করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি রুখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট চলাচলে গত দেড় বছর ধরে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশই ব্যবহার করতে পারছিল না দেশি এয়ারলাইনসগুলো। এ পরিস্থিতিতে তাদের ভরসা ছিল অভ্যন্তরীণ রুট।
গত ২১ এপ্রিলের পর থেকে দেশে গণপরিবহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও এর আওতামুক্ত রাখা হয়েছিল আকাশপথকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের জন্য স্থগিত অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলও, যদিও কেবল বিদেশগামী যাত্রী বহনের জন্য সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চলার কথা বলা হয়েছে।
এ সংকট যে সাত দিনেই শেষ হয়ে যাবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাড়তে পারে এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ।
এ কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ দেশি এভিয়েশন অপারেটরদের। প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে আবারও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে, তার হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা। এ পরিস্থিতিতে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়েও বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
দেশি এভিয়েশন অপারেটরদের সংগঠন এভিয়েশন অপারেটস অ্যাসোসিয়েশনের (এওএবি) মহাসচিব মফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে খুলে গেলে ঠিক আছে, কিন্তু যদি টানা লকডাউন চলতে থাকে, তাহলে আমার মনে হয় বেতন-ভাতা দেয়াটাই সমস্যা হয়ে যাবে।’
গত মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই ভুগতে হচ্ছে এভিয়েশন খাতকে। এর মধ্যে গত বছরের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ছিল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট। জুলাইয়ে সীমিত আকারে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হলে বেঁচে থাকার অক্সিজেন পায় দেশি এয়ারলাইনসগুলো।
গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেও শুরু করে তারা। এ অবস্থা চলছিল এ বছরের মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এপ্রিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শঙ্কা তৈরি করলে আবারও তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সে সময় আন্তজেলা পরিবহনগুলোর মতো বন্ধ করা হয় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচলও। অবশ্য ২১ এপ্রিল থেকে আবারও সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয় বেবিচক।
বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ ও বিপণন বিভাগের মহাপরিচালক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এয়ারলাইন কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কারোরই আসলে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই, ফ্লাইট চলবে কি না। এটা সরকার যেভাবে আমাদের পরিচালিত করবে আমরা সেভাবেই পরিচালিত হব। কারণ, এই সিদ্ধান্তগুলো আসলে দেশের সার্বিক সাধারণ জনগণের স্বার্থেই।’
তিনি বলেন, ‘গত দেড় বছর ধরে আমাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোও নিয়মিত অপারেট করার সুযোগ আমরা পাইনি। সেখানেও অনেক রকম বিধিনিষেধ রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আসলে একটা অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।
‘এর মধ্য চাকরিজীবী হিসেবে আমরা যেমন অনিশ্চয়তার মধ্য আছি, যারা যাত্রী তারাও অনিশ্চয়তায় আছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখাই আসলে কঠিন হবে। আমরা যদি না টিকি তাহলে আমাদের ওপর যারা নির্ভরশীল, যেমন পর্যটন, হোটেল কিংবা ট্রাভেল এজেন্সি – তারা কীভাবে টিকে থাকবে? গত দেড় বছরে অনেক ছোট ট্রাভেল এজেন্সি কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চললে সামনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’