বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজের পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

  •    
  • ৯ জুলাই, ২০২১ ০৮:৩৬

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যদি উন্নত বিশ্বের বাজার ভালোভাবে ধরতে পারে, তাহলে রপ্তানি আরও বেড়ে যাবে। এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য এখনই বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

মহামারি করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে অর্থনীতি রক্ষা করতে আরও একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেই সঙ্গে এই মহামারি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তা অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তার একটি যথাযথ মূল্যায়ন করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে মূল্যায়নের আলোকেই নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই প্রণোদনা বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসহ সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

‘কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশে: নীতিগত সহায়তা এবং এর প্রভাব’ শীর্ষক এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ পরামর্শ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

‘চলমান মহামারির মধ্যে সরকারকে আরও একটি নীতিসহায়তা দিতে হবে’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ মহামারি এবং লকডাউন সত্যিই একটি ভয়ানক ঐতিহাসিক ঘটনা। এই মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, সেটি কোনো সাধারণ মন্দা নয়, মহামন্দা। কোথায় গিয়ে এটা শেষ হবে, এখনও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। সামষ্টিক অর্থনীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতেও বিপর্যয় ডেকে এনেছে এই মহামারি।

এতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তছনছ হয়ে গেছে অর্থনীতির অনেক খাত। সেবা খাতের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর পরই শিল্প খাত। বিশেষত তৈরি পোশাক, রিয়েল এস্টেট, পর্যটন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিমান পরিবহন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, কৃষি খাতে তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব পড়েছে।

এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার এখন পর্যন্ত ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এই প্যাকেজগুলো এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে।

‘ইতিমধ্যে এর ভালো ফলও পাওয়া গেছে’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা এই মহামারি পরিস্থিতিতে এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় আছে– ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। নতুন অর্থবছরে এই সূচক আরও বেড়ে ২ হাজার ৪৬২ ডলার হবে বলে লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিদেশি মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই খাত রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহও বেশ সন্তোষজনক। রেমিট্যান্সে রেকর্ড ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। কম আমদানির কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (বিওপি) ইতিবাচক রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।’

প্রতিবেদনে নতুন সম্ভাবনার কথাও শোনানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যেসব দেশে বেশি বেশি পণ্য রপ্তানি করে, সেসব দেশে দ্রুত টিকাদান কর্মসূচি শেষ করে ফেলায় কোভিড-১৯ আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে। সেসব দেশে নতুন করে পণ্যের চাহিদা দেখা দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও দেবে। সে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যদি এই বাজার ভালোভাবে ধরতে পারে, তাহলে রপ্তানি আরও বেড়ে যাবে।

‘এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য এখনই বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে,’ পরামর্শ দেয়া হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে মহামারি মোকাবিলায় সরকারের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোসহ অন্যান্য উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভালো অবস্থায় রয়েছে, সে বিষয়টিও আলোকপাত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে উদ্বেগের সঙ্গে বলা হয়েছে, মহামারির এই কঠিন সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত (এসএমই)। এই খাতকে সচল রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই দিকটাতেই সরকারকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। নতুন যেসব প্রণোদনা ঘোষণা করা হবে, তাতেও এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই দিতে হবে। কেননা, বাংলাদেশে এই খাতেই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়। জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে।

প্রতিবেদনে নতুন প্রণোদনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘এ কথা ঠিক যে, গত বছরেরর এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত যে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন হচ্ছে, তাতে সমস্যা ছিল, দুর্বলতা ছিল। তারপরও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এটি যথেষ্ট সহায়তা করেছে।

‘আর সে কারণেই সেই ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিয়েই নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করতে হবে এবং সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে আগের ভুলগুলো আর না হয়। প্রতিটি প্যাকেজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। আর যেন কোনো গাফিলতি না হয়।’

নতুন প্রণোদনা বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া এবং সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কড়া নজরদারিরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই কঠিন সময়ের মধ্যেও একটি ইতিবাচক দিক হলো পোশাক খাত চালু আছে। বিশ্বে রপ্তানির বাজার ধীরে ধীরে খুলছে। কারণ, ওইসব দেশে টিকার ব্যবস্থা হচ্ছে। রপ্তানি বাজার ঠিক রাখতে সরকার বেশ কিছু সুযোগ দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি পোশাকের উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়, সেটা অবশ্যই স্বস্তি দেবে।

‘প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের ধারাও ইতিবাচক রয়েছে। অর্থনীতির এই দুই সূচক আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। এটা যদি না হতো তাহলে আমরা আরও সংকটের মুখে পড়তাম।’

‘কিন্তু সমস্যা হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তাদের অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। তাদের ব্যবসা বন্ধ। ফলে অনেকে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবেন। নতুন করে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবেন, তাদের একাধিকবার নগদ সহায়তা দেয়া উচিত। সেটি করতে না পারলে তাদের অবস্থার উন্নতি হবে না। নতুন করে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন, তাদের জন্য এই সময় বেশ ভয়ের।’

সে কারণে নতুন যে প্রণোদনা দেয়া হবে তাতে যেন এই খাতকেই, এই মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে অনুরোধ জানান মনজুর হোসেন।

এ বিভাগের আরো খবর