ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কোনো মার্চেন্ট ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে অস্বাভাবিক কোনো অফার দিতে পারবে না। ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্টের ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে। এ ছাড়া ক্রেতা মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ওই পণ্য ডেলিভারিম্যানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
এরকম বিধান রেখে ডিজিটাল ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠু পরিচালনায় স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বা ই-কমার্স খাত পরিচালন নির্দেশিকা-২০২১ চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত ৪ জুলাই তা সরকারের গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে দেশে প্রথমবারের মতো ই-কমার্স খাত পরিচালন নির্দেশিকার গেজেট চূড়ান্ত ও গেজেট প্রকাশের কথা জানানো হয়।
এতে মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য ও সেবার তথ্য প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয়, সাধারণ নিয়মাবলী, মার্কেটপ্লেসে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন, পণ্য ডেলিভারী, অগ্রিম পরিশোধিত মূল্য সমন্বয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। যা গ্রাহকদের জন্য সহায়ক হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল কমার্সের আওতায় নেশা সামগ্রী, বিস্ফোরক দ্রব্য বা অন্য কোন নিষিদ্ধ সামগ্রী বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। জুয়া বা অনলাইন বিটিং বা অনলাইন গেমবলিং এর আয়োজন বা অংশগ্রহণ করা যাবে না। ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্টানসমূহ সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিত কোন ধরণের লটারি’র আয়োজন করতে পারবে না। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা নেটওয়ার্ক ব্যবসায় পরিচালনা করা যাবে না।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ঘোষিত নীতিমালার আলোকে প্রণীত নির্দেশিকা সঠিকভাবে কার্যকরের মাধ্যমে বিকাশমান ই-কমার্স খাতকে টেকসই হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। আমরা একটা শুরু করলাম। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এই নির্দেশিকায় আরও নতুন কিছু সংযোজন করা হবে।’
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘ই-কমার্স খাত পরিচালন নির্দেশিকা-২০২১ এর গেজেট চূড়ান্তকরণ’ শীর্ষক বৈঠকে অংশ নেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবুল কুমার সাহা, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার, সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ আলম তমাল ও বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির।
নির্দেশিকাটি ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ নামে অভিহিত হবে। যার প্রয়োগ হবে সারা বাংলাদেশে। লক্ষ্য হলো-ডিজিটাল ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে ‘জাতীয় ই-কমার্স নীতিমালা ২০২০ সংশোধিত) এর সফল বাস্তবায়নের জন্য অনুকুল পরিবেশ গড়ে তোলা। উদ্দেশ্য হিসাবে বলা হয়েছে, খাতটিতে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা, ডিজিটাল ব্যবসার প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, ডিজিটাল ব্যবসায় শৃংখলা আনয়নের মাধ্যমে ভোক্তার আস্থা বৃদ্ধি করা এবং প্রতিযোগিতামুলক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা।
এই নির্দেশিকার বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেস এর ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিষ্ট্রেশন, ব্যাট নিবন্ধন বাতিল করা সহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধকরণসহ অন্যান্য আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতা সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আইনানুগ প্রতিকারের জন্য অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়, ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরের হলে অনলাইনে পন্যের ক্রয়াদেশ গ্রহণের ৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারি দিতে হবে। ভিন্ন শহর বা গ্রামে হলে সময় নেয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ দিন। তবে বিক্রয়ের জন্য প্রদশির্ত পণ্যের সম্পূর্ন মুল্য পরিশোধের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ওই পণ্য ডেলিভারি ম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকে এই হস্তান্তরের খবর টেলিফোনে, ই-মেইলে কিংবা এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অনলাইন বিজনেস করতে হলে নীতিমালা মানতে হবে। যারা মানবে না সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সরকার ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। ক্রেতারাও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আদালতে মামলা করতে পারবে।
ক্রেতার অভিযোগ যথাযথভাবে রেকর্ড করতে হবে। যে কোনো অভিযোগ পাওয়ার ৯৬ ঘন্টার মধ্যে সমাধানের ব্যবস্থা করে ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা এসএমএসএর মাধ্যমে জানাতে হবে।
ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্সের মাধ্যমে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা নেটওয়ার্ক ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। ডিজিটাল প্লাটফর্মে ওষুধু-ক্রয়-বিক্রয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং দাহ্য পদার্থের ক্রয়-বিক্রয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, সকল ডিজিটাল ব্যবসায়ীকে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন, টিআইন, ইউবিআইডি বা পিআরএ গ্রহণ করতে হবে। পিণ্য সরবরাহের সময় মুদ্রিত বিল প্রদান করতে হবে। যাতে প্রদেয় বা প্রদত্ত ভ্যাট ও আয়কর (যদি থাকে) উল্লেখ থাকতে হবে।
ডিজিটাল কমার্স মার্কেটপ্লেস বা ফেসবুক পেইজে ক্রয়-বিক্রয়, মুল্য ফেরত, পন্য ফেরত বা পরিবর্তন, ডেলিভারি পদ্ধতি, ডেলিভারির সময় এবং অন্যান্য শর্তাবরী বাংলায় লিখা থাকতে হবে এবং সুস্পষ্টভাবে তা প্রদর্শন করতে হবে।
পচনশীল দ্রব্য দ্রুততম সময়ে ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেলিভারির সময় যাতে পণ্যের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য মার্কেট প্লেস কর্তৃপক্ষ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করা যাবে না। নকল ভোজাল পন্য প্রদর্শন ও বিক্রয় করা যাবে না। মেধামস্বত্ব সংরক্ষণের নিয়ম যথাযথ পরিপালন করতে হবে। যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে-তার সনদ নিশ্চিত করতে হবে।
পন্যের ক্ষেত্রে পণ্যের উপাদান ও উপাদানের পরিমাণ, রাসায়নিক গঠনের বিবরণ থাকতে হবে।
যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি আছে, তার জন্য ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পিরিয়ড ও সেবা প্রাপ্তির স্থান ও যোগাযোগ বিস্তারিত সহ অন্যান্য শর্ত সম্বলিত কার্ড বা ডিজিটাল কার্ড পণ্যের সঙ্গে সরবরাহ করতে হবে।
ক্যাশব্যাক অফারে ঘোষিতদ অর্থ পণ্য বা সেবা বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার পর কোনো ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়ালেটে জমা রাখা যাবে না।