বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করপোরেট কর কমালেই কি বিনিয়োগ বাড়বে

  •    
  • ১২ জুলাই, ২০২১ ০৮:৪৪

পরিসংখ্যান বলে, করপোরেট কর ক্রমাগত কমানো হলেও কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ একটি জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা বলেছেন, করহার কমলেই বিনিয়োগ বাড়বে, এটা জোর দিয়ে বলা যায় না। এর সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বাণিজ্যনীতি, শ্রমবাজারসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি জড়িত।

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ জোগাতে এবারের বাজেটে কমানো হয়েছে করপোরেট কর, যা কোম্পানিগুলো বার্ষিক মুনাফার ওপর দিয়ে থাকে।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ। অপরদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২২ শতাংশ।

গত পাঁচ অর্থবছর ধরেই এই কর ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা হচ্ছে, যা একসময় ৪০ শতাংশের বেশি ছিল। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরেও এই করহার কমানো হয়েছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার যে উদ্দেশ্যে করপোরেট করহার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনছে, সেই লক্ষ্য কী পূরণ হচ্ছে? বিনিয়োগ কী বাড়ছে?

নতুন বাজেটে করপোরেট কর কমানোর যুক্তি হিসেবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘করপোরেট হার কমানোর ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে।’

দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা বলেছেন, করহার কমলেই বিনিয়োগ বাড়বে, এটা জোর দিয়ে বলা যায় না। এর সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, আমদানি-রপ্তানি নীতি, বাণিজ্য নীতি, শ্রমবাজারসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি জড়িত।

তাদের মতে, করহার কম হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। কারণ এতে করে তাদের মুনাফা বাড়ে এবং তারা মুনাফার একটি অংশ দেশে ফেরত নিতে পারেন বা পুনরায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন।

তবে পরিসংখ্যান বলে করপোরেট কর ক্রমাগত কমানো হলেও গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ একটি জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। এটা জিডিপির ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

করহার কমানো, কর প্রণোদনা দেয়া, ঋণের সুদহার কমানো, আইনকানুন পরিবর্তনসহ নানা পদক্ষেপ বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে পারছে না।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, উচ্চ ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির কমপক্ষে ৩০ শতাংশ হওয়া উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি আছে।

এমন বাস্তবতায় সরকারি বিনিয়োগ অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার।

পাঁচ বছর আগে এডিপির আকার ছিল জিডিপির ৪ শতাংশ। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে খরা কাটিয়ে উঠতে সরকারি বিনিয়োগে জোর দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর বাজেটে এডিপির আকার বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে জিডিপির অনুপাতে এডিপির আকার ৬ শতাংশের বেশি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোপেরেট কর কমালে বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির এটিই একমাত্র পথ। এর সঙ্গে অর্থনীতির অন্যান্য সূচক ভালো হতে হবে। তবে বিদেশিরা করপোরেট কর দেখার পর বিনিয়োগে এগিয়ে আসে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ৩০ শতাংশ করহার এখনও বেশি। বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এটি সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা উচিত। তা হলে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে।’

বাংলাদেশে কর কাঠামোয় কিছু সমস্যা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে কার্যকর করভার অনেক বেশি। এটা ৩০ শতাংশের উপরে। এত বেশি করহারের কারণে ফাঁকি ও অর্থপাচারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।’

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ও বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘ট্যাক্স রেট কত, তা দেখে বিদেশিরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সে জন্য করপোরেট করহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তালিতাভুক্ত এবং তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে করহারের পার্থক্য কমপক্ষে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলে বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যায়, যা এখন আছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিনিয়োগে বাধা অনিশ্চয়তা

বর্তমানে প্রণোদনার বাইরে ব্যাংকগুলোর তেমন ঋণ বিতরণ নেই। কারণ ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। তারা বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশের অপেক্ষায় আছেন।

বিনিয়োগে সমস্যাটা এখন কোথায়, এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্পোদ্যোক্তা ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘অনিশ্চয়তাই বড় বাধা। করোনার কারণে সারা বিশ্বে এখন টালমাটাল চলছে। এ অবস্থায় উদ্যোক্তারা আস্থাহীনতায় ভুগছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা নেই। প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা করা।’

ব্যাংকাররা বলেন, সারা বিশ্বে চাহিদা না বাড়লে পরিস্থিতি ঠিক হবে না। চাহিদা বাড়লেই কেবল নতুন প্রকল্প তৈরি হবে; বাড়বে ঋণ বিতরণ।

এ বিভাগের আরো খবর