করোনার কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর লাগাম টেনে ধরার কারণে এ খাতে ২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এটি জানিয়েছে।
করোনা মহামারিতে সরকারি ব্যয় কমাতে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ ভ্রমণসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খরচকে নিরুৎসাহিত করে সরকার। স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় বাড়ানোর জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, অতি জরুরি না হলে সব ধরনের রুটিন ভ্রমণ এ সময় পরিহার করা হয়েছে। করোনার সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নতুন করে কোনো ধরনের যানবাহন কেনায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের প্রশিক্ষণ, যানবাহন মেরামত ও সংরক্ষণ এবং অফিস সরঞ্জাম কেনাকাটাও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির অংশ হিসেবে এসব উদ্যোগ নেয়া হয়।
সরকারি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে বিদায়ী অর্থবছরের মতো নতুন অর্থবছরে ও একই নীতি বাহাল রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া সভা, সেমিনার, কর্মশালাসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সশীরে হাজিরার বদলে ভার্চুয়ালি করার সিদ্ধান্তের ফলে এ খাতেও সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।বিদায়ী অর্থবছরে ভ্রমণ খাতে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে এ খাতে ২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে এই টাকা খরচের ক্ষেত্রে ১ জুলাই একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
এতে বলা হয়, শুধু জরুরি ও অপরিহার্য ছাড়া ভ্রমণ ব্যয় খাতে বরাদ্দের টাকা খরচ করা যাবে না। সরকারি ভ্রমণের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে বরাদ্দ অর্থের ৫০ শতাংশ বরাদ্দ স্থগিত থাকবে। এ ছাড়া সকল প্রকার রুটিন ভ্রমণ পরিহার করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতসমূহে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করতে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সরকারের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘অতীতে সরকারি চাকরিজীবীদের প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
‘এখানে অর্থ মন্ত্রণালয়কে কঠোর তদারকি করতে হবে। এ খাত থেকে যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষায় আরও বেশি ব্যয় করা যাবে। তবে ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি সরকারকে রাজস্ব আহরণের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।’
এদিকে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে সরকারি খাতের যানবাহন কেনায় ব্যয় সীমিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পৃথক আরেকটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ২০২১-২২ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় কোনো ধরনের গাড়ি কেনা যাবে না। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস-এর সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বলেন, ‘কোনো খাতেই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় কাম্য নয়। ইতোমধ্যে অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতার অভাব দেখা দিয়েছে। জনগণের করের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন খাতে সরকারের ব্যয় বেড়েছে। সে জন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে সাশ্রয় করা অর্থ বাজেটের অগ্রাধিকার খাতে ব্যয় করা হবে।
বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, করোনাকালে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ছাড়ে কৃচ্ছ্র নীতি গ্রহণ করতে হবে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাজেটে বাস্তবায়নে আরও বেশি নজর দিতে হবে।