বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চামড়ার ঋণে ব্যাংকের অনীহা

  •    
  • ১৫ জুলাই, ২০২১ ০০:৫৮

গত বছর এই খাতের জন্য ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি এক লাখ টাকা। এ ঋণের ৪৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

২০২০ সালে চামড়ার ঋণ হিসেবে যত টাকা বরাদ্দ ছিল, বিতরণ হয়েছে তার ১০ ভাগের এক ভাগ মাত্র। আবার ব্যাংক যে টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছির, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ হয়ে গেছে খেলাপি।

এবার চামড়া কিনতে কাগজে কলমে বরাদ্দ দেয়া আছে প্রায় ছয়শ কোটি টাকা। কিন্তু এই অর্থ ঋণ হিসেবে আদৌ বিতরণ হবে, এটা মনে করছেন না ব্যাংকাররাই।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছর থেকে বিনিয়োগ মন্দার মধ্যেও ব্যাংকের এই হাত গুটিয়ে বটে থাকার কারণ, ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা।

ব্যাংকাররা বলছেন, টাকা নিয়ে ট্যানারিগুলোর তা পরিশোধ না করার প্রবণতা রয়েছে। তবে এবার ৩ শতাংশ জমা দিয়ে পুরনো ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকাররা তবু অনেকটাই রক্ষণশীল অবস্থানে আছেন। কারণ, পুনঃতফসিল করেই যে পুরনো ঋণ সবাই ফেরত দেয়, এমন নয়।

প্রতিবছর চামড়া খাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু বিতরণের হার ৯০ কোটি টাকার নিচে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘৫৮৫ কোটি টাকা কোরবানি ঈদের জন্য বরাদ্দ করেছে কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। গত বছর ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও বণ্টন হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। কারণ, যেসব ট্যানারির সক্ষমতা ছিল তারা শুধু তাদেরকেই পুনরায় ঋণ দেয়া হয়েছে। যারা পরিশোধ করতে পারেনি বা অক্ষম তাদেরকে রিসিডিউল করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তারা টাকা পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘এই খাতে আগের যে টাকা বকেয়া আছে সেটা ব্লকে নিয়ে নতুন করে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করা প্রয়োজন। তা না হলে এই খাতের সংকট কাটিয়ে উঠা কঠিন হবে।’

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস্ উল ইসলাম বলেন, ‘কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নতুন নীতিমালার আলোকে ঋণ দেয়া হয়। গত বছর কোরবানির ঈদে ঋণ নিয়ে যারা পরিশোধ করেছে তারা ঋণ পাবে। যদি তারা অর্ধেক ঋণ পরিশোধ করেন তাহলে ঋণও অর্ধেক পাবেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবি ঋণ পরিশোধ না হলেও ওই পরিমাণ ঋণ তাদের দিতে হবে। কারণ গত বছর করোনার কারণে তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয় করে একটা সিদ্ধান্ত দেবে।’

তিনি বলেন, ‘চামড়া ব্যবসায়ীদের কিছু প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ব্যবসায়ী আবেদন করলে অবশ্যই ঋণ পাবে। ছয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আমরা ঋণ দিয়েছি। এ বছর এটা হয়ত আরও বাড়তে পারে বা কমতেও পারে’।

কত আবেদন পড়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে ঋণ শোধ করে এ বছরের জন্য আবেদন করেছেন। চামড়া শিল্প যাতে প্রকৃত দাম পায়, এ খাতে অর্থায়ন যেন সমস্যা না হয় এজন্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো সর্বদা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ঋণের টাকা যেন দ্রুত ছাড় করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক তো ঋণ ছাড় করবে কিন্তু ঋণ পাওয়ার যে যোগ্যতা ব্যবসায়ীরা যদি সেটা অর্জন না করে সেটার দায়িত্ব তো ব্যাংক নেবে না। ঋণ পাওয়ার যোগ্যতার ক্ষেত্রে যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছাড় দিলে ব্যাংকগুলো অবশ্যই ঋণ দেবে।’

চামড়া খাতে এবার বরাদ্দ

ট্যানারি শিল্পের কাঁচামালের মূল যোগান আসে কোরবানির ঈদে। চাহিদার ৭০ ভাগই সংগ্রহ করা হয় এ সময়ে। যার ওপরে ভর করেই সারা বছর সচল থাকে এ শিল্প। চামড়া সংগ্রহে পর্যাপ্ত নগদ অর্থের দরকার হয় ব্যবসায়ীদের। যা পূরণ করে থাকে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ বছর ৯ ব্যাংক মিলে ৫৮৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে।

বরাদ্দের এই টাকা গত বছরের তুলনায় ৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা কম।

গত বছর এই খাতের জন্য ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি এক লাখ টাকা। এ ঋণের ৪৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

অগ্রিম জমা ছাড়াই চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

১৩ জলাই জারিকৃত সার্কুলারে বলা হচ্ছে,আগের বছরের অপরিশোধিত ঋণের ৩ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৩ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করার সুযোগ পাবে চামড়া ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অগ্রিম জমা অর্থাৎ কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট ছাড়াই এবার ঋণ নিতে পারবেন। এ সুবিধা চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পাবেন কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা।

নিয়ম অনুযায়ী যারা আগের বছরের ঋণ পুরোপুরি শোধ করে শুধু তারাই এ ঋণ পায়। এছাড়াও ব্যাংক-গ্রাহক সম্প‌র্কের বিবেচনায় অনেক প্র‌তিষ্ঠান ঋণ দিয়ে থাকে। তবে করোনা মহামারিতে কাঁচামাল সংরক্ষণ ও ন্যায্য মূল্য এ খাতে ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে চামড়া ক্রয়ের সুবিধা‌র্থে বিশেষ সু‌বিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের সু‌যোগ দেয়া হয়েছে।

কোন ব্যাংক কত ঋণ দিবে

চলতি বছর সরকারি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও কৃষি ব্যাংক ৫১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণে বরাদ্দ রেখেছে। গত বছর ব্যাংকগুলো ৫০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল।

সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছে রূপালী ব্যাংক ২২৭ কোটি টাকা। এরপর জনতা ব্যাংক ১৪০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক দেবে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো চামড়া খাতে ৭১ কোটি চার লাখ টাকা ঋণ বিতরণের জন্য বরাদ্দ রেখেছে, যা গত বছর ছিল ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বেশি বরাদ্দ রেখেছে ইসলামী ব্যাংক ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

এছাড়া আল-আরাফাহ ইসলামী ১ কোটি ৯ লাখ, এনসিসি ব্যাংক ৫০ লাখ ও দি সিটি ব্যাংক ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেবে।

গত বছর কত ‍বিতরণ হয়

গত বছর অগ্রণী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। বিপরীতে ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করা হয় ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

রূপালী ব্যাংক গত বছর চামড়া খাতে ঋণ দেয়ার জন্য ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। বিতরণ করা হয় ১১ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে কোনো ঋণই বিতরণ করেনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সবচেয়ে বড় সোনালী ব্যাংক গত বছর ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ঋণ বিতরণ কর ২০ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

বেসিক ব্যাংক তিন কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এবারও ব্যাংকটি চামড়া কিনতে কোনো অর্থই বরাদ্দ রাখেনি।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক গত বছর ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ১২ কোটি ২১ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে।

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক গত বছর ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ঋণ দিয়েছে এক কোটি টাকা।

আর ঢাকা ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখলে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।

এ বিভাগের আরো খবর