করোনা মহামারিতে অনলাইনে গত বছরের তুলনায় চার গুণ পশু বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ই কমার্স সাইটে পণ্যের মূল্য পরিশোধ নিয়ে নতুন যে নীতিমালা করেছে, তাতে ক্রেতাদের ঠকার আশঙ্কা কমে গেছে বলেও মনে করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
গত বছর করোনার মধ্যে ঈদে অনলাইনে বিক্রি হয়েছিল ২৭ হাজার পশু। তবে এবার এক লাখ পশু বিক্রি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার জুম প্লাটফর্মে ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল গরু হাট ২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশন, নারায়ণগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকার লোকজন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে গরু কিনতে পারবেন ঢাকার গ্রাহকরা। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে গরু কিনতে কেউ হাটে ভিড় কম হবে আর এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে বলে আশাবাদী সরকার।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘করোনার ভয়াবহতার কারণে এ বছর পশু কেনাবেচায় আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা প্রবর্তিত হওয়ার কারণে অর্থনীতি এখনও সচল আছে বলেও মনে করেন তিনি।
গত ২৮ জুন ডিজিটাল কোরবানি হাট ব্যবস্থাপনায় ডিএনসিসির সঙ্গে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) চুক্তি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ, সংরক্ষণ, নিরাপত্তা প্রদান, পর্যাপ্ত পানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও পশুস্বাস্থ্য পরীক্ষায় পশুচিকিৎসক নিয়োগ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হবে। ডিএনসিসি, ই-ক্যাব, বিডিএফএর যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআইয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল পশুর হাট বসবে।
আর প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি নেই
মেয়র আতিকুল বলেন, ‘এখন থেকে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার পর কোনো গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। অর্থাৎ গ্রাহক অনলাইনে গরু পছন্দের পর যে টাকা জমা দেন, ওই টাকা গরু হাতে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা থাকবে।
‘অনেক সময় অনলাইনে গ্রাহক গরু কেনেন এক রকম, কিন্তু ডেলিভারির পর দেখেন গরু অন্য রকম বা অসুস্থ। কিন্ত এবার গ্রাহক গরু বুঝে পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে টাকা ছাড় হবে।’
অনলাইনে টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগের মধ্যে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পণ্য দিয়ে টাকা পাবে ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। আর অর্ডারের সময় যে টাকা দেবে গ্রাহকরা, তা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত তৃতীয় পক্ষের কাছে জমা থাকবে। পণ্য সরবরাহ করার পর ক্রেতার কাছ থেকে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর তা ই কমার্স সাইটের অ্যাকাউন্টে যাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘ক্রেতাদের প্রতারিত হবার সুযোগ বন্ধে এবার পশু বিক্রয়ের লেনদেন হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ‘এবার এসক্রো সার্ভিস চালুর ফলে ক্রেতা প্রতারিত হবেন না। কারণ, ক্রেতার সন্তুষ্টির পর ব্যাংক থেকে অর্থ ছাড় হবে।’
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘গত বছর প্রথম বারের মতো কোরবানির পশু ডিজিটাল বিক্রি চালু করা হলে সবার মধ্যে সংশয় ছিল। কিন্তু মাত্র আড়াই সপ্তাহে ২৭ হাজার গরু বিক্রি হয়। ফলে এবার আরও বেশি সংখ্যক পশু বিক্রি হবে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।’
ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল কীভাবে অনলাইনে কেনাবেচা করতে হবে সেটা তুলে ধরেন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অন্যান্য সেবার মতো ই-ক্যাবেও এবটি কল সেন্টার চালুর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ক্রেতার কোনো একটি জায়গায় অভিযোগ জানানোর সুযোগ দিতে হবে। আর সেগুলোর সমাধান করতে পারলে ই কমার্সে মানুষ আগ্রহী হবে বেশি।
নগর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় কোরবানি
এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় এক হাজার গরু কোরবানি দেয়া হবে বলেও জানান মেয়র।
যারা নগর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কোরবানি দিতে চান, তাদের ১০ জুলাইয়ের মধ্যে অ্যাপসের মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। আর কোরবানির পর ডিএনসিসির তত্ত্বাবধানে ফ্রিজিং ভ্যানে করে পশুর মাংস বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে।
ঢাকার বাইরে প্রতিটি পৌরসভা এবং গ্রোথ সেন্টারে আধুনিক স্লটার হাউস নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বলেন, ‘স্লটার হাউসে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গরু জবাই হবে, যেখানে রক্ত বা বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা হবে।’
কোরবানির পশু এক কোটি ১৯ লাখ
এই তথ্য জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘চাহিদা পূরণে দেশি খামারিদের সক্ষমতা রয়েছে।‘
চোরাইপথে কোরবানির পশু যেন আসতে না পারে, সে জন্য সরকার সতর্ক অবস্থানে আছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে চোরাইপথে বা অন্য কোনো পথে একটা পশুও দেশের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে।’
ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিমউদ্দিন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজাও এ সময় বক্তব্য রাখেন।