করোনা মহামারির জন্য এ বছর রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট বসা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে এরই মধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে অনলাইন হাটের। আর এই হাটে কেবল কোরবানির পশুই নয়, মিলবে কসাইও। এমনকি মাংস কেটেকুটে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও রাখছেন অনলাইন পশুর হাটের ব্যবসায়ীরা।
‘ডিজিটাল হাট’ নামের ওই প্ল্যাটফর্মে এক লাখ গরু অনলাইনে (https://digitalhaat.net/3480-2/) বিক্রির কথা জানিয়েছে ডিএনসিসি। ৪৯টি অনলাইন কোরবানি পশু বিক্রির সাইট নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি এই হাটের আয়োজন করেছে। সেখানে হাজার হাজার পশুর ছবি, ওজন, দামসহ তথ্য দিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা।
সিটি করপোরেশনের সেই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে ফ্রেশমিট বাজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ফিন্যান্স ডিরেক্টর তৌফিক রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর ৫ জুলাই থেকে আমরা ফ্রেশমিট বাজার চালু করি। এটি অনলাইন মাংস প্রসেসিং সেন্টার। এখানে আমরা গরু, খাসি, মুরগি থেকে শুরু করে গৃহপালিত পশুর মাংস প্রসেস করে তা গ্রাহককে পৌঁছে দিই।’
তৌফিক বলেন, ‘এবার আমরা কোরবানিতে আলাদা ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে গরু বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই। যেটার নাম দেয়া হয়েছে কোরবানিহাট ডটনেট।’
কী আছে অনলাইন হাটে
অনলাইন হাটে কী সুবিধা থাকে এটির ব্যাখ্যায় ফ্রেশমিটের তৌফিক জানান, তারা মূলত চারটি সুবিধা দেবেন গ্রাহককে।
প্রথমত, কেউ শুধু অনলাইনে দেখে গরু কিনতে পারবেন। ঢাকার কুড়িলে একটি জায়গায় গরুগুলো রাখা আছে। দ্বিতীয়ত, অনলাইনে অর্ডার দিলে সেটি ক্রেতা চাইলে মাংস প্রক্রিয়াজাত পর্যন্ত করে তা বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে। তৃতীয়ত, ক্রেতা গরু অন্য জায়গা থেকে কিনলেও চাইলে স্লটার ম্যান দিয়ে সে তার বাড়িতে মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। চতুর্থত, ফ্রেশমিট থেকে কেনার পর ক্রেতা চাইলে তার বাসায় গিয়ে স্লটার ম্যান গরু প্রক্রিয়া করে দেবে।
তবে গরু কেনার পর তা প্রক্রিয়াজাত করলে দিতে হবে আলাদা চার্জ। প্রতি হাজারে ২০০ টাকা চার্জ দিতে হবে ক্রেতাকে। ১ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনলে ২০ হাজার টাকা চার্জ দিয়ে প্রকিয়াজাত করা হবে। এখানে শেয়ারিংয়ের মাধ্যমেও কেনা যাবে গরু।
ইতোমধ্যে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে গতবারের মতো অনলাইন হাটের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা ৫ জুলাই থেকে কার্যকর রয়েছে। সেখানে এবার টার্গেট নেয়া হয়েছে কমপক্ষে ১ লাখ গরু।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, তাদের ডিজিটাল পশুর হাট থেকে গতবার তিন সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৭ হাজার গরু। এবার টার্গেট নেয়া হয়েছে কমপক্ষে ১ লাখ গরু।
তিনি বলেন, ‘১ লাখ লোকের মধ্যে যদি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গরু বিক্রি করতে পারি, তাহলে কমপক্ষে ৮ লাখ লোক কিন্তু গরুর হাটে যাবে না। আমরা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব।’
ক্রেতার আস্থা অর্জন কীভাবে
ডিজিটাল হাটের সঙ্গে যুক্ত হবে তৌফিক রহমানের ফ্রেশমিট যুক্ত হবে ‘কোরবানি ডটনেট সাইট’।
