গত এক বছরে বিমা খাতের শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার পর বারবার যে কথাটি বলা হয়েছে, সেটি হলো এই খাতের পরিশোধিত মূলধন কম। শেয়ারসংখ্যা কম হওয়ায় আগ্রহ বেশি থাকায় দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
অন্যদিকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আয় করা ব্যাংক খাতে চলতি বছর লভ্যাংশও পাওয়া গেছে আশাতীত। বেশির ভাগ ব্যাংক যে পরিমাণ লভ্যাংশ দিয়েছে, তাতে ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন যে পরিমাণ মুনাফা পাওয়া যায়, তার চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় ব্যাংকের শেয়ার কিনে রাখলেই।
তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছর ধরে এগুলোর বদলে অন্য একটি উপাদানের খোঁজ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেটি হলো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বা পেইডআপ ক্যাপিটাল কত।
এই মূলধন কম হলে শেয়ারসংখ্যা থাকে কম। আর এই ধরনের প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারদর নিয়মিত লভ্যাংশ দিয়ে আসা মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।
প্রায়ই একটি কথা শোনা যায় ‘লো পেইডের’ খেলা হবে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির আয়, সম্পদ, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, অর্থপ্রবাহ, লভ্যাংশের ইতিহাস, আয়ের বিপরীতে লভ্যাংশসহ নানা বিষয় খোঁজ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে ২০১০ সালে ধসের পর পুঁজিবাজারে কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির প্রতি অস্বাভাবিক ঝোঁক তৈরি হয়। শেয়ারসংখ্যা কম বলে দাম বাড়ানো সহজ হয়। কয়েকজন মিলে শেয়ার কিনে দাম আকাশচুম্বী করে পরে বিক্রি করে বের হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
দাম যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, তখন বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে সময়মতো বিক্রি করতে না পারলে পরে বিপুল পরিমাণ লোকসান দিতে হয়।
যেমন স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ারদর একপর্যায়ে ৭৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা ২০০ টাকার আশপাশে, সিভিও পেট্রাক্যামিকেলের শেয়ার একপর্যায়ে ৯০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা ১০০ টাকার আশপাশে, বিডিঅটোকারের শেয়ারদর একপর্যায়ে ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা ১০০ টাকার আশপাশে।
সম্প্রতি পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে ওঠার এই প্রবণতা আবার দেখা যাচ্ছে। এক দশক পর পুঁজিবাজার নিয়ে নতুন আশাবাদের মধ্যে পুরোনো এই সমস্যা আবার ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্লেষকদের।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে প্রথম আলোচনা হচ্ছে কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা কত। তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা কম, সেসব কোম্পানির শেয়ারদর দ্রুত বাড়বে এমন একটি ধারণাও আছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লো পেইডআপ বা স্বল্প মূলধনি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলেই যে মুনাফা পাওয়া যাবে, সেটি ভুল ধারণা। অনেক লো পেইডআপ কোম্পানির উৎপাদন নেই, বন্ধ। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে একবার মুনাফা পাওয়া গেলেও বিনিয়োগ ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিএসইসি থেকে ইনভেস্টর লিটারেচার প্রোগ্রাম চালু আছে। বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল যাচাইবাছাই করতে পারবে। কখন কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে, কখন করতে হবে না, সে বিষয়গুলোকেও শেখানো হয়।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্টের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আলাদা আগ্রহ থাকে। তাদের ধারণা কম শেয়ার হওয়ায় দ্রুত মুনাফা পাওয়া সম্ভব।’
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমন কোনো কোম্পানি নেই যারা বছর শেষে শেয়ারধারীদের অনেক ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। তাদের বেশির ভাগই দুর্বল কোম্পানি। ফলে এসব কোম্পানি থেকে ট্রেডিং ভিত্তিতে বা লেনদেন করে মুনাফা পাওয়া সম্ভব হলেও দীর্ঘ মেয়াদে কোনো সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।
পরিশোধিত মূলধন কম হলেই দাম বেশি!
