ইন্টারনেটের অবাধ প্রাপ্তি এবং করোনা মহামারির কারণে দেশে ডিজিটাল অর্থনীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। অনলাইন শ্রমবাজারে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত এক বছরে দেশে ই-কমার্স খাতে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী এক বছরে এ খাতে আরও পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এটি উঠে এসেছে। তবে এ খাতে অর্থনীতিতে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে সংস্থাটি।
সোমবার সিপিডির ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইকোনমি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, পাঠাও লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হোসাইন ইলিয়াস, সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের সিইও ইলমুল হক সজীবসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল জার্মানভিত্তিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিক ইবার্ট স্টিফটুংয়ের (এফইএস) বাংলাদেশ শাখা। মূল গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির সিনিয়র গবেষণা সহকারী সৈয়দ ইউসুফ সাদাত।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এ খাতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ডিজিটাল ফ্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক আছে কি না, এ খাতের জন্য ইনসেনটিভ (প্রণোদনা) আছে কি না, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো রাজস্ব ছাড় আছে কি না। আবার এরা কর জালে আসছেন কি না, তাও দেখতে হবে। এটাকে একটা সুষ্ঠু প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’
মূল প্রতিবেদন তুলে ধরে সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য হওয়ায় ডিজিটাল অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। গত এক বছরে দেশে ই-কমার্স খাতে প্রায় ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ডিজিটাল অর্থনীতিতে আরও পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলিউশনের প্রধান হাতিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি। এখন যারা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে, তাদের নিজস্ব কোনো যানবাহন নেই। যারা সবচেয়ে বড় হোটেল নেটওয়ার্ক সুবিধা দিচ্ছে, তাদের নিজস্ব কোনো হোটেল নেই।
সৈয়দ ইউসুফ সাদাত আরও বলেন, প্রতিদিন নিত্যনতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। একই অবস্থা বাংলাদেশেও। বর্তমানে অনলাইন কর্মসংস্থানে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। বিশ্বে অনলাইনভিত্তিক শ্রমবাজারের ১৬ শতাংশ বাংলাদেশের। করোনার কারণে যারা চাকরি হারিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে ই-কমার্সে ফিরে আসছেন।
সাদাত বলেন, দিনে দিনে অনলাইন লেনদেন ব্যাপক বেড়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে অনলাইন পেমেন্টের পরিমাণ ছিল ১৬৮ কোটি টাকা, তা ২০১৯ সালে ১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০২০ সালে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
গবেষণার তথ্যে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ই-ক্যাব) সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৩০০। তবে এর বাইরেও প্রচুর উদ্যোক্তা রয়েছেন। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী। এ খাতে প্রচুর সম্ভাবনাও রয়েছে। ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তা ৫০ হাজার, ওয়েবসাইটভিত্তিক উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ হাজার। দেশে এখন ক্রিয়েটিভ ও মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ১৯ হাজার ৫৫২ জন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ই-কমার্স একটি উদীয়মান খাত। এ খাতে শুধু ভোক্তা স্বার্থই নয়, উদ্যোক্তার সুবিধা নিশ্চিতেও একটি নীতিমালা অপরিহার্য। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশের কাতারভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইকোনমি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
গবেষণায় বলা হয়, সময়মতো পণ্যের ডেলিভারি নিশ্চিত করা, রিটার্ন পলিসি ও ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এ খাতের বড় চ্যালেঞ্জের।
উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল ডিভাইসের অভাব। দেশে গরিব জনসংখ্যার প্রতি এক হাজারজনের মধ্যে চারজনের কম্পিউটার রয়েছে। এ ছাড়া, নীতিসহায়তার অভাব, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসুবিধা, ইন্টারনেটের ধীর গতি, বিনিয়োগ, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার অভাব, কারিগরি জ্ঞানের অভাবও এ খাতের জন্য চ্যালেঞ্জের।
গবেষণায় বলা হয়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলা করতে হলে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও সহজভাবে সেবা দিতে হবে। একই সঙ্গে একটি জাতীয় নীতিমালাও তৈরি করতে হবে এবং এ খাতকে এগিয়ে নিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিতে হবে।