার মানে ঈদে বাড়িতে গিয়ে আটকা পড়ার আশঙ্কা। তাতে অবশ্য ঘরমুখী ঈদ যাত্রীর চাপ কমছে না।
এ অবস্থায় ঈদকে সামনে রেখে রেন্ট-এ-কারসহ ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও গাড়ির চাহিদা এখন তুঙ্গে। এমনকি বেশ পুরনো এবং একান্তই প্রয়োজন না হলে গ্যারেজ থেকে বের হয় না এমন গাড়িগুলোও ভাড়ায় খাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটি কম হওয়ায় মানুষ দ্রুত আসা-যাওয়ার জন্য এসব গাড়ির খোঁজ করছেন। বিশেষ করে মহাসড়কে যানজটের খবরে চাহিদা আরও বেড়েছে। কারণ বড় বাসগুলো মহাসড়ক ছেড়ে শর্টকাট ছোট রাস্তায় নামতে পারে না, ফলে দীর্ঘক্ষণ জ্যামে আটকা থাকতে হয়। তুলনামূলক ছোট যান হওয়ায় কার-মাইক্রোবাস বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক হয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে। এতে অনেক যানজট এড়ানো যায়।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সকল বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে। তবে ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আগের কঠোর বিধিনিষেধগুলো আবার কার্যকর হবে।
শিথিল সময়ের দুই দিন পার হতে চলেছে। এরই মধ্যে বাসের টিকিটের চাহিদাও বেড়েছে, যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছে না। ঈদের আগে সময় মাত্র তিন দিন।
যেহেতু ঈদের পরদিনই কর্মস্থলের পথ ধরতে হবে, না হলে বাড়িতে আটকা যাওয়ার ভয় রয়েছে, সে কারণে শেষ মুহূর্তে চাপ বাড়বে ফিরতি পথে বাসের টিকিটেও। সে জটিলতা কাটাতে অনেকে বাড়ি থেকে ফেরার জন্যও অগ্রিম ছোট গাড়ি ভাড়া করে রাখছেন।
চাপ বাড়ার কারণে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এসব গাড়ির ভাড়া। ঢাকা থেকে মাঝারি দূরত্বে যেতে একেকটি গাড়িতে ভাড়া গুণতে হচ্ছে কমপক্ষে ৮-১০ হাজার টাকা। আর একটু দূরে যেমন চট্টগ্রামে যেতে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে, যা স্বাভাবিক সময়ে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা হওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরপুরের জননী রেন্ট-এ-কারের স্বত্তাধিকারী মো. কাউসার বলেন, ‘এখন গাড়ির জন্য কঠিন চাপে আছি। একদম প্যাকড। এমন চাপ যে ভাঙ্গা গাড়িটাও বসে নাই। ভাড়ায় দিতে চচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের দিনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। নোয়া গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রামে এখন ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছি। এ ভাড়া অবশ্যই বেশি, চাপের কারণে। তবে যে চাপ, সে অনুযায়ী গাড়ি দিতে পারছি না।’
ভাড়া বাড়ার পেছনে চাহিদার চাপের পাশাপাশি যানজটও অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যে জ্যাম, কেউ কোথাও যেতে পারছে না। যেসব গাড়ি সকাল ৭টায় পাঠিয়েছি, তা এই বিকেলেও এখন টাঙ্গাইলে বসে আছে। যাবে পাবনা। যাবে কখন, আসবে কখন? খরচ বাড়লে ভাড়া তো বাড়বেই।’
রাজধানীর মধ্য বাড্ডার মাসুদ রেন্ট-এ-কারের মালিক মো. মাসুদ বলেন, ‘গাড়ি কবে লাগবে, তার উপর নির্ভর করে গাড়ি আছে কিনা। তবে ঈদের আগে-পরের তিন দিনের কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে না। পেতে হলেও বেশি ভাড়া দিতে হবে। অন্য কারো কাছ থেকে ম্যানেজ করে দিতে হবে। বিশেষ অনুরোধে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা করছি। তবে, রাস্তায় যে জ্যাম, ঢাকা থেকে বাইর হইলেই ১০ হাজার টাকার কমে ভাড়া হবে না।
মোহাম্মদপুরের ভিআইপি রেন্ট-এ-কারের ম্যানেজার হৃদয় বলেন, ‘এখন তিন ধরনের মানুষের চাপ রয়েছে। যারা বাড়ি যাবে আবার আসবে তারা, যারা ঢাকায় এসে লকডাউনে আটকা পড়েছিল তারা এবং যারা সামনের লকডাউনে বাড়িতেই থাকবে তারা। কারণ লকডাউন বেশি দিনের হলে ঢাকায় থেকে তো কোনো কাজ নেই। তাই চাপ একটু বেশিই বেড়েছে।’
তিনি জানান, অনেকেই চান কোরবানির আগের রাতে ঢাকা ছাড়তে। তাই ওই দিনের জন্য কোনো গাড়ি খালি নেই। সব ভাড়া হয়ে গেছে।