তিনি বলেন, ‘আমরা ই-ক্যাবের সদস্য হিসেবে ডিজিটাল হাটের সাথেও যুক্ত হব। ডিজিটাল হাটের ওয়েবসাইটে গেলে আমাদের সাইটও তখন দেখা যাবে। সেখান থেকে যে কেউ আমাদের মাধ্যমেও গরু অর্ডার করতে পারবে। একইভাবে আমাদের আলাদা ওয়েবসাইটে গেলেও একই সুবিধা পাওয়া যাবে।’
ডিজিটাল হাট থেকে গরু কেনার পর ক্রেতা প্রতারিত না হওয়ার বিষয়টি বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করছে বলে জানালেন তৌফিক। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা ক্রেতাকে উৎসাহিত করি যেন অনলাইনে ছবি দেখে বুকিংয়ের পর আমাদের এখানে এসে একবার গরু দেখে যান। আমরা তখন ওই গরুর গলায় একটা ট্যাগ লাগিয়ে দিই।
‘ক্রেতা যে গরুটা অর্ডার দেবে সেটিই সে পাবে, এমন ধারণা নিয়েই আমরা কাজ করি। এটি একটি ব্যবসায়িক নীতিমালা। আমাদের যেহেতু দুই থেকে আড়াই হাজার একটা ক্লায়েন্ট আছে তাই আমাদের ওপর একধরনের বিশ্বাস আছে। এখন পর্যন্ত আমাদের যে গরু বুকিং হয়েছে, তা সেই কাস্টমাররাই করেছে।’
অনলাইন হাট থেকে গরু কিনলে টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত যেকোনো উপায় অবলম্বন করা যাবে। বুকিংয়ের সময় ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে। এরপর নেয়ার সময় বাকি টাকা।
ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রয়ে যেভাবে নিবন্ধন
বিক্রয়ের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই অবশ্যই ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অথবা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে।
আবেদনকারীদের মধ্য হতে শুধু নির্বাচিতরাই ডিজিটাল হাট এ বিক্রয়ের জন্য নিবন্ধিত হবেন। এ জন্য কোনো ফি নির্ধারিত হবে না। বিক্রেতা নির্বাচনের জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।
অবশ্যই বিক্রেতার ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। থাকতে হবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং বিক্রেতাকে ভেন্ডর রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য পেশ করতে হবে। সঙ্গে ছবি এবং স্বত্বাধিকারী বা প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয়পত্র পেশ করতে হবে।
বিক্রেতাকে www.digitalhaat.net এ রেজিস্ট্রেশন ফর্মে যাবতীয় তথ্য পূরণ করে আবেদন করতে হবে। বিক্রেতার সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের পর ডিজিটাল হাট কর্তৃপক্ষ বিক্রেতাকে ভেন্ডর হিসেবে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। অতপর বিক্রেতার সাইটের এপিআই ইন্টিগ্রেট করতে হবে। যদি এপিআই না থাকে সেক্ষেত্রে বিক্রেতাকে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হবে, যা দিয়ে আপনি পশুর ছবি আপলোড করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে আপডেট করতে পারবেন। এই পাসওয়ার্ড কোনোভাবে দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে শেয়ার করা যাবে না।
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাশার ডিজিটাল হাট নিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি এ বছর নতুন নয়। গতবার থেকে এই অনলাইন হাট চালু হয়েছে। যেখানে নিবন্ধিত অন্যান্য সার্ভিস যুক্ত হয়েছে। আমাদের করপোরেশনের ২৫টি ফ্রিজার ভ্যান থাকবে, যা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গাগুলোতে মাংস পৌঁছে দেবে।’
তিনি জানান, ডিএনসিসির অনলাইন পশুর হাট থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভার থেকেও কেউ চাইলে গরু কিনতে পারবেন।
ই-ক্যাবের ও বাংলাদেশ ড্রেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে পরিচালিত হবে গরু-ছাগলের এই অনলাইন হাট।