দেশের রাজস্ব আদায় বাড়াতে আলাদা একটি রোডম্যাপ তৈরির দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে করদাতাদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে ‘ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে কর নীতি প্রনয়ণের কথাও বলা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় ‘রেভিনিউ মোবিলাইজেশন ফর রেজাল্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব দাবি জানানো হয়।
সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করেছিল সুশাসনের জন্য প্রচার অভিযান (সুপ্র) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফার্ম ।
এতে আলাদাভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুশাসনের জন্য প্রচার অভিযানের নির্বাহী পরিচালক মো. শহীদুল্লা এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন।
নির্বাহী পরিচালক মো. শহীদুল্লা তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশে রাজস্ব ব্যবস্থা খুবই দুর্বল এবং সেবার মানও ভালো নয়। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ কর দেন। অথচ কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে অনেকেরই।
প্রবন্ধে বলা হয়, এনবিআর এখন পর্যন্ত করযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কোনো জরিপ বা সমীক্ষা করে নি। জাতিসংঘের ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) এবং জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা করতে হলে রাজস্ব আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
সংসদ সদস্য আরমা দত্ত রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া আরও সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমাদের সিস্টেমের ডেপলপমেন্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে ভারতে তৃণমূল পর্যায়ে কীভাবে ভ্যাট আদায় করা হয় সেটি অনুসরণ করা যেতে পারে।’
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘এটি সত্য আমাদের জিডিপির তুলনায় কর আদায় খুবই কম। তাই দেশের উন্নয়নে কর আদায় বাড়াতেই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই কর দিতে চান। কিন্ত এদের সবাইকে নেটে আনা যাচ্ছে না। কর সংস্কৃতির দুর্বলতা রয়েছে। এর উন্নতি করা অপরিহার্য।’
এনবিআরে একটি গবেষণা সেল গঠন এবং করনীতি ও ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করার পরামর্শও দেন ড. আতিউর।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন কেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’
রাজস্ব প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিত এবং তদারকি কর্মকাণ্ড আরও জোরদারের পরামর্শও দেন তিনি।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এনবিআর অনেকগুলো সংস্কার কর্মসূচি নিলেও বাস্তবায়নে তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায় নি। সেবার মান বাড়াতে হলে ভবিষতে সংস্কার এজেন্ডার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’
এনবিআরে প্রথম সচিব (ভ্যাট নীতি) কাজী ফরিদ উদ্দিন ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত কম হওয়ার ব্যাখা করে বলেন, ‘বাংলাদেশে কর অব্যাহতি অনেক বেশি। এই সুবিধা কমানো গেলে রাজস্ব আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির যে কাঠামো তাতে সবার জন্য অভিন্ন অর্থাৎ ১৫ শতাংশ ভ্যাট গ্রহণযোগ্য নয়।
‘আমাদের ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ আছেন, যারা হিসাব ঠিকমতো সংরক্ষণ করেন না। সরকার ভ্যাটের রেট বা হার কমানোর পক্ষে ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা হিসাব পদ্ধতি আধুনিক না করার কারণে তা করা সম্ভব হয় নি।’
সুপ্রর নির্বাহী পরিচালক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে হলে একটি রোডম্যাপ তৈরি জরুরি। দেশ থেকে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি বন্ধ করতে হবে।
সেমিনারে অক্সফার্মের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর বলেন, ‘বাজেটে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হলে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।’