করোনাভাইরাস মহামারিতে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গভীর শ্রম ও স্বাস্থ্যগত সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করা হয়েছে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্সে নামের একটি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে।
‘মজুরি চুরি: কোভিড-১৯ অতিমারির সংকটকালে গ্লোবাল ফ্যাশন ব্র্যান্ড সরবরাহ চেইনে শ্রম মজুরি চুরি’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করায় গ্লোবাল ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এশিয়ার সাতটি দেশের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও শিক্ষাবিদরা।
বৃহস্পতিবার সংস্থাটি থেকে পাঠানো এক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে সভাপতিত্বে করেন এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্সের কো-অর্ডিনেটর অনন্যা ভট্টাচার্য্য।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন, ইন্দোনেশিয়া এফএসবি গারটেক্সের জেনারেল চেয়ারম্যান আরি জুকো সুলিশতা, শ্রীলংকার টেক্সটাইল গার্মেন্টস অ্যান্ড ক্লোথিং ওর্য়াকার্স ইউনিয়নের চিফ অরগানাইজার ললিতা, পাকিস্তান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি নাসির মুনসুর, ভারতের গার্মেন্টস লেবার ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট রূকমিনি, কম্বোডিয়ান অ্যালায়েন্স অফ ট্রেড ইউনিয়নের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সার মোরা, ভারতের ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের প্রফেসর দেভ নাথান, যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির অ্যামোরিটাস প্রফেসর গ্যারি গেরিফি, নেদারল্যান্ডের লিডেন ইউনিভার্সিটির অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর রত্মা সাপটারি, যুক্তরাষ্ট্রের বুকনেল ইউনিভার্সিটির অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর শাহরাম আজহার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট এ্যাট দি ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারের অ্যামোরেটাস প্রফেসর স্টেফেনি বারিয়েন্টস।
অনুষ্ঠানে গৃতীত সুপারিশে বলা হয়, এশিয়ার পোশাক শ্রমিকদের সম্মানজনক কাজের সুযোগ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য বিশ্ব সরবরাহ চেইনে শক্তি ও মুনাফা ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে।
এছাড়া শ্রমিকের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে গ্লোবাল ব্র্যান্ড ও বিশ্ব বাণিজ্যের ভোক্তাদের জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। উৎপাদনশীল দেশগুলোতে আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে নূন্যতম মজুরি ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে ট্রেড ইউনিয়ন, ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা স্বাক্ষরের মাধ্যমে একটি এনফোর্সেবোল ওয়েজ কন্ট্রাক্ট (ইডাব্লিউএ) তৈরি করতে হবে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষের যৌথ দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বাংলাদেশে শ্রমিকদের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘করোনা অতিমারির সময়ে কারখানা মালিক কর্তৃপক্ষ বিনা অজুহাতে প্রায় ৩০ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিককে কাজ থেকে বঞ্চিত ও কোনো প্রকারে স্বল্প বেতন দিয়ে বা বেতন পরিশোধ না করেই কাজ সমাপ্ত করেছেন। এই শ্রমিকদের শূন্য হাতে পুনরায় গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছে।’
ওয়েবিনারে আলোচকরা এই গবেষণা প্রতিবেদনটিকে সময়োপযোগী দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসায়িক মডেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি গবেষণায় উঠে এসেছে। করোনা অতিমারির সংকটকালে এটি তীব্রতর হয়েছে। বর্তমানে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঋণ, ক্ষুধা ও স্বাস্থ্যহানিজনিত দুর্ভোগসহ মানবিক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।
এই অনিশ্চিত সময়ে গামেন্টস শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য বৈশ্বিক আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান তারা।
ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বিশ্বের ৪৮টি দেশের ৩৫০ জন প্রতিবেদনটির সঙ্গে সহমত জানিয়েছেন। এই গবেষণা কার্যক্রমটি বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্থান এবং শ্রীলংকার ১৮৯টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার ১৮৫ জন গার্মেন্টস শ্রমিককে সরাসরি সম্পৃক্ত করে পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে ১৫টি বৃহৎ ব্র্যান্ড এবং খুচরা সরবরাহকারীসমূহকে শনাক্ত করা হয়েছে। যারা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে গার্মেন্টস কারখানায় হঠাৎ করে অর্ডার বাতিল করেছিল বা গার্মেন্টস কারখানায় অর্থ প্রদানে অস্বীকার করেছিল। এ কারণে শ্রমিকরা গণছাঁটাইসহ শোষণের শিকার হয়েছে।