দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে চীনের সিনোফার্ম থেকে আরও দেড় কোটি ডোজ টিকা কিনছে সরকার। টিকার দাম প্রকাশ করা না হলেও অর্থমন্ত্রী জানালেন, এর দাম পড়বে আগের চেয়ে কম
বুধবার ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিনও উপস্থিত ছিলেন।
প্রতি ডোজ টিকার দাম কত হবে, এতে সরকারের কত টাকা ব্যয় হবে সে সম্পর্কে কিছুই জানাননি অর্থমন্ত্রী। শুধু বলেছেন, ‘নতুন করে যে টিকা কেনা হবে, তার দাম আগের চেয়ে কম হবে।’
এর আগে ক্রয় কমিটির বৈঠকে, চীনের সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা আমাদানির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল প্রতিডোজ টিকার দাম ১০ ইউএস ডলার।
সে সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার এই তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করার পর বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি চীন। দুই দেশের সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়। কেন টিকার দাম মিডিয়ায় জানানো হলো, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চীনা কূটনৈতিক।
এ ঘটনার জের হিসবে সরকার শাহিদা আকতারকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওএসডি করে সরকার। এরপর থেকে চীনের টিকার বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলছে না সরকারি মহল।
বুধবার ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু তথ্য আছে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে গোপন রাখা হয়। তবে এতটুকু বলতে পারি সিনোফার্ম থেকে নতুন করে যে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনা হবে তার দাম আগের চেয়ে কম হবে।’
এ সময় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছু বিষয় ট্যাকনিক্যাল। এসব বিষয়ে বিশদ আলোচনা না করাই ভালো।’
কবে এই টিকা আসবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।’
বুধবার ক্রয় কমিটিরি বৈঠকে পাঁচটি দরপ্রস্তাবের অনুমোদন দেয় হয়।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার পরিস্থিতির মধ্যে গত ১২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফায় গণটিকাদান কর্মসূচি।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়ার পর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে টিকা ক্রয়ের উদ্যোগ নেয় সরকার।
এর মধ্যে চীনের উৎপাদিত টিকা সিনোফার্মের প্রথম চালান দেশে এসেছে। রাশিয়ার টিকা স্পুনিক ভি টিকার বড় চালান চলতি মাসেই দেশে আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়।
করোনার প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। দেশে করোনা প্রতিরোধে গণটিকা দেয়া শুরু ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। বাংলাদেশ প্রথমে করোনার অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা ব্যবহারের পক্ষে ছিল।
এজন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তিও করে। প্রতি মাসে আসার কথা ছিল ৫০ লাখ ডোজ টিকা। কিন্তু দুই কিস্তিতে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর পর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় সিরাম আর কোনো টিকা পাঠাতে পারেনি। কেনা টিকার বাইরে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে ভারত।
টিকা সংকটের কারণ দেখিয়ে গত ৫ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমন অবস্থায় টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে চীন থেকে ৪ থেকে ৫ কোটি টিকা কেনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি দুটি দেশের টিকা দেশে উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া, ন্যায্যতার ভিত্তিতে করোনার টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকেও আসার কথা ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ টিকা। এই উৎস থেকে ইতোমধ্যে দুই চালানে ফাইজার ও মডার্না থেকে ২৬ লাখ টিকা এসেছে। ফাইজারের টিকা রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে শুধু প্রবাসীদের দেয়া হচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে মডার্না টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে টিকার সমস্যা কেটে গেছে। এরই মধ্যে দেশে ৪৬ লাখ টিকা এসেছে। আপনারা শুনে আনন্দিত হবেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি আওতায় আরও ৬০ লাখ টিকা দেয়া জন্য আমাদের কাছে চিঠি এসেছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এই টিকা দেশে আসবে।’