প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার নিচে।
এ খাতের সবচেয়ে কম পরিশোধিত মূলধন রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, যার পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২ কোটি টাকা, শেয়ারসংখ্যা ২০ লাখ।
এই কোম্পানির আয়, লভ্যাংশে ইতিহাস, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বিবেচনা করলে যে বাজারদর, সেটি অবিশ্বাস্য মনে হবে।
কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৬২০ টাকা। সোমবার লেনদেন হয়েছে ৯৫১ টাকা ৩০ পয়সায়।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ৮ পয়সা। গত বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ৩২ টাকার বেশি। চলতি বছর তিন প্রান্তিকে লোকসান ১৫ টাকা ৫১ পয়সা।
আজিজ পাইপের পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার কিছু বেশি। শেয়ার আছে ৫৩ লাখ ৪৭ হাজার ১২৫টি। ২০২০ সালের জন্য কোম্পানিটি তার শেয়ারধারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর গত এক বছরে সর্বোচ্চ উঠেছে ৮ সেপ্টেম্বর ১৩৭ টাকা। বুধবার হাতবদল হয়েছে ৯৯ টাকা ৬০ পয়সা।
এই কোম্পানিটি গত ৫ বছরের কখনও শেয়ারপ্রতি ১ টাকা আয় করতে পারেনি। গত বছর শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে।
চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি ৪৭ পয়সা লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি কোনো সম্পদমূল্য নেই, উল্টো দায় আছে ১৪ টাকা ২২ পয়সা।
৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি বাংলাদেশ ল্যাম্পস লিমিটেড। জুন ক্লোজিংয়ের এই কোম্পানিটি ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের ১ টাকা করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ছিল ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ২২০ টাকা ৩০ পয়সা। বুধবার লেনদেন হয়েছে ১৭৯ টাকা ১০ পয়সায়।
২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ। কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৩১ আগস্ট ৯৫৬ টাকা ৯০ টাকা। বুধবার লেনদেন হয়েছে ৬২৪ টাকা ৮০ পয়সায়।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১৪ টাকা ২৮ পয়সা। বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে আয় মাত্র দেড় টাকা। গত বছর লভ্যাংশ দিয়েছে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা আর ১০ শতাংশ বোনাস।
এ খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ অটোকারস লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। জুন ক্লোজিংয়ের এই কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ১৭৯ টাকা ৯০ পয়সা। বুধবার শেয়ারপ্রতি দর ছিল ১৩৬ টাকা ২০ পয়সা।
বছর কয়েক আগে কোম্পানিটি লেনদেন হতো ২ টাকায়। একপর্যায়ে দাম ৫০০ টাকাও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য আছে ৬ টাকা ৭৯ পয়সা। গত বছর শেয়ারপ্রতি লভ্যাংশ দিয়েছে ৩০ পয়সা। চলতি বছর দুই প্রান্তিক শেষে আয় মাত্রা ২৫ পয়সা।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত
এ খাতের বেশির ভাগ কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ এক কোটি টাকার কম। এর মধ্যে আছে এপেক্স ফুড লিমিটেডের ৫ কোটি ৭ লাখ টাকা।
২০১৫ সাল থেকে কোম্পানিটি কোনো বছর শেয়ারপ্রতি ২ টাকার বেশি লভ্যাংশ নিতে পারেনি। গত বছর দিয়েছে দেড় টাকা।
চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২৩ পয়সা। আর বুধবার দাম ছিল ১৩৭ টাকা ৫০ পয়সা।
বঙ্গজ লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সা আয় ২১ টাকা ২৯ পয়সা সম্পদমূল্যের কোম্পানিটির শেয়ারের সবশেষ দাম ১২৫ টাকা।
গত বছর কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে।
জেমিনি সি ফুডের শেয়ারসংখ্যা ৪৬ লাখ ৯১ হাজার। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২১ পয়সা। গত বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ৯ টাকা ৮৩ পয়সা। চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে লোকসান দিয়েছে ৬ টাকা ২৩ পয়সা।
এমন একটি কোম্পানির শেয়ারদর বুধবার দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকা ৫০ পয়সা।
৬৬ লাখ শেয়ারের ন্যাশনাল টি কোম্পানি গত ৭ বছরে কখনও শেয়ারপ্রতি ৩ টাকার বেশি লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিক শেষে তাদের শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৯১ পয়সা।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১১৬ টাকা ৯০ পয়সা। আর সর্বশেষ দাম ৫৪০ টাকা ৭০ পয়সা।
জিলবাংলা সুগার মিলসের শেয়ারসংখ্যা ৬০ লাখ, ইতিহাসে কখনও লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটি চলতি বছর ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি ৪৭ টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। শেয়ারপ্রতি কোনো সম্পদ নেই, উল্টো দায় আছে ৭০১ টাকা ৪৬ পয়সা। কিন্তু দাম ১৩২ টাকা ২০ পয়সা।
একই অবস্থা শ্যামপুর সুগারের। চলতি বছর তিন প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি ৭৭ টাকা ৭০ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দায় ৯৮৯ টাকা ৩৭ পয়সা। কিন্তু দাম ৬৩ টাকা।
এ খাতের সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ৫৪০ কোটি টাকা। প্রতিবছর ব্যাপক লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটির শেয়ারদর গত পাঁচ মাসে একই জায়গায় পড়ে আছে। ৪ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৫৫৬ টাকা ৮০ পয়সা। আর বুধবার শেয়ারপ্রতি দর ছিল ৫৪০ টাকা ৭০ পয়সা।
রসায়ন ও ওষুধ খাত
এমবি ফার্মা গত ৬ বছরে কখনও শেয়ারপ্রতি ৩ টাকার বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
চলতি বছর তিন প্রান্তিক শেষে আয় করেছে ২ টাকা ৩৮ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য আছে ২৪ টাকা ৯ পয়সা। বুধবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪১৬ টাকা ৩০ পয়সা।
কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ২৪ লাখ।
রেকিড বেনকিউজারের শেয়ারসংখ্যা ৪৭ লাখ ২৫ হাজার। ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ১৪০ টাকা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১৭০ টাকা ৯৫ পয়সা।
বুধবার শেয়ারপ্রতি দর ছিল ৪ হাজার ৪৫৫ টাকা।
ফার্মা এইডের শেয়ারসংখ্যা ৩১ লাখ ২০ হাজার। সব ৫ বছরে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিয়েছে শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ৮২ টাকা ৫৫ পয়সা। আর দাম ৪১৯ টাকা ৯০ পয়সা।
১৫ লাখ ১ হাজার ৯২০টি শেয়ারের কোম্পানি লিব্রা ইনফিউশন ২০১৯ সালের পর আয় ব্যয়ের কোনো হিসাব জমা দেয়নি।
সবশেষ যখন হিসাব দিয়েছিল, সে বছর শেয়ারপ্রতি আয় করে ১ টাকা টাকা ৫ পয়সা। বুধবার এই কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৫৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। অবশ্য এই কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য অনেক, ১ হাজার ২৬৯ টাকা।
৭৭ লাখ শেয়ারের ইমাম বাটন সব শেষ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০১০ সালে। এই কোম্পানিটির শেয়ারদর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৫টি ব্যাংকের চেয়ে বেশি।
চলতি বছরও তিন প্রান্তিকে ৫১ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ৫ টাকা ৮১ পয়সা। আর বুধবার দাম ছিল ২৭ টাকা ৫০ পয়সা।
পাট খাত
শেয়ারপ্রতি ১৪৭ টাকা দায় নিয়ে ধুঁকতে থাকা জুট স্পিনার্স কখনও লভ্যাংশ দিয়েছে, এমন ইতিহাস ডিএসইর ওয়েবসাইটে নেই।
চলতি বছর তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৩৩ টাকা ৮৩ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির শেয়ারদর ১২২ টাকা ১০ পয়সা। গত এক বছরে এই দর ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
এই কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ১৭ লাখ।
২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৬ টাকা ২০ পয়সা লোকসানের হিসাব দেয়ার পর অন্য দুই প্রান্তিকের হিসাব এখনও দেয়নি নর্দার্ন জুট।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ৮১ টাকা ৬৬ পয়সা। গত বছর লভ্যাংশ দিয়েছে ৫০ পয়সা।
বুধবার লেনদেন শেষে দাম ২৯১ টাকা ৩০ পয়সা। তবে এটিই সর্বোচ্চ দাম নয়। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫২৯ টাকা ৯০ পয়সা, আর দুই বছরে সর্বোচ্চ দাম ছিল ১ হাজার ২৬৮ টাকা ৪০ পয়সা।
এর কারণ সেই কম পেইডআপ ক্যাপিটাল। এর শেয়ারসংখ্যা ২১ লাখ ৪২ হাজার।
২০১৫ সাল থেকে শেয়ারপ্রতি সর্বোচ্চ ১ টাকা লভ্যাংশ দেয়া সোনালী আঁশ চলতি বছর ৯ মাসে আয় করেছে ৭৫ পয়সা। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২২৫ টাকার কিছুটা বেশি।
বুধবার কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৪৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এক বছরে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭১১ টাকা।
কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ২৭ লাখ ১২ হাজার।
অন্যান্য খাত
২০০৯ সাল থেকে কখনও ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে না পারা স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ারপ্রতি সম্পদ ৯ টাকা ৫৬ পয়সা।
গত ৫ বছরে শেয়ারপ্রতি সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫৮ পয়সা আয় করেছে ২০১৮ সালে। গত বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ৬ টাকা ৩২ পয়সা। চলতি বছর তিন প্রান্তিক শেষে লোকসান হয়েছে ৬৪ পয়সা।
বুধবার কোম্পানিটির শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ২০৮ টাকা ৮০ পয়সা। তবে গত দুই বছরে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৪০ টাকার বেশি।
কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ৬৫ লাখ। এটিই এই কোম্পানিটির প্রতি মাঝেমধ্যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট হওয়ার কারণ।
কখনও লভ্যাংশ না দেয়া বস্ত্র খাতের দুলামিয়া কটনের শেয়ারপ্রতি কোনো সম্পদমূল্য নেই, উল্টো দায় আছে ৩৬ টাকা ২৫ পয়সা। ২০১৬ সাল থেকে সবচেয়ে ভালো করেছে যে বছর, সে বছরও শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ১ টাকা ২৮ পয়সা। চলতি বছর ৯ মাসে লোকসান ৪৭ পয়সা।
এই কোম্পানিটির শেয়ারদর এই খাতের সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানির একটি স্কয়ার টেক্সটাইলের চেয়ে বেশি।
বুধবার স্কয়ারের শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা ৭০ পয়সা আর দুলামিয়ার ৪৮ টাকা ৩০ পয়সা।
এর কারণ লুকিয়ে আছে সেই শেয়ারসংখ্যার ‘মাহাত্ম্যে’।
দুলামিয়ার শেয়ারসংখ্যা ৭৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০টি। আর স্কয়ারের ১৯ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজারটি।
শেয়ারপ্রতি ২০ টাকা ১ পয়সা সম্পদমূল্যের দেশ গার্মেন্টস ২০১৬ সালে ৩০ শতাংশ আর পরের বছর ১৮ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার পর দুই বছর ১০ শতাংশ বোনাস আর ২০২০ সালে ৩ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে।
চলতি বছর তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ২৬ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির দাম বুধবার ছিল ১৭৩ টাকা ৯০ পয়সা।
কারণ, এর শেয়ারসংখ্যা। সব মিলিয়ে শেয়ার ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৬টি।
৩৮ টাকা ৮৫ পয়সা সম্পদমূল্য আর চলতি বছর তিন প্রান্তিকে ১ টাকা ৮৪ পয়সা আয় নিয়ে রহিম টেক্সটাইলের দাম বুধবার দাঁড়ায় ২২৮ টাকা ৬০ পয়সা।
কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮৩টি।
তিন বছরে শেয়ারসংখ্যা ২৩ গুণ করে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হওয়া স্টাইলক্রাফট চলতি বছর তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৫৬ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২৯ টাকা ৯৬ পয়সা। তবে ২ বছরে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯১৯ টাকার বেশি।
কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫০টি।
জ্বালানি খাতে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ২০২৬ সাল থেকে শেয়ারপ্রতি সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিয়েছে ১০ টাকা। আর মেঘনা পেট্রোলিয়াম গত বছর দিয়েছে ১৫ টাকা।
লুব্রিকেন্টের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১৭৮ টাকার কিছুটা বেশি, আর মেঘনার ১৪৮ টাকার কিছুটা বেশি।
কিন্তু দুই কোম্পানির শেয়ারদরে আকাশপাতাল পার্থক্য। বুধবার মেঘনার শেয়ার বিক্রি হয়েছে ১৮৬ টাকায় আর লুব্রিকেন্টের ১ হাজার ৪১৪ টাকা ৭০ পয়সায়।
কেন? এই কারণটা লুকিয়ে আছে সেই শেয়ারসংখ্যার হিসাবে। মেঘনার শেয়ারসংখ্যা ১০ কোটি ৮২ লাখ ১৬ হাজার ১০৮টি, আর লুব্রিকেন্টের ৯ লাখ ৯৪ হাজার।
এই খাতের লোকসানি কোম্পানি সিভিও পেট্রক্যামিকেলের দাম ১২০ টাকা ৪০ পয়সা। তবে এককালে সেটি ৯০০ টাকাতেও উঠেছিল।
আর শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তিক পাওয়ার গ্রিডের শেয়ারদর ৪৯ টাকা ৩০ পয়সা।
গত বছর লোকসানের কারণে লভ্যাংশ না দেয়া সিভিও গত ৪ বছরে শেয়ারপ্রতি সর্বোচ্চ আয় করেছে ২৬ পয়সা আর চলতি বছর তিন প্রান্তিকে লোকসান দিয়েছে ১ টাকা ৯৭ পয়সা। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য আছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা।
অন্যদিকে শেয়ারপ্রতি ১১০ টাকার বেশি সম্পদমূল্যের পাওয়ার গ্রিড গত ৪ বছরে শেয়ারপ্রতি সর্বনিম্ন আয় করেছে ৪ টাকা ৪৩ পয়সা।
দুই কোম্পানির শেয়ারদরে তাহলে এমন ব্যবধান কেন? জবাবটা সম্ভবত শেয়ারসংখ্যায়।
পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার সংখ্যা ৭১ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১টি আর সিভিওর ২ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজারটি।
লোকসানের কারণে কখনও লভ্যাংশ দিতে না পারা সাভার রিফ্রাকটরিজের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য আছে ৬ টাকা ২৮ পয়সা। কিন্তু এর শেয়ারদর আকাশচুম্বী।
বুধবার দাম ছিল ১৯৯ টাকা ৮০ পয়সা। তবে গত এক বছরে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৫০ টাকার বেশি।
কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ হওয়া ছাড়া আর কোনো কারণ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডেও একই চিত্র
পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য আছে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা। বুধবার ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
অন্যদিকে ইউনিটপ্রতি ১৪ টাকা ৩৪ পয়সা সম্পদমূল্যের প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ছিল ২০ টাকা ২০ পয়সা।
এর কারণ সেই একই। প্রথম ফান্ডের ইউনিটসংখ্যা ২৯ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার ২৭টি। অন্যদিকে দ্বিতীয়টির ইউনিট সংখ্যা ২ কোটি।