কাঁচামালের অভাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত দেশের একমাত্র ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএপিএফসিএল) সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
গত ১ জুলাই থেকে ফসফরিক অ্যাসিডের মজুত শূন্য হয়ে পড়ে ওই সার কারখানায়। নির্ধারিত সময়ে ফসফরিক অ্যাসিড পাওয়া না গেলে কারখানারটির সার উৎপাদন দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বন্ধ হওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে।
ডিএপিএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তরুণ কান্তি সরকার বলেন, ‘ফসফরিক অ্যাসিড মজুত শেষ হওয়ায় কারখানার উৎপাদন আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে এই রাসায়নিক দ্রব্যটি ক্রয়ের প্রক্রিয়াও চলছে। তবে শাটডাউনের কারণে একটু বিলম্ব হচ্ছে। আমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি দ্রুতই সমস্যা কেটে যাবে।’
ডিএপিএফসিএলে অন্তত ৫০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। এরমধ্যে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০০। তারমধ্যে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন ১৮০ জন। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এই শ্রমিকরা।
ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের কর্মচারীদের সংগঠন কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্টের (সিবিএ) সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে কারখানাটি বন্ধ। এজন্য শ্রমিকরা হতাশ। দৈনিক কাজের ভিত্তিতে নিয়োগকৃত শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা বেতন পাচ্ছেন না। আমরা কর্তৃপক্ষকে বারবার কারখানা চালুর জন্য তাগাদা দিচ্ছি। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।’
ডিএপিএফসিএলের সাধারণ ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আব্দুর রহমান বাদশা বলেন, ‘উৎপাদন বন্ধের কারণে স্থায়ী শ্রমিকরা বিপাকে না পড়লেও ক্যাজুয়াল (দিনমজুর) শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
ডিএপিএফসিএলের এমডি তরুণ কান্তি সরকার বলেন, ‘দরপত্রের মাধ্যমে এক মাস আগে ১৭৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ২৪৪ টাকা ব্যয়ে টিইসি কর্তৃক মূল্যায়িত সর্বনিম্ন দুজন দরদাতা থেকে তিনটি লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়। এ বিষয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে অনুমোদনের জন্য গত ২ জুন প্রস্তাবটি শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব এখনো সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে যায়নি। ২৩ জুলাই দরপত্রের প্রস্তাবটির বৈধতার সময়সীমা পার হবে। ওই সময়সীমার মধ্যে প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন না পেলে কারখানাটি এক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে করে কারখানায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হবে। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করাও সম্ভব হবে না।’
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মাধ্যমে ডাই–অ্যামোনিয়া ফসফেট ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল) পরিচালিত হয়। দেশের কৃষি খাতে সুষম ও উপযুক্ত সার ব্যবহারের মাধ্যমে যৌগিক সারের (নাইট্রোজেন ও ফসফরাস সংবলিত) চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। ওই কারখানার দুটি ইউনিটের প্রতিটিতে ৮০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।