দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য আরও একটি জেটি প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই নতুন জেটিতে জাহাজ ভেড়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার আতাউল হাকিম সিদ্দিকী শনিবার বিকেলে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘৩০০ মিটার দীর্ঘ নতুন জেটির ১৫০ মিটারের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানেই আমরা জাহাজ ভেড়াতে পারব। আগামী ১৭ জুলাই জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর প্রস্তুতি রয়েছে। জাহাজটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে আসবে।’
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মাতারবাড়ী বন্দরে প্রথম প্রবেশ করে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। এর ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা) ছিল সাড়ে পাঁচ মিটার। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে মাতারবাড়ি চ্যানেল। কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত চ্যানেলে এত দিন জেটি ছিল একটি। সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে ভিড়তে পারত একটি জাহাজ।
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে প্রস্তুত হয় ২৫০ মিটার প্রস্থ, ১৮ মিটার গভীরতা এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম চ্যানেল। মূলত মাতারবাড়ীতে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মাণসামগ্রী আনতে এই চ্যানেল প্রস্তুত করা হয়।
পরে চ্যানেলটিকে সমুদ্র বন্দরের রূপ দিতে কাজ শুরু করে সরকার। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এই চ্যানেল বা প্রবেশপথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে প্রবেশ করছে। গভীর সাগর থেকে জাহাজগুলো চ্যানেল দিয়ে জেটিতে প্রবেশের জন্য বসানো হয়েছে পথনির্দেশক বয়া।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, ‘চ্যানেলের একমাত্র জেটিতে এই পর্যন্ত ১৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে ভিড়েছে।’
দুই ধাপে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের মধ্যে। এর প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। বাকি অর্থের মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেয়া প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে। এর সব নকশা জাপানি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। এই প্রকল্পের অধীনে সংযোগ সড়কসহ গভীর সমুদ্র বন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। কাজ শেষ হওয়ার পর এই বন্দরে ভিড়তে পারবে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ।