বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেল পেলেন না মঞ্জুরানী

  •    
  • ৬ জুলাই, ২০২১ ২১:০৩

টিসিবির পণ্য বিক্রির প্রতিটি স্পটেই দেখা যায় ভোক্তাদের বেশির ভাগই এসেছেন ভোজ্য তেল কিনতে। কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তেল পাচ্ছেন তেল পাচ্ছেন না।

‘কত জাগায় গেলাম। তেল পাই নে। বাজারে খুব বেশি দাম, তেল কিনতি গিলি আর কিছু কিনতি পারি নে। তেল থাকতিও কয় তেল নাই। গরীব মানুষের মরন ছাড়া উপায় নেই।’

আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বললেন মধ্যবয়সী মঞ্জুরানী সরকার। প্রখর রোদের মধ্যে সকাল থেকে দুপুর টিসিবির ট্রাকের জন্য এখান থেকে সেখানে পইপই করে ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও মেলেনি না তেল।

নিউজবাংলাকে মঞ্জুরানী জানান, সকাল ১০টার দিকে হাজীপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে রামপুরা স্পটে গিয়ে দেখেন আসেনি টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সেখান থেকে পায়ে হেটে রওনা হন মালিবাগের দিকে। সেখানে আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও সুখবর মেলনি। ওই স্পটেও যায়নি টিসিবির ট্রাক।

তারপরে মৌচাক মোড়ে গিয়ে মঞ্জুরানী টিসিবির গাড়ি পেয়েছেন বটে, কিন্তু তেল পাননি। তার অভিযোগ, তেলের কার্টন ট্রাকে রেখেও বলা হচ্ছে তেল নেই।

এরপর রামপুরা যান মঞ্জুরানী। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন পণ্যের জন্য দীর্ঘ লাইন। অন্তত ৫০ জনের পেছনে তার অবস্থান। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জানতে পারেন তেল নেই। সচিবালয়ের সামনে আব্দুল গনি রোডের স্পটেও যান মঞ্জুরানি। সেখানেও তেল পাননি তিনি।

টিসিবির প্রত্যেকটি বিক্রয় কেন্দ্রেই দেখা গেছে, ভোজ্য তেলের জন্য হাহাকার। ট্রাক এসে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব পণ্য। সবার আগে শেষ হচ্ছে ভোজ্যতেল।

চলমান শাটডাউনে ভোক্তাদের কম দামে পণ্য সরবরাহ করতে সারা দেশে আবারও ‘ট্রাক সেল’ চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, পণ্য কিনতে ছিল ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। মূলত খোলা ট্রাকে বিক্রি করা এসব খাদ্যপণ্য। স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য পেতে ভিড় করেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। ক্রেতার চাহিদা বেশি থাকায় অনেক স্থানে দ্রুত বিক্রি শেষ হয়েছে।

স্পট রামপুরা

সকাল ১১টার পর পণ্য নিয়ে রামপুরা মোড়ে দাঁড়ায় টিসিবির ট্রাক। তবে, আগ থেকেই সেখানে অপেক্ষামান ছিল শতাধিক নারী পুরুষ। একটু কম টাকায় তেল, চিনি এবং মশুর ডালের জন্যই এই অপেক্ষা।

অপেক্ষমান খাদিজা বেগম বলছিলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে থেকে এখন ১২টা বাজে। এখনও কিছু নিতে পারি নাই। আরও ৬-৭ জনের পর আমি পাব। সোমবারও ১০টা থেকে ১ টা পর্যন্ত লাইন দিয়ে তেল কিনতে পারিনি। ডাল আর চিনি নিয়ে ফিরে গেছি। এজন্য আজ আবার তেল কেনার জন্য লাইনে দাঁড়ায়ছি।’

করিম শেখ জানান, জীবনে কোনো দিন এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে এভাবে পণ্য কেনননি তিনি। করোনায় আয়ের পথ বন্ধ, তাই একটু কম টাকায় পণ্য কেনার জন্য তাকে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।

রিকশাচালক জসিম জানান, রিকশা চালানো বাদ দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। এই সময় ভাড়া মারলেও কিছু টাকা আসতো। কিন্তু বাজারে তেলের যে দাম, তাতে কেনা মুশকিল। তাই এখান থেকেই কিনতে হবে।

রামপুরা মোড়ে প্রতিদিন সকালে দাঁড়ায় টিসিবির ট্রাক। টিসিবির গুদাম থেকে পণ্য নেবার ক্ষেত্রে লম্বা সিরিয়াল থাকায় দেরি হয় বলে জানান তিনি।

স্পট হাতিরঝিল

হাতিলঝিল মোড়ে টিসিবির পণ্যের ট্রাকেও দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। করোনা সংক্রমণে মানুষের চলাচল কম থাকলেও টিসিবির পণ্য কিনতে দেখা যায় নিম্নবিত্তদের লম্বা লাইন।

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রুকসানা জানান, এক লিটার তেল এইখান থেকে কিনলে ১০০ টাকা। কিন্তু বাজার থেকে নিলে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। বলেন, নিম্নবিত্তদের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে নেয়া ছাড়া উপায় নেই।

প্রখর রোদ মাথায় করে দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ রহিম শেখ। বলেন, ‘আয় নাই। কবে আবার আয় করতে পারব জানি না। তাই সীমিত টাকার মধ্যে টিসিবি থেকে পণ্য কেনার বিকল্প নেই।’

লাইনে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও

শুধু যে নিম্নবিত্ত শ্রেণিই টিসিবির পণ্যের লাইনে তা নয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই এখন দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কিনছেন পণ্য। এমনটা আগে খুব বেশি দেখা যায়নি।

রামপুরা মোড়ে লাইনে দাঁড়ানো তসলিম খান বলেন, ‘কখনও এমনভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হবে চিন্তায় ছিল না। করোনায় ব্যবসা শেষ, অনেক টাকা লোকসান দিয়ে এখন নিঃস্ব বলা যায়। তাই কীভাবে কম টাকায় বাঁচা যায় সেই চেষ্টা করছি।’

অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়ে পাঠিয়েছেন বাসার কাজের বুয়াকে। অনেকেই আবার অফিসের পিয়ন অথবা নিম্নস্তরের কর্মচারীকে পাঠিয়ে কিনছে পণ্য। লজ্জায় লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না, আবার সংসার চালানোর মতো অবস্থাও নেই। এমন অবস্থায় লোক মারফত কেনা ছাড়া বিকল্প নেই।

টিসিবির ডিলার রফিকুল ইসলাম জানান, টিসিবির পণ্যের চাহিদা এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। নতুন নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে, যারা কখনো লাইনে দাঁড়ায়নি।

তিনি বলেন, তেলের চাহিদা বেশি। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব পণ্য।

নেই স্বাস্থ্যবিধি

লকডাউনের সময় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে যেসব এলাকায় টিসিবির ট্রাক এসেছে সেখানেই ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতার চাহিদা বেশি থাকায় এসব পণ্য কেনার সময় করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব মানেননি অনেকে। বেশির ভাগই পরেননি মাস্ক। সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা।

রামপুরার ডিআইটি রোডে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই পণ্যের জন্য সবাই গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ান। কেউ কেউ সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইলেও ভিড়ের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

একই এলাকার হাতিরঝিলের মোড়েও দেখা গেছে লম্বা লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে কেউ কেউ রাস্তার ধারে বসে পড়েছেন। এখানেও অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

স্পটে ট্রাক আসতে দেরি কেন

বেশির ভাগ স্পটেই টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির জানালেন, একদিন আগে ডিলারদের টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু গত রোববার ব্যাংক খোলা না থাকায় রাজধানীতে ৮০টি ট্রাকের পরিবর্তে ৬০টি ট্রাক বের করা হয়। সেজন্য রাজধানীর কিছু এলাকা বাদ পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘বাড়তি চাহিদা বিবেচনা করে আগের চেয়ে বেশি পণ্য দেয়া হয়েছে। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ আমাদের লক্ষ্য। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে বিপণন করা যায় সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’

একাধিক ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিসিবির গুদাম থেকে পণ্য নেয়ার জন্য লম্বা সিরিয়াল থাকে। এজন্য পণ্য ছাড় করে স্পটে যেতে দেরি হয়।

ট্রাক ও পণ্য বরাদ্দ বাড়িয়েছে টিসিবি

৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। দেশব্যাপী ৫০টি ট্রাক বাড়িয়ে ৪৫০ জন ডিলারের মাধ্যমে মহানগরী, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের ভোক্তারা পাচ্ছে টিসিবির পণ্য।

টিসিবির বিক্রি করা পণ্যের তালিকায় রয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি এবং মশুর ডাল। ১০০ টাকা লিটারে সয়াবিন, ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি এবং মশুর ডাল বিক্রি করছে টিসিবি। দেখা যাচ্ছে, বাজার মূল্যের চেয়ে পণ্যভেদে দামের পার্থক্য ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রাকপ্রতি চিনি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ কেজি, মশুর ডাল ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি এবং সয়াবিন তেল দেয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ লিটার পর্যন্ত।

একজন ক্রেতা একবারে দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই থেকে চার কেজি চিনি কিনতে পারবেন।

ক্রেতার সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ভোজ্যতেল। কারণ খোলা বাজারের চেয়ে টিসিবির দামের পার্থক্য অন্তত ৫০ টাকা।

টিসিবির পণ্যের এই বিক্রি কার্যক্রম চলবে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত।

এ বিভাগের আরো খবর