বেনাপোল বন্দর হয়ে স্থলপথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেলেপথেও বেড়েছে ভারত থেকে পণ্য আমদানি।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই বন্দর দিয়ে রেলপথে ভারত থেকে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৯ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। আর এ থেকে রেল ভাড়া বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩১ কোটি ৪০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩০ টাকা।
তার আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) এ পথে ভারত থেকে এক লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৯ টন পণ্য আমদানি হয়েছিল; যা থেকে সরকারের রাজস্ব পেয়েছিল ৮ কোটি ৮৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
এ হিসাবে বেনাপোল দিয়ে রেলপথে পণ্য আমদানি প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।
নিউজবাংলাকে বুধবার বেনাপোল রেল স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারকরা জানান, স্থলপথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের বনগাঁর কালিকতা ট্রাক পার্কিং সিন্ডকেটের কাছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সিরিয়ালের নামে ট্রাক প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করত। করোনার শুরুতে তাদের অত্যাচার আরও বেড়ে যায়। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামও বেড়ে যায় দেশের বাজারে।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গত বছরের ৪ জুন থেকে সরকার রেলে সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়।
সাশ্রয়ী আর নিরাপদ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রেলপথে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দেন। আগে মাসে ৪ থেকে ৫টি ওয়াগানে পণ্য আমদানি হলেও বর্তমানে প্রতিদিন কার্গো রেল, সাইডোর কার্গো রেল এবং প্যার্সেলভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভারতীয় ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেট জিম্মি করে রেখেছিল। এখন ব্যবসায়ীরা অনেকটা সিন্ডিকেট মুক্ত। বর্তমানে রেলপথে সব ধরনের পণ্য আমদানি সচল রয়েছে। এতে গত বছরের তুলনায় এ বছর আমদানি বাড়ার পাশাপাশি রেলখাতে সরকারের চার গুণ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার আজিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, কন্টেইনারের মাধ্যমে আমদানি বাণিজ্য শুরু হওয়ায় বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এতে সময় ও খরচ যেমন কমেছে, তেমনি নিরাপত্তাও বেড়েছে।
‘ভারত থেকে স্থলপথের পাশাপাশি রেলযোগে মালামাল এলে দেশের রেলখাতও উন্নয়ন হবে। রেলে ভারতে পণ্য রপ্তানির বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।’
বেনাপোল স্টেশন মাস্টার শাহিদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে স্থলপথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেলপথেও পণ্য আমদানি হচ্ছে। তবে বন্দরের রেল ইয়ার্ড না থাকায় পণ্য রাখতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বন্দরে দুটি রেল ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। চলছে বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনের সম্প্রসারণ কাজ।
‘এসব কাজ শেষ হলে এ পথে বাণিজ্য আরও বাড়বে। আগে রেলপথে পাথর ও জিপসাম জাতীয় পণ্য আমদানি হলেও বর্তমানে গার্মেন্টস, কেমিক্যাল ও খাদ্যদ্রবসহ সব ধরনের পণ্য আসছে রেলে